ঘরেই যেভাবে করোনা রোগীদের চিকিৎসা করবেন!

করোনা২-শিক্ষা

যেভাবে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে ঘরে থাকা রোগীদের

ঢাকার একজন চিকিৎসক গত সোমবার জানতে পারেন তার করোনাভাইরাস হয়েছে। এরপর তিনি প্রায় পাঁচদিন ধরে ঘরে কোয়ারেন্টিনে থেকেই কোভিড-১৯ এর চিকিৎসা নিচ্ছেন।

শুক্রবার করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়ার পর রোববার তার নমুনা পরীক্ষা করা হয় এবং উপসর্গ মৃদু হওয়ায় চিকিৎসকদের সাথে পরামর্শের ভিত্তিতে তিনি ঘরে চিকিৎসা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

তিনি বলেন, ‘কোয়ারেন্টিনের শুরু থেকে আমি আলাদা একটি রুমে আছি, যেই রুমের সাথে বাথরুম আছে। আমার খাবার রুমের বাইরে রেখে যাওয়া হয় এবং আমি এখন পর্যন্ত ঐ ঘর থেকে বের হইনি।’

শুরুতে জ্বর, কাশি, শরীরে ব্যথা হওয়ার মত কিছু উপসর্গ দেখা গিয়েছিল তার। তবে কয়েকদিন ঘরে চিকিৎসা নেয়ার পর তার উপসর্গ ধীরে ধীরে স্বাভাবিক মাত্রায় নেমে এসেছে বলে জানান তিনি।

চিকিৎসকদের সাথে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। চিকিৎসকরা তাকে নির্দিষ্ট কয়েকটি ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত উপদেশ দিয়েছেন বলে জানান ওই নারী। তাকে পানীয় জাতীয় খাবার নিয়মিত খাওয়া, প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি – যেমন লেবু, কমলালেবু ইত্যাদি ফল খাওয়া এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার উপদেশ দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘পানি, স্যালাইনের মত তরল খাবার খাওয়ার পেছনে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়া নিয়মিত গরম খাবার বা গরম পানীয় খাচ্ছি। পাশাপাশি নাকেমুখে পানির বাষ্প নেয়াও অব্যাহত রেখেছি।’

তিনি জানান, নিয়মিত চিকিৎসকদের সাথে যোগাযোগের সময় তার উন্নতি ও উপসর্গের মাত্রা যাচাই করে চিকিৎসকরা তার পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে মন্তব্য জানান।

চিকিৎসকরা কীভাবে ঘরে থাকা রোগীদের সেবা দিচ্ছেন?

ঘরে কোয়ারেন্টিন অবস্থায় থাকার ক্ষেত্রে এই নারী বা তার পরিবারের সদস্যরা সামাজিকভাবে কোনওধরনের বিরূপ মনোভাবের শিকার না হলেও তার পরিচিত কয়েকজন আক্রান্ত রোগী নানা ধরণের জটিলতার মধ্যে পড়েছেন বলে জানান।

আর বাংলাদেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত অনেকেই এই ধরনের সমস্যার মধ্যে পড়ছেন বলে মন্তব্য করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টার্নাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাজমুল হাসান। তিনি বাড়িতে চিকিৎসাধীন করোনাভাইরাস রোগীদের খোঁজখবর রাখছেন।

পরিবার বা বাড়িতেকোয়ারেন্টিন করার পরিস্থিতি না থাকা, হল বা মেসে থাকায় সেবাযত্ন করার মানুষ না থাকায় এবং অনেকসময় পাড়া প্রতিবেশী বা বাড়িওয়ালার আপত্তিতেও মানুষের ঘরে বসে চিকিৎসার কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন নাজমুল হাসান।

তিনি বলেন, ‘অনেকেই রয়েছেন যাদের অল্প উপসর্গ রয়েছে ও বাসায় চিকিৎসা করা সম্ভব, কিন্তু নানা সমস্যার কারণে তাদের ঘরে চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছে না – এই ধরনের রোগীদের ক্ষেত্রে বেশ সমস্যা হচ্ছে আমাদের।’

তবে বাংলাদেশের অধিকাংশ কোভিড-১৯ রোগীকে এখন ঘরে রেখে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হলেও যাদের ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা কিডনির সমস্যা রয়েছে, তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলে জানান নাজমুল হাসান।

ডাক্তার হাসান জানান, ঘরে যারা চিকিৎসা নেন, তাদের ক্ষেত্রে মূলত কয়েকটি বিষয়ে নিয়মিত খোঁজখবর রাখা হয়। কাশি অনেক বেড়ে যাচ্ছে কিনা, শ্বাসকষ্ট হঠাৎ বেড়ে যাচ্ছে কিনা, জ্বরের তীব্রতা বেড়ে অজ্ঞান ভাব হচ্ছে কিনা এবং শারীরিক অস্বস্তি চরম পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে কিনা।

ঘরে থাকা রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা এ বিষয়গুলোর নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন। অবস্থা খারাপ হলে তারা সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।