একবছরে শিক্ষা সংক্রান্ত জটিলতায় পড়েছে প্রায় ৬ লাখ শিক্ষার্থী

ডেস্ক,১৩ মার্চ : প্রশ্নপত্র ফাঁস, ফাঁসের প্রচার ও শিক্ষক স্বল্পতাসহ বিভিন্ন কারণে গত একবছরে পাঁচ লাখ ৮৫ হাজার ২৫২ জন শিশু শিক্ষার্থী শিক্ষা সংক্রান্ত জটিলতায় পড়েছে। বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সোমবার (১২ মার্চ) বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত ‘শিশু পরিস্থিতি ২০১৭’ প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। ছয়টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণ নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে বেসরকারি এ সংস্থা।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সংবাদ সম্মেলনমানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের কর্মসূচি সমন্বয়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘২০১৭ সালে প্রশ্নপত্র ফাঁস, প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রচার, শিক্ষক স্বল্পতা, শ্রেণিকক্ষের স্বল্পতা, বিদ্যালয় ভবন ভাঙা, স্বাস্থ্য ঝুঁকি, যৌন নির্যাতনসহ বিভিন্ন কারণে শিশুরা শিক্ষা সংক্রান্ত জটিলতায় পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা ২০১৬ সালের তুলনায় পাঁচ লাখ ৩২ হাজার ৯৫২ জন বেশি। এসব শিশুদের মধ্যে অনেকেই ঝরে পড়েছে।’

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০১৬ সালে ৫২ হাজার ৩০০ শিশু শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। শিক্ষা সংক্রান্ত জটিলতায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা এবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৮৫ হাজার ২৫২ জনে। গণমাধ্যমের প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য তুলে ধরে সংস্থাটি।

ফাউন্ডেশনের তথ্যে বলা হয়, অপরাধে যুক্ত হয়ে শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরীক্ষায় নকল, প্রশ্নপত্র ফাঁস, মাদকাসক্তি, জঙ্গিবাদে যুক্ত হওয়া, নকল টাকা বিতরণ, চকলেট বোমা বহন, ধর্ষণ, নির্যাতন, হত্যাকাণ্ড, মারামারি ও ভাঙচুরের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শিশুরা। এর মধ্যে হত্যা ও হত্যা চেষ্টায় যুক্ত হয়েছে ২১ জন, উত্ত্যক্ত করায় যুক্ত হয়েছে ১৬ জন। ধর্ষণ, ধর্ষণচেষ্টা ও ধর্ষণের পর হত্যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আট জন। এছাড়া কিশোর দ্বন্দ্ব, প্রতিশোধ, খেলতে গিয়ে ঝগড়া ও গ্যাং সংস্কৃতিতেও যুক্ত হয়েছে অনেক শিক্ষার্থী।

ফাউন্ডেশনের তথ্যে আরও বলা হয়, ২০১৭ সালে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জটিলতায় আক্রান্ত হয় তিন হাজার ৮৫৯ জন। এর মধ্যে মারা গেছে ২১ জন। আর স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে একহাজার ৫৩৬ জন শিশু। শিশুরা যেসব রোগে আক্রান্ত হয়েছে- তার মধ্যে রয়েছে, বিরল রোগ, পেটে ভ্রুণ, হাড়ভাঙা রোগ, নিউমোনিয়া, হাম, ডায়রিয়া, এনথ্রাক্স, চর্মরোগ, থ্যালাসেমিয়া, ক্যান্সার, রক্তশূন্যতা ও অপুষ্টিসহ অন্যান্য রোগ।

২০১৭ সালে শিশু নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে ১২৩টি। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের এবং আহত হয়েছে ১০৯ জন শিশু। দায়িত্বে অবহেলার কারণে আক্রান্ত হয়েছে ৩১ লাখ ৫১ হাজার ৮১৪ জন শিশু। এসব শিশুদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৫৯ জনের এবং আহত হয়েছে ৩২২ জন। দায়িত্বে অবহেলার মধ্যে রয়েছে- চিকিৎসকের অবহেলা, পূর্ণ বয়স্ক দেখিয়ে আদালতে উপস্থাপন, খেলার মাঠ দখল, স্কুলে অতিরিক্ত ফি আদায়, কিশোর লেগুনাচালক ও পরিবহন শ্রমিক ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত করা। এছাড়া ভুল প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়া, পাহাড় ধস ও বন্যা ইত্যাদি কারণেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিশুরা।

এতে আরও বলা হয়, ভবিষ্যত অনিশ্চয়তায় রয়েছে দেশের এক কোটি শিশু। এসব শিশুদের একটি অংশকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত করা হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ অন্যান্য দুর্যোগ, ঘর-বাড়ি নেই, জঙ্গিবাদে যুক্ত হয়ে জেলে বন্দি থাকা, প্রাথমিক শিক্ষা থেকে ঝরে পড়া ও মাদকাসক্ত হয়ে পড়া এই অনিশ্চয়তার কারণ। এ সংখ্যা বিগত সময়ের তুলনায় বেড়েছে। রাজনৈতিক সহিংসতায় যুক্ত হয়ে আক্রান্ত হয়েছে ৫৪ জন শিশু। এর মধ্যে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছে ৫২ জন। এছাড়া পাচার ও এসিড নিক্ষেপসহ নানা কারণে শিশুরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ফাউন্ডেশনের কর্মসূচি সমন্বয়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের মধ্যে অনেকের শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি ঘটেছে। বিঘ্ন ঘটেছে অনেকের। অনেকে শিক্ষার্থী শিক্ষা জীবন চালিয়ে নিলেও গুণগত শিক্ষার অধিকার বঞ্চিত হবে

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।