ডেস্ক,১৮ মার্চ ২০২৩ : এবছর ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় গুচ্ছ পদ্ধতিতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষকরা। তাদের এ সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যও একমত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ইবি শিক্ষক সমিতি।
শুক্রবার (১৭ মার্চ) ইবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ বিষয়ে শীঘ্রই একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিংয়ে নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
আরো পড়ুন: ঢাবি অধিভুক্ত প্রযুক্তি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ১৬ জুন
তিনি বলেন, আমরা ভার্চুয়ালি মিটিং করে নিজস্ব পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামী ২১ মার্চ একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং হতে পারে। সেখানে ভর্তি প্রক্রিয়াসহ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড.জাহাঙ্গীর হোসেন জানিয়েছেন, একজন শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি হবে এটা কখনো চাই না। গুচ্ছের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীরা ভর্তি হচ্ছে কিনা সেটার বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এখনও পর্যন্ত আামাদের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছি। উপচার্য স্যারও শিক্ষকদের পক্ষে আছেন বলে জানিয়েছেন।
এর আগে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে ইবি শিক্ষকরা তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন।
সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. তপন কুমার জোদ্দার বলেছেন, সমিতির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে দেশের ২১ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সমন্বিত ভর্তি প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে ইবি। পরবর্তীতে দেখা যায় সমন্বিত ভর্তি প্রক্রিয়ার সমন্বয়হীনতা, দীর্ঘসূত্রিতা শিক্ষার্থীদের ভর্তি প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তুলেছে। ফলে ইবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা করে ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে আবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থী ভর্তির পক্ষে মতামত প্রদান করেন।
তিনি বলেন, পরবর্তীতে ইবি প্রশাসনের সমন্বিত ভর্তি প্রক্রিয়ার জটিলতাসমূহ নিরসনের আশ্বাসে ইবি শিক্ষক সমিতি শর্ত সাপেক্ষে ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়টা মেনে নেন। কিন্তু ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে সমন্বিত ভর্তি প্রক্রিয়ার জটিলতা, ভোগান্তি ও দীর্ঘসূত্রিতা আরও বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে উচ্চ গুচ্ছে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আর ইবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, শিক্ষকরাই তো ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করবে। তাদের উপেক্ষা করে আমার একার সিদ্ধান্তে তো কোন কাজ হবে না। তাদের সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছি।
এর আগে গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা জানায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (জবি)। গেল বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় আলাদা ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায়।
সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: ইমদাদুল হক জানান, একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যরা সভায় তাদের বক্তব্য দিয়েছেন। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় আলোচনা করে গুচ্ছে থাকা না থাকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বুধবারের একাডেমিক কাউন্সিলের বিশেষ সভায় ৬৮ জন সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ৫০ জনসদস্য। উপস্থিত সদস্যেদের মধ্যে গুচ্ছের বিপক্ষে ৩৫ জন, ২ জন পক্ষে এবং বাকি ১৩ জন সদস্য গুচ্ছে থাকা না থাকার বিষয়ে কোন মতামত প্রদান করেন নি। সভায় জবি ভিসি অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হকও উপস্থিত ছিলেন।
একাডেমিক কাউন্সিলের একাধিক সদস্য তখন জানিয়েছেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গুচ্ছ থেকে বের হয়ে এসে নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিতে দাবি জানিয়ে আসছিলেন। উপাচার্য বরাবর লিখিত দাবিও জানিয়েছিলেন তারা।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম জানান, একাডেমিক কাউন্সিলে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে আমরা গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যাব। তবে ভিসি মহোদয় বলেছেন আজকে আমাদের মতামত সিন্ডিকেটে উপস্থাপন করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে৷ খুব দ্রুত সিন্ডিকেট মিটিং আয়োজন করা হবে।
প্রসঙ্গত, দেশে বর্তমানে ৫৩টি সরকারি এবং ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। সবগুলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাবি, রাবি, চবি ও জাবি এবং কয়েকটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় বাদে অধিকাংশই গুচ্ছ ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। যাতে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একজন শিক্ষার্থী একটি পরীক্ষা দিয়েই ভর্তি হতে পারেন। আর ১৯৭৩ সালের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির সুযোগ থাকে আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে। শুরুতে ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তে আসে এবং পরবর্তীতে ২২টি বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ গুচ্ছে অংশ নেয়।