চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি: ঘুষ দিতে না পারায় যোগদান বঞ্চিত বহু শিক্ষক

Image

বিভিন্ন বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হওয়ার সুযোগ পেলেও ঘুষ দিতে না পারায় যোগদান করতে পারেননি চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক পদে নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ পাওয়া বহু প্রার্থী। এসব প্রার্থীদের অভিযোগ, সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক প্রার্থী ভেদে ১-৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দাবি করেছেন। চাহিদা অনুযায়ী ঘুষ দিতে না পারায় তাদের যোগদানপত্র দেওয়া হয়নি।

যদিও নিয়োগ সুপারিশ পাওয়া শিক্ষকদের যোগদানে বাধা দেয়া ও ঘুষ দাবি করলে সভাপতি ও প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আইন রয়েছে। তবে সেই আইনের ‘থোরাই কেয়ার’ করছেন অধ্যক্ষ-সভাপতিরা।

আরো পড়ুন: আলাদা গণবিজ্ঞপ্তি চান ইনডেক্সধারী শিক্ষকরা

চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, অতীতেও বিভিন্ন গণবিজ্ঞপ্তিতে সুপারিশ পাওয়া শিক্ষকদের কাছে মোটা অঙ্কের ঘুষ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ করা হলেও শাস্তি পাওয়ার নজির কম। অনেকক্ষেত্রে শাস্তি হলেও তা কেবলই লোক দেখানো। সেজন্য একই ধরনের অপরাধ একাধিকবার সংঘটিত হচ্ছে।

জানা গেছে, চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৭ হাজারের বেশি শিক্ষক নিয়োগ চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছিলেন। গত ১৯ অক্টোবর এসব শিক্ষকদের যোগদানের শেষ দিন ছিল। এই সময়ের মধ্যে কেউ যোগদান করতে না পারলে নিয়ম অনুযায়ী ওই পদ শূন্য ঘোষণা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুড়িগ্রাম, রাজশাহী, কিশোরগঞ্জ, কক্সবাজার, পটুয়াখালী, রংপুর, যশোর, বরিশালসহ দেশের প্রায় সব জেলাতেই যোগদানের ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন শিক্ষকরা। যারা প্রতিষ্ঠান প্রধানের চাহিদা অনুযায়ী ঘুষ দিতে পেরেছেন তাদের যোগদানে কোনো সমস্যা হয়নি। তবে ঘুষ দিতে না পারা শিক্ষকদের যোগদানের ক্ষেত্রে নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে।

যোগদান বঞ্চিত শিক্ষকরা জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন, ফ্যান-লাইট ক্রয়, বোর্ড মিটিংয়ের ফিসহ বিভিন্ন অজুহাতে তাদের কাছে অর্থ দাবি করা হয়েছে। এই টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় তাদের যোগদান করতে দেওয়া হয়নি। ইতোমধ্যে তারা বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। তবে তাদের বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি। ফলে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন পার করছেন তারা।

মো. হামিদুর রহমান নামে এক শিক্ষক জানান, আমি ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচ গাছী হাই স্কুলে সুপারিশ পাই। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো প্রধান শিক্ষক আর্থিক লেনদেনের প্রস্তাব দেয় এবং আমি তা সম্মতি না দেওয়ায় আমাকে যোগদানপত্র ও নিয়োগপত্র দেয় নাই। আমি গত ১০ অক্টোবর নিয়োগ প্রাপ্তির জন্য আবেদন করি এবং প্রধান শিক্ষক তা রিসিভ করে আমাকে একটা রিসিভ কপি দেয়। তবে এখনো যোগদানপত্র দেয়নি। আমি এখন কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।

মো. সজিবুর রহমান সজিব নামে আরেক সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থী জানান, আমি পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার এক প্রতিষ্ঠানে বাংলা বিষয়ের সহকারী শিক্ষক পদে সুপারিশ পেয়েছি। যোগদান করতে প্রতিষ্ঠান প্রধান আমাদের কাছে ৫ লাখ ঘুষ দাবি করেছে। আমি এনটিআরসিএতে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তবে কোনো প্রতিকার পাব কি না জানি না।

এনটিআরসিএ’র কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অসংখ্য প্রার্থী যোগদান করতে না পেরে আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। যে সকল প্রতিষ্ঠানে প্রার্থীরা যোগদান করতে পারেননি সেই সকল প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষদের কারণ দর্শানের নোটিশ পাঠানো হবে। তাদের জবাব পাওয়ার পর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরকে অনুরোধ কর হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনটিআরসিএ’র শিক্ষাতত্ত্ব ও শিক্ষামান শাখার এক কর্মকর্তা গত বৃহস্পতিবার  জানান, আমাদের হাতে কেবল শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশের ক্ষমতা রয়েছে। প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা নেই। তাই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।

জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তেরের পরিচালক (মাধ্যমিক) প্রফেসর বেলাল হোসাইন  বলেন, যোগদানের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের কোনো হয়রানি করা যাবে না। এ বিষয়ে আমরা স্পষ্ট নির্দেশিনা দিয়েছি। যারা শিক্ষকদের কাছে ঘুষ দাবি করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, যোগদানের ক্ষেত্রে কোনো প্রতিষ্ঠান প্রধান কিংবা ম্যানেজিং কমিটির কেউ অথবা কোনো শিক্ষা কর্মকর্তা হয়রানি করলে কিংবা অর্থ দাবি করলে আমাদের কাছে সরাসরি লিখিত অভিযোগ দিন। আমরা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।