নিজস্ব প্রতিবেদক: শেরপুর সদরের পাকুড়িয়া ইউনিয়নের চৈতনখিলা গ্রামে শুক্রবার দরিদ্র-অসহায় রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেন তিন নেপালিসহ ১২ তরুণ চিকিৎসক। রোগী দেখে পরীক্ষ-নিরীক্ষা করে ব্যবস্থাপত্র দেয়ার পাশাপাশি রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধও প্রদান করা হয়।
রাজধানীর শিকদার মেডিকেল কলেজ থেকে সদ্য এমবিবিএস পাস করা এসব চিকিৎসকের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ পেয়ে দারুণ খুশি গ্রামের সাধারণ রোগীরা। পাকুড়িয়ার চৈতনখিলা নিজাম উদ্দিন মডেল কলেজে দিনভর একটি মেডিকেল ক্যাম্প করে এসব তরুণ চিকিৎসক রোগীদের সেবা দেন। এতে পাকড়িয়া ইউনিয়ন ও আশপাশের গ্রামের প্রায় তিন হাজার শিশু, নারী-পুরুষকে চিকিৎসা সেবা, ব্যবস্থাপত্রসহ ওষুধ প্রদান করা হয়।
মেডিকেল ক্যাম্পের উদ্যোক্তা পাকুড়িয়া এলাকার বাসিন্দা ডা. হালিমা আক্তার তৃপ্তি। তিনি তার মেডিকেল সহপাঠী চিকিৎসকদের নিয়ে গ্রামের দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ করে দেন। চিকিৎসক দলে ছিলেন-ডা. আস্থা দাওয়ারী (নেপাল), ডা. নিরঞ্জনা থাপা (নেপাল), ডা. সূষমা ভান্ডারি (নেপাল), ডা. মোহাম্মদ আলী বাবু, ডা. গোলাম রব্বানী, ডা. জুঁইপাল, ডা. শারমীন আক্তার তাপতী, ডা. সালমান রহমান ববি, ডা. ইফফাত আরা জুঁই, ডা. সোনিয়া আক্তার তুলি, ডা. ইশিতা জাহিদ বন্যা। ডা. তৃপ্তি পাকুড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ মো. হায়দার আলীর মেয়ে।
বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ পেয়ে গণই ভরুয়াপাড়া গ্রামের চাতাল শ্রমিক হালিমা বেগম (৪২) বলেন, মেলাদিন (দীর্ঘদিন) ধইরা পরসাবের জালাপুড়া আর পেটের ব্যথায় ভুগতাছিলাম। কিন্তু টেহার অভাবে ডাক্তর দেহাবার পাইতাছিলাম না। আইজন সুযোগ পাইনা মাগনা ডাক্তর দেহাইলাম। ওরা দেইখখা, পরীক্ষা কইরা ওষুধপত্রও মাগনা দিছে। কইছে চিন্তা না করতে, বালা হয়ে যাবে।
বটতলা এলাকার বাসিন্দা দিনমজুর রহমত আলী (৩৮) বলেন, আমার আমাশা-পেট খারাপের সমস্যা। বালা অয়না। গরিব মানুষ, আমরাতো ট্যাহার অভাবে আর ডাক্তর দেহাবার সুযোগ পাইন্না। হাসপাতালে গেলেও সুময়মতো ডাক্তর মিলেনা। দোকান থাইক্কা ওষুধ কিন্না খাই। এই বালা, এই খারাপ। কিন্তু এইনো ডাক্তরেরা আমগরে খুব বালা কইরা দেকছে, ওষুধ দিছে। আল্লায় হেগরে বালা করুক।
ডা. হালিমা আক্তার তৃপ্তি বলেন, আমার বাবার ইচ্ছা ছিলো, আমি যেন ডাক্তারি পাস করার পর প্রথমে নিজ এলাকায় মানুষের মাঝে চিকিৎসা সেবা দেই। এই মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে সেই সুযোগ হওয়ায় গর্ববোধ হচ্ছে।
পাকুড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বলেন, আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল মেয়ে হালিমা আক্তার একজন ডাক্তার হয়ে দেশের মানুষের সেবা করবে এবং দেশের কল্যাণে কাজ করবে। আজ আমার আশা পূরণ হয়েছে। এতে আমি খুবই খুশি। তিনি জানান, দুঃস্থ অসহায়দের জন্য তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে দেড় লাখ টাকার ওষুধ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।
নাগরিক সংগঠন জনউদ্যোগ শেরপুর জেলা কমিটির আহ্বায়ক শিক্ষক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ মেডিকেল ক্যাম্প তরুণ চিকিৎসকদের এক অনুকরণীয় উদ্যোগ। দেশ-বিদেশের তরুণ চিকিৎসকদের দলটি কয়েক হাজার রোগীকে এ মানবিক সেবা দান ও তাদের এ সুপ্রয়াস চিকিৎসা সেবাকে এক নতুন রূপ দান করলো। সামাজিক চাহিদা এবং অ-সেবামূলক অনুশিলন যখন প্রবাহমান, তখন স্রোতের বিপরীতে একদল চিকিৎসক মানবিক শপথকে ধারণ করে গরিব-অসহায় মানুষদের সেবাদানে এক বিরল দৃষ্টান্তের মাইলফলক স্হাপন করলো।