কক্সবাজার প্রতিনিধি: সময় বিভ্রাটের কারণে বিপুল মেধাবী শিক্ষার্থী সরকারি কলেজে ভর্তি সুযোগ পাচ্ছে না। এসএসসি পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করেও জেলার দুইটি সরকারি কলেজে ভর্তি হতে না পারায় অনেকের শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অনলাইনে প্রকাশিত ভর্তি ফলাফলে যোগ্য বিবেচিত হওয়ায়দের জন্য ভর্তির নির্ধারিত সময় বেধে দেওয়া হলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ তা না মানায় এমনটি হয়েছে বলে জানালেন শিক্ষার্থীরা।
এতে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর সরকারি কলেজে পড়ার আশা ভঙ্গ হতে চলেছে।প্রকাশিত ভর্তি ফলাফলে মেধাভিত্তিক তালিকায় স্থান পেয়েও কলেজে ভর্তি হতে পারছেন না বিপুল শিক্ষার্থী। অনলাইনে প্রকাশিত ফলাফলে নির্ধারিত সময়ে ভর্তি না হলে তালিকা থেকে ছিড়কে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি হতে না পেরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন। অপেক্ষামানদের মধ্যে যারা উন্নিত হন তাদের দুই দিনের মধ্যে ভর্তি হওয়ার নির্দেশনা থাকলেও কলেজ কতৃপক্ষ সময় দিচ্ছেন মাত্র ৬ ঘন্টা। যার ফলে ঘোষিত সময় অনুযায়ী ভর্তি হতে এসে আশাহত হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজে মেধাতালিকায় আসা ছাত্রী উম্মে হয়াত জানান, গত ২২ জুন তারিখ পর্যন্ত মেধা তালিকায় উন্নিতদের ভর্তির সময় বেধে দেওয়া হলেও ২১ তারিখ বেলা ১১টায় ভর্তি কার্যক্রম শেষ করে দেয় কলেজ কর্তপক্ষ। ২১ জুন বেলা ২টায় ভর্তি হতে এসে আর ভর্তি হতে পারিনি। যার ফলে কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজে লেখা পড়া করার যে উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে ছিলাম তা আর হচ্ছে না। এখন বেসরকারি কোন কলেজে ভর্তি হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।আরো একজন ছাত্রী কুলসুমা আকতার জানান, এসএসসিতে এ প্লাস পেয়েও সরকারি কলেজে পড়ার সুযোগ পাচ্ছিনা। কলেজ কতৃপক্ষের সময় বিভ্রাটের কারণে আমার শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আমার বাবা আমাকে বেসরকারি কলেজে ভর্তি করাতে রাজি নয়। কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়ে এমনটি করলে আমি ভর্তি হতে পারতাম। আমরা কোন অপরাধ করিনি, ঘোষিত সময় অনুযায়ী ভর্তি হতে কলেজ ক্যাম্পাসে এসে ভর্তি হতে না পারায় আমার পরিবারের সবাই ভেঙ্গে পড়েছে। বেসরকারি কোন কলেজে ভর্তি হলে আর সরকারি কলেজে পড়া হবে না। কক্সবাজার সরকারি কলেজে সরেজমিনে দেখা যায় অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী ভর্তি হতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন। তারা সকলেই নির্ধারিত সময়ে কলেজে এসেছেন।
প্রথম অপেক্ষমান তালিকায় যারা এসেছে তাদের ভর্তির জন্য ২৫,২৬ ও ২৭ জুন নির্ধারিত তারিখ হলেও ২৫ জুন কাউকে ভর্তি করানো হয়নি। ২৬ জুন, ১২ পর্যন্ত ভর্তি কার্যক্রম চালিয়ে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই ৩ ঘন্টায় যারা ভর্তি হয়নি তারা সকলেই তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। অনেকেই বেলা ১/২ টার দিকে এসে ভর্তি হতে পারেনি। ভর্তি হতে না পারা মোঃ বেলাল উদ্দিন জানান, ভর্তি কার্যক্রম বন্ধের কোন ঘোষণাই দেওয়া হয়নি। আমি প্রথম অপেক্ষামান তালিকায় শীর্ষে ছিলাম। অনলাইনে যে তারিখ দেওয়া হয়েছে এর আগেই ভর্তি হতে এসেছিলাম। সময় বিভ্রাটের কারণে আর সরকারি কলেজে পড়া হচ্ছে না।মেয়ে ভর্তি করাতে আসা পিএমখালীর শামসুন নাহার জানান, সরকার যে নিয়ম করেছে তা সুন্দর। তবে সময় বিভ্রাটের কারণে আমার মেয়েকে ভর্তি না করেই নিয়ে যাচ্ছি। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন ভর্তির সময় আর নেই। নির্ধারিত সময়ের একদিন আগে এসেও ভর্তি হতে না পারা দুঃখজনক। আমার মেয়ের চেয়ে যারা অনেক পিছিয়ে তাদের অনেকেই ভর্তি হয়ে গেছেন।একজন বেসরকারি কলেজের প্রভাষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিপুল সংখ্যক আসন খালী থাকা সত্তেও যেভাবে নির্ধারিত সময়ের আগে ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে এতে অসংখ্য মেধাবী শিক্ষার্থী ছিটকে পড়তে পারে।
অপেক্ষামান তালিকা থেকে দ্রুত ভর্তি করার কারণে ওই মেধাবীরা আর সরকারি কলেজে ভর্তি হতে পারবে না। সরকার যে পদ্ধতিতে ভর্তি নিয়ম চালু করেছেন তা যথাযত। এতে নেই কোন রাজনৈতিক প্রভাব। জোরপূর্বক ভর্তি করার কোন সুযোগ নেই। অনিয়ম বলতে কিছুই নেই। শুধুমাত্র সময় বিভ্রাট অনেক মেধাবীকে বিপদে ফেলেছে। শিক্ষা জীবন অনেকের অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ফজলুল করিম জানান, তিন বিভাগে ৮৭০ আসনের মধ্যে তেমন কোন আসন খালী নেই।মানবিক বিভাগে কিছু আসন খালী আছে। সময় বিভ্রাটের বিষয়ে তিনি বলেন, সবকিছু ঘোষিত নিয়মে হয় না। কলেজের নির্ধারিত কিছু নিয়ম আছে। সুষ্ট ও সুন্দরভাবে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন হচ্ছে।