চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে সহকারি শিক্ষক পদে নিয়োগের সুপারিশ পেয়েছেন জগন্নাথ শীল। প্রাথমিক সুপারিশের প্রায় ৬ মাস হতে চললেও চূড়ান্ত নিয়োগ হয়নি। এই অবস্থায় চরম হাতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি।
জগন্নাথ শীল বলেন, ৬ মাস আগে আমাদের প্রাথমিক সুপারিশ করা হয়েছে। তখন থেকেই পরিবারের সদস্যরা জানেন আমার চাকরি হয়েছে। তবে চূড়ান্ত সুপারিশ না হওয়ায় চাকরিতে যোগদান করতে পারিনি। বিষয়টি নিয়ে মানসিক যন্ত্রণায় রয়েছি। পরিবারের সদস্যদেরও বিষয়টি বোঝাতে পারছি না।
আরো পড়ুন: ১৭তম নিবন্ধনের মৌখিক পরীক্ষা শুরু সেপ্টেম্বরে
শুধু জগন্নাথ নয়; চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগ সুপারিশ পাওয়া প্রায় ২৮ হাজার শিক্ষকের ভাগ্য এখন ঝুলে আছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হাতে। পুলিশ ভেরিফিকেশন চলমান রেখে যোগদানের অনুমতি না মেলায় এসব প্রার্থীদের চূড়ান্ত সুপারিশপত্র দিতে পারছে না বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনটিআরসিএর সদস্য (অতিরিক্ত দায়িত্ব, শিক্ষাতত্ত্ব ও শিক্ষামান) এস এম মাসুদুর রহমান শিক্ষা বার্তাকে বলেন, পুলিশ ভেরিফিকেশন চলমান রেখে প্রার্থীদের চূড়ান্ত সুপারিশ করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেলে এক সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত সুপারিশ করা হবে।
জানা গেছে, চলতি বছরের মার্চে এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩২ হাজার ৪৩৮ জনকে নিয়োগের প্রাথমিক সুপারিশ করা হয়। এর প্রায় দেড় মাস পর গত ২৭ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত প্রার্থীদের চূড়ান্ত সুপারিশের জন্য অনলাইনে ভি-রোল ফরম পূরণের নির্দেশ দেয় এনটিআরসিএ।
প্রার্থীদের সঠিকভাবে ভি-রোল ফরম পূরণের জন্য কয়েক দফা মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। ভি-রোল ফরম পূরণ শেষে চূড়ান্ত সুপারিশের অনুমতি চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায় এনটিআরসিএ। তবে এখনো চুড়ান্ত অনুমোদন দেয়নি মন্ত্রণালয়।
এনটিআরসিএ’র একটি সূত্র জানিয়েছে, ২৭ হজার ৭৫৪ জন শিক্ষককে পুলিশ ভেরিফিকেশন চলমান রেখে নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করতে গত ১৭ আগস্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনটিআরসিএর এক কর্মকর্তা জানান, আমরা প্রতিনিয়ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চূড়ান্ত সুপারিশের অনুমতির জন্য অনুরোধ করছি। তবে নানা কারণ দেখিয়ে তারা অনুমোদন দিচ্ছে না। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না মেলায় ২৮ হাজার শিক্ষক নিয়োগের কার্যক্রম স্থবির হয়ে রয়েছে।
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক) মো. রবিউল ইসলাম বলেন, এনটিআরসিএর চিঠি আমরা পেয়েছি। চূড়ান্ত সুপারিশের অনুমতি দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
এদিকে প্রাথমিক সুপারিশের প্রায় ৬ মাস হতে চললেও এখনো চূড়ান্ত সুপারিশ না হওয়ায় আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রত্যাশী শিক্ষক ফোরাম। আগামী ৪ সেপ্টেম্বর এনটিআরসিএর কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি পালিত হবে।
এ প্রসঙ্গে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রত্যাশী ফোরামের সহ সভাপতি মো. ইমরান খান বলেন, আমাদের দীর্ঘদিন অপেক্ষায় রাখা হয়েছে। প্রাথমিক সুপারিশের ৬ মাস হতে চললেও এখনো চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়নি। ফলে আমরা যে চাকরি পেয়েছি এটাই অনেকে বিশ্বাস করতে চাচ্ছে না। দ্রুত সুপারিশের দাবিতে আমরা ৪ তারিখে মানববন্ধন করব।
তিনি আরও বলেন, চাকরি পাওয়ার পরও দীর্ঘদিন অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছে কিন্তুু আমাদের যোগাদান দিচ্ছে না। ফলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খুব কষ্টে সময় পার করতে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের নিকট আমাদের একটাই চাওয়া, দ্রুত চূড়ান্ত সুপারিশ দিয়ে দিক। যেন আমরা নিজেদের কর্মক্ষেত্রে যেতে পারি।