ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রেখে দ্বিতীয় দিনের মত আন্দোলন চলমান রেখেছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) শাখা ছাত্রলীগ। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, আজ রবিবার (১৮ জুন) সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে দুর্নীতি বিরোধী স্লোগান, গান, কবিতা ও প্ল্যাকার্ডে লেখনি নিয়ে প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থীকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়।
এসময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের জন্য সুপেয় পানি ও দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করে যবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগ। তবে এদিনও উপাচার্যের কার্যালয়ের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার অভিযোগ এসেছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের সকল ফটক বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক আন্দোলনে অবস্থান করানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা বলেন, স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনে কোন লিফটের ব্যবস্থা নেই তবুও ক্লাস পরীক্ষা চলমান রয়েছে। শনিবার একজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছিল, আমি তার কিছু সহপাঠীদের নিয়ে উপাচার্য স্যারের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি আমার কোন কথা শোনেন নি বরং আমাকে তাড়িয়ে দেন। কিছুদিন আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমিক ভবনে রাত ৩টায় আগুন লেগেছিল, আমাদের এক সাংবদিক ছোট ভাই সেটি নেভায়।
“আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ফায়ারফাইটিং এবং ডিটেকশন সিস্টেমের সকল উপকরণ চলে এসেছে কিন্তু তা লাগানো হচ্ছে না কেন জানি না, এর পিছনে কি কাহিনী আছে তাও আমরা জানি না এবং জানতেও চাইনা। লিফট এবং ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম না লাগানো পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা অংশগ্রহণ করবে না বলে দাবি করেন তিনি। এছাড়া আমাদের আরো কিছু দাবি আছে সেমিস্টার ফি কমানো, রিটেক ফি কমানো, যে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী দুদুকে অভিযুক্ত তাদেরকে অফিস থেকে অব্যাহতি দেওয়া, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতিকারীদের অব্যাহতি দেওয়া।”
শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর ফয়সাল বলেন, আমরা দেখেছি ইতোপূর্বে যেসকল ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অভিযোগ উঠেছে সেসকল দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও সেই তদন্ত প্রতিবেদন আজও আলোর মুখ দেখেনি। এ আন্দোলনের অন্যতম আরেকটি দাবী হলো স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনে লিফট স্থাপন করা কিন্তু সেখানে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিনের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে ভবনের ৮ম ও ৯ম তলায় গিয়ে ক্লাস করতে হয় শিক্ষার্থীদের। যার ফলে অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে।
তবে সম্প্রতি মার্কেটিং বিভাগের একটা নোটিশে দেখা গেছে যেসকল শিক্ষার্থী ৮ম তলায় উঠে ক্লাস করতে পারবেন না তাদের জন্য অনলাইনে অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লেন্ডেড লার্নিং সিস্টেমে ক্লাস কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। জানা গেছে এ নোটিশ দেওয়ার ১২ দিনেও অনলাইনে ক্লাসের জন্য কেউ আবেদন করেনি। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় অনুষদের ডিন ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, ৮ম, ৯ম এবং ১০ম তলার বিভাগগুলোকে ব্লেন্ডেড লার্নিং সিস্টেমে (অনলাইন + অফলাইন) ক্লাস নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। লিফট না থাকায় কেউ ক্লাসে যেতে না পারলে তারা অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হতে পারবেন। ঈদ পরবর্তী সময়ে লিফট চালু না হওয়া সাপেক্ষে এই ব্লেন্ডেড লানিং সিস্টেম চালু থাকবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
আন্দোলন নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে রসায়ন বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী রাশেদ খান বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ছাত্রলীগ যে আন্দোলন করছে তার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির রিটে সকল আসামীকে অনতিবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অব্যাহতি এবং ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাদের নিয়ে ফেসবুকে ও সরাসরি কটুক্তিকারীকে অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের যে দাবি তারা উপাচার্য বরাবর দিয়েছে তা আমার কাছে সম্পুর্ন অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে। কারণ এই দাবি দুটি একান্তই ছাত্রলীগের নিজস্ব স্বার্থে দেয়া হয়েছে। তবে এ দুটি দাবি ব্যতীত অন্যান্য দাবিগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য যৌক্তিক হওয়ায় দাবিগুলোর সাথে একাত্বতা ঘোষণা করছি এবং দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলমান থাকবে।’
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, যে সকল যৌক্তিক দাবি করেছে তার অনেকটাই আমরা মেনে নিয়েছি। যেমন কিউআর কোড সম্বলিত পরীক্ষার খাতা ও পরীক্ষায় ইম্প্রুভমেন্ট সিস্টেম চালু করার বিষয়ে আমরা পূর্বেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
অন্যান্য দাবিসমূহের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ খতিয়ে দেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি আমাকে দ্বিতীয় মেয়াদে যবিপ্রবিতে উপাচার্য হিসাবে নিযুক্ত করেছেন এবং গবেষণা ও কাজের সম্মাননা স্বরূপ একুশে পদকেও ভূষিত করেন। এরপরও যদি তারা আমাকে অসম্মান করে তবে তা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সরকারকেই অবমাননা করার শামিল। অতি দ্রুত লিফটগুলো কার্যকর করার পদক্ষেপ নিচ্ছি। দুদকের তদন্ত কমিটি গঠন করা সাপেক্ষে আমরা কাউকে বহিষ্কার করতে পারি না তবে অপরাধ প্রমানিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নিতে পারবো। ফায়ার সিকিউরিটির কাজ জুনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবার কথা কিন্তু। শাখা ছাত্রলীগ আমাকে এ কাজের বিষয়ে একাধিকবার বাধাগ্রস্থ করেছে। আগামী দু-মাসের মধ্যে এ কাজ শেষ হয়ে যাবে।
সেমিস্টার ফিস ও রিটেকের ফি নিয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সাথে আলোচনা করতে হবে এ ক্ষেত্রে আমাদেরকে ইউজিসি’কে আয়-ব্যয়ের হিসাব দেখাতে হবে।