ডেস্ক: সরকারি চাকরিজীবীদের প্রস্তাবিত নতুন পে স্কেল অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে উঠছে শিগগিরই। পে স্কেল পর্যালোচনায় গঠিত সচিব কমিটির সুপারিশ চূড়ান্ত করা হবে বৈঠকে। এ বৈঠকে তা অনুমোদন হলে এর পর প্রজ্ঞাপন জারি করে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু করবে অর্থ বিভাগ। এ জন্য এক থেকে দেড় মাস সময় লাগবে। তবে সময় যা-ই লাগুক না কেন, ১ জুলাই থেকেই নতুন পে স্কেল কার্যকর করা হয়েছে। আর যখন সরকারি চাকরিজীবীরা নতুন স্কেল অনুযায়ী বেতন পাবেন, তখন ‘এরিয়ার’ও পাবেন। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন শেষে সেপ্টেম্বর অথবা অক্টোবর মাসে ‘বর্ধিত’ বেতন পাবেন সরকারি চাকরিজীবীরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের বেতন স্কেল উন্নীত করার (আপগ্রেড) বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হচ্ছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ কমিটি গঠনের বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হবে। অনুমোদন পাওয়ার পর প্রস্তাবিত কমিটি সংশ্লিষ্ট দাবি যৌক্তিকপূর্ণ কি-না, সে বিষয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরবে। তবে এ বিষয়েও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রিসভা। সচিব কমিটি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাস উদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত পে কমিশন টাইম স্কেল-সিলেকশন গ্রেড বাদ দিয়ে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য প্রস্তাবিত পে স্কেল বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে। কিন্তু এ প্রস্তাব গ্রহণ করেননি সরকারি কর্মচারীরা। তাদের যুক্তি হচ্ছে, টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দিয়ে নতুন পে স্কেল কার্যকর করলে ‘আর্থিক সুবিধা’ থেকে বঞ্চিত হবেন কর্মচারীরা। প্রস্তাবিত পে স্কেলে এই সুবিধা বহাল রাখার দাবি জানিয়ে আসছেন তারা। এই ইস্যুতে আন্দোলনও করছেন সরকারি কর্মচারীরা। অন্যদিকে, সচিবদের মতো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের গ্রেড-১ পদে উন্নীত করে মূল বেতন নির্ধারণের দাবি উঠছে।
সূত্র জানায়, সরকারি চাকরিজীবীরা যাতে নতুন পে স্কেল অনুযায়ী যথাসম্ভব দ্রুত বেতন পেতে পারেন, সে বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপনের জন্য নতুন পে স্কেলের বিষয়ে সারসংক্ষেপ তৈরি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আগামী সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদনের জন্য নতুন পে স্কেল ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। সোমবার না হলে পরবর্তী বৈঠকে অনুমোদন পাবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা শিক্ষাবার্তাকে বলেন, নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের আগে কিছু প্রক্রিয়া আছে। এখন তারই কাজ চলছে। আশা করা যাচ্ছে, শিগগিরই মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রস্তাবিত বেতন কাঠমো অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন পে স্কেল অনুযায়ী, সরকারি চাকরিজীবীদের প্রথম ধাপে শুধু ‘মূল বেতন’ দেওয়া হবে। দ্বিতীয় ধাপে আগামী অর্থবছরে মূল বেতনের সঙ্গে ভাতা দেওয়া হবে। সামরিক বাহিনীর ক্ষেত্রে একই প্রক্রিয়ায় পে স্কেল বাস্তবায়ন করা হবে। তবে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা নতুন পে স্কেল পাবেন ছয় মাস পর। সরকার আশা করছে, এরই মধ্যে নতুন এমপিও নীতিমালা চূড়ান্ত হবে। জানা গেছে, প্রস্তাবিত অষ্টম পে স্কেল পুরোপরি কার্যকর করতে সরকারের ‘অতিরিক্ত’ খরচ হবে মোট ২৯ হাজার কোটি টাকা।
জানা গেছে, টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড নিয়ে আন্দোলনরত সরকারি কর্মচারীরা আপাতত পিছিয়ে গেছেন। বিষয়টি নিয়ে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে সরকারি কর্মচারী সংগঠনের নেতারা সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। এদিকে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের গ্রেড-১ পদে বেতন নির্ধারণে রাজি নন অর্থমন্ত্রী। এখন বেশির ভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক প্রভাবে খুব কম সময়ে অধ্যাপক হয়ে যান। অন্যদিকে, কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ বছর চাকরি করার পর একজন কর্মকর্তা চাকরির শেষ সময়ে এসে সচিব হন। এমন বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে সচিব ও অধ্যাপকদের বেতন কাঠামো এক হওয়া যুক্তিযুক্ত নয় বলে মনে করেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তার পরও এসব বিষয় পর্যালোচনার জন্য অর্থ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।