কুবির ৯ কর্মচারীর শাস্তি

কুবির দ্বিতীয় মেধাতালিকা

কুবি প্রতিনিধি: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী পরিষদের ৯ জন সদস্যকে ২৩ জানুয়ারি বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দিয়েছে পরিষদের সভাপতি দিপক চন্দ্র মজুমদার ও সাধারণ সম্পাদক মো. মহসিন। তবে কেন দেওয়া হয়েছে, কিভাবে দেওয়া হয়েছে, কারা অভিযোগের তদন্ত কমিটির সদস্য এসব সম্পর্কে কিছুই জানেন না শাস্তি পাওয়া কর্মচারীরা।

এদিকে কর্মচারী পরিষদের এমন সিদ্ধান্তকে অবান্তর ও গঠনতন্ত্র বিরোধী বলছেন অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর নেতৃবৃন্দ।

আরো পড়ুন: মেডিকেল ভর্তিতে নতুন নিয়ম, ৪০ পেলে ভর্তির সুযোগ থাকছে না

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের দায়িত্ব পালনকালে কর্মকর্তাদের থেকে রেজিস্ট্রার প্রদানের দাবিতে আন্দোলন করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে বিরোধিতা করেন শাস্তি পাওয়া ওই ৯ কর্মচারীসহ অন্যান্যরা। এর সূত্র ধরেই তাদের শাস্তির পদক্ষেপ নেয় বিপরীত অপর অংশ। তবে পরিষদের ১৩ সদস্যের ৭জনই তদন্ত কমিটি সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারেননি। বিষয়টি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ভালো জানেন বলে এড়িয়ে যান তারা।

এদিকে সদস্যপদ বাতিলে গঠনতন্ত্রে বলা হয়, গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কাজ, পরপর ৩ মাস মাসিক চাঁদা পরিশোধ না করা হলে, চাকরি থেকে পদত্যাগ করলে, অবসর গ্রহণ করলে, বহিস্কৃত হলে, মৃত্যুবরণ করলে, মানসিক বিকৃতি ঘটলে কিংবা পরিষদের অর্থ ও সম্পত্তি তছরূপ কজরা প্রমাণিত হলে, তার সদস্যপদ বাতিলের কথা বলা হয়। তবে তাদের শাস্তির বিষয়ে এসবের কোনোটিই উল্লেখ করেননি পরিষদ। এদিকে পরিষদের মেয়াদ ২৪ তারিখে শেষ হলেও ২৫ তারিখে শাস্তির চিঠি দেওয়া হয়েছে। যেখানে সিদ্ধান্তের তারিখ দেখানো হয়েছে ২৩ জানুয়ারি।

সদস্যপদ বাতিল হওয়া কামরুল হাছান বলেন, আমি এ বছর সভাপতি পদে নির্বাচন করব। এ বিষয়টি সবাই জানে। মূলত আমাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে মনগড়া শাস্তি দেওয়া হয়েছে। আমি এ সিদ্ধান্ত মানি না। তদন্ত্র কমিটি আমাদের কোনো ধরণের মতামত নেয়নি। আমাদের প্রতি অন্যায় করা হয়েছে। আমরা প্রয়োজনে হাইকোর্ট পর্যন্ত যেতে চাই।

কর্মচারীদের বিরুদ্ধে পরিষদ এমন কোনো তদন্ত্র কমিটি গঠন করতে পারে না জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমিতির সভাপতি সরোয়ার মোর্শেদ। তিনি বলেন, একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ এমন পদক্ষেপ নিতে পারেন। এভাবে কোনো সদস্যকে তারা বহিষ্কারও করতে পারেন না। এটি নিয়মবহির্ভূত এবং গঠনতন্ত্র বিরোধী।

আন্ত:বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বস্তর প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গ ব্যাতীত সমিতি থেকে এমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন না। এটি বিধি বহির্ভূত। একই কথা বলছেন কর্মকর্তা-কর্মচারী ফেডারেশন ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী পরিষদের নেতৃবৃন্দ।

এদিকে কবে তদন্ত্র কমিটি গঠন ও কোন সভায় গঠন করা হয়েছে সে বিষয়ে কথা বলতে চাইলে একাধিকবার কল দিয়েও পাওয়া যায়নি সভাপতি দিপক চন্দ্র মজুমদারকে।

কোনো তথ্য দিতে পারেননি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. মহসিন। তিনি বলেন, আমরা যা করেছি গঠনতন্ত্র মেনে করেছি। গঠনতন্ত্রের কোন ধারায় বহিষ্কার করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি।

অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সুযোগ সুবিধা আর আমাদের সুযোগ সুবিধা এক নয়। কাজেই তারা কি করবে কিংবা করবে না সেটি আমরা জানতে চাই না।

এদিকে তদন্ত কমিটির এক সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী মো. হানিফকে। সে বিষয়ে তিনি বলেন, অধ্যাপকের বিরুদ্ধে গঠিত কোনো তদন্ত কমিটিতে যদি প্রভাষক থাকতে পারেন তাহলে এখানেও পারে।

এদিকে কিভাবে তদন্ত হয়েছে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির আহবায়ক মোহাম্মদ জাকির হোসেন চৌধুরী প্রতিবেদকের সাথে উচ্চবাচ্য করেন এবং সাংবাদিকদের তথ্য দিতে বাধ্য নয় বলে জানান।

কমিটির সদস্য সচিব আলমগীর বলেন, কার্যকরী পরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়ে যদি আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে। এতে আইনের কোনো বাধা নেই। কার্যকরী পরিষদের ৭ সদস্য তদন্ত্র কমিটির বিষয়ে জানেন না, এটার কোনো প্রমাণ নেই। যারা বলেছে তদন্ত কমিটির বিষয়ে তারা জানে না আপনি তাদের সঙ্গে আবার কথা বলেন। পরে কথা বলতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে তিনি ফোন কেটে দেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. আমিরুল হক চৌধুরী বলেন, বিষয়টি কর্মচারীদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কাজে গাফলতির কারণে শাস্তি দেওয়া হয়নি। তারা তাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কাজ করেছে।

তবে গঠনতন্ত্রে এমন কিছু নেই তবুও কেন শাস্তি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ছুটিতে আছি। সুতরাং বিষয়টি নিয়ে এই মুহুর্তে বেশি কিছু বলতে চাই না।

এদিকে কোনো মন্তব্য করতে চাননি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির।

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।