বিশ্বজুড়ে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বাড়ছে। এইডিস মশাবাহিত এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ২০২২ সাল পর্যন্ত ২২ বছরে আটগুণ বেড়ে ৪২ লাখে উন্নীত হয়েছে। কিন্তু চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা সব রেকর্ড ভাঙতে যাচ্ছে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
জাতিসংঘের সংস্থাটি বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে উপযোগী পরিবেশ পেয়ে মশার প্রজনন বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে এবছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
গত জানুয়ারিতে ডব্লিউএইচও সতর্ক করে বলেছিল, ডেঙ্গু সবচেয়ে দ্রতগতিতে ছড়িয়ে পড়া সংক্রামকে রূপ নিচ্ছে এবং এই জ্বর এবার মহামারীতে রূপ নিতে পারে। সেই পর্যায় এখনো না এলেও আশঙ্কা বাড়ছে।
আরো পড়ুন: ডেঙ্গু ভ্যাকসিনে আশার আলো!
সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে ডব্লিউএইচওর গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগ বিভাগের বিশেষজ্ঞ ড. রমন ভেলাউধন বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে বাড়ছে ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের সংখ্যা। এই মুহূর্তে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। বৃষ্টিবহুল ও উষ্ণ অঞ্চলগুলোতে অকল্পনীয় দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে ভাইরাসজনিত এই রোগ।’
তিনি আরো বলেন, ‘রোগটির বিস্তার রোধ করা না গেলে চলতি বছরই রেকর্ড সংখ্যক মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হবেন। অদূর ভবিষ্যতে ডেঙ্গুকে মহামারী ঘোষণা করতে হতে পারে।’
কোনো রোগ এক দেশ থেকে অন্য দেশে ছড়ানোর আশংকা থাকলে বা এর জন্য ব্যবসা বাণিজ্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখন মহামারী ঘোষণার বিবেচনায় আসে। সাধারণত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মহামারী ঘোষণা করে। রোগের সংক্রমণ কতটা ছড়িয়েছে এবং সেই রোগে কত মানুষ আক্রান্ত বা মৃত্যু ঘটেছে কতজনের- এসব বিবেচনায় মহামারী ঘোষণা করা হয়।
ডেঙ্গু সংক্রমণের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে অল্প কিছুদিনের মধ্যে নতুন ৪০ লাখ মানুষের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে ড. রমন জানান।
তিনি বলেন, ‘এশিয়ার দেশগুলো হয়তো এই রোগের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। কিন্তু মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর জন্য তা বড় চ্যালেঞ্জ।’
ডব্লিউএইচও বলছে, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পর অধিকাংশ রোগীর মধ্যে জ্বর, মাংসপেশিতে ব্যথার উপসর্গ প্রকাশ পেয়েছেন। অনেকের দেহে কোনো উপসর্গ না থাকলেও প্লাটিলেট কাউন্ট আশঙ্কাজনক পর্যায়ে নেমে গেছে। আক্রান্তদের মধ্যে অন্তত ১ শতাংশ মারা গেছেন।
এইডিস নামের যে জাতের মশা এই রোগের প্রধান বাহক হিসেবে কাজ করে, নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় এই মশার বংশবৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে উপযোগী।
ডা. রমন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ঘুমানোর সময়ে মশারির ব্যবহার ও বাসাবাড়ি, অফিস আদালতে পানি জমতে না দিলে হয়তো খানিকটা সুরক্ষা মিলবে। কিন্তু এইডিস মশা ও তার প্রজননক্ষেত্র সম্পূর্ণ ধ্বংস করা ছাড়া রোগটি ঠেকানোর কার্যকর কোনো পন্থা নেই।’
ডব্লিউএইচওর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ১২৯টি দেশের ৫২ লাখ মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। এর মধ্যে প্রায় ৩০ লাখ মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশের। বলিভিয়া, প্যারাগুয়ে ও পেরুতে ডেঙ্গু আক্রান্তদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।