প্রাথমিক শিক্ষায় সংগীত ও শারীরিক শিক্ষক পদে পাঁচ হাজার ১৬৬ শিক্ষক নিয়োগ দেবে সরকার। নিয়োগের বিষয়টি জনপ্রশাসন হয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের পর প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় বলছে, নিয়োগ বিধিতে এ সংক্রান্ত বিষয় যুক্ত করায় শীঘ্রই নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হবে। এ ছাড়াও সরকারি চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ নিয়োগের বিষয়টি নিষ্পত্তি নিয়েও জনপ্রশাসন এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, সারাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো ক্লাস্টারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসে। প্রতিটি ক্লাস্টারে একজন সংগীতবিষয়ক শিক্ষক ও একজন শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে।
আরো পড়ুন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার মতো পরিস্থিতি নেই: শিক্ষামন্ত্রী
তিনি জানান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর সম্প্রতি এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। খুব দ্রুতই আমরা নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করব।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শরীরচর্চা মানুষের জীবনের অন্যতম অনুষঙ্গ। আমাদের দেশে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাওয়ার পর পিটি করে অভ্যস্ত, যা তাদের মস্তিষ্ককে গতিশীল করে। পাঠ গ্রহণের জন্য এটি খুবই উপযুক্ত। অন্যদিকে, সংগীতচর্চা নিয়মানুবর্তিতা শেখায় এবং চিন্তাশক্তি ও মানসিকভাবে উদ্দীপ্ত করে। যার ফলে খুব অল্প সময়ে শিশুরা শিখতে ও আত্মস্থ করতে পারে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, শিক্ষা এখন বাণিজ্যিক ধারায় চলছে। আগে দেখা যেত, যেসব স্কুলে কো- কারিকুলাম অ্যাকটিভিটি বেশি ছিল, সেসব শিক্ষার্থীদের সামাজিক অংশগ্রহণও বেশি থাকে, যা ক্লাসরুম লার্নিংয়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
জানা যায়, বিদেশের স্কুলগুলোতে শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের শেখানোর রেওয়াজ আছে। কোরিয়াতে প্রতিটি স্কুলের শিক্ষার্থীদের পিয়ানো বাজানো শেখানো হয়। বাংলাদেশেও এমন একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে শিক্ষক না থাকার কারণে এই বাদ্যযন্ত্রগুলো নষ্ট হয়েছে। শিক্ষার্থীরাও কিছু শিখতে পারেনি অন্যদিকে, চীনে শিক্ষার্থীদের শরীরচর্চা পাঠ্যক্রমের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভিয়েতনাম, কমোডিয়াতেও এমন ব্যবস্থা রয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে যারা শিক্ষায় ভালো করছে, তারা শুধুমাত্র ক্লাসরুমের শিক্ষায় নির্ভরশীল নয়। তারা নানাভাবে শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে গড়ে তুলছে।
মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, সংগীত বিষয়ে দুই হাজার ৫৮৩ জন এবং শারীরিক শিক্ষাি বিষয়ের দুষ্ট হাজার ৫৮৩ জন শিক্ষ শিক্ষকের পদ সৃজন করা রয়েছে। এর আগে গত ২ মে প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটির ১১তম সভায় এসব প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।
তারও আগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের পাঁচ হাজার ১৬৬ নিয়োগে পদ সুজনের প্রস্তাবে সম্মতি দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। প্রশাসনিক উন্নয়ন কমিটির সভার পর অর্থ বিভাপের সম্মতি নিয়ে সচিব কমিটিতে এই প্রস্তাব পাঠানো হয়। সেখান থেকে অনুমোদনের পর শিক্ষক নিয়োগে আর কোনো বাধা নেই শিক্ষা শিক্ষকমন্ত্রণালয়ের।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগের প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়। প্রাথমিক শিক্ষার মান বৃদ্ধি এবং প্রশাসনিক সংস্কারে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই সময় নতুন করে এক লাখ ৬৯ হাজার ১২৪টি শিক্ষকের পদ সৃজনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পস্তাব পাঠানো হয়। এসব পদের মধ্যে দুই হাজার ৫৮৩টি সংগীত, দুই হাজার ৫৮৩টি শারীরিক শিক্ষা, সাধারণ শিক্ষকের পদ ৯৮ হাজার ৩৩৮টি এবং সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ ৬৫ হাজার ৬২০টি। এই প্রস্তাবের মধ্যে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের পার অনুমোদন দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন-কর্মসূচির (পিইডিপি-৪) আওতায় এসব শিক্ষকের বেতন-ভাতা দেওয়া হবে।
দেশে বর্তমানে ৬৫ হাজার ৯৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন দফায় নতুন করে জাতীয়করণ করেছেন ২৬ হাজার ১৫৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ ছাড়া প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই) সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয় রয়েছে ৬১টি। এসব স্কুলে কোটির বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। সহকারী শিক্ষক পদে রয়েছেন সাড়ে তিন লাখের বেশি।
মন্ত্রণালয় আরও জানায়, এর আগে অর্থ মন্ত্রণালয় এসব শিক্ষক নিয়োগের প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়। বেতন-ভাতার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক সম্মতি দেওয়ার পর প্রস্তাবটি প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে পাঠানো হয়। সচিব কমিটি অনুমোদন দেওয়ায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে।
এ বিষয়ে এশিয়া সাউথ প্যাসিফিক অ্যাসোসিয়েশন ফর বেসিক অ্যান্ড অ্যাডাপ্ট এডুকেশনের অ্যাডভোকেসি অ্যাডভাইজার কেএম এনামুল হক বলেন, আমাদের বিষয়ে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ থাকবে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ক্লাস্টার ভিত্তিতে শিক্ষকের ভূমিকা ও সঠিক নিয়োগ নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, দুটি বিষয় ক্লাসরুমে কীভাবে করানো হবে, নিয়মিত পাঠদানের সঙ্গে কীভাবে যুক্ত করা হবে- দুটি বিষয় সঠিকভাবে করা গেলে অবশ্যই বলব এটি একটি ভালো উদ্যোগ।