বাবা এমনই একজন মানুষ, যে শুধু নিঃস্বার্থভাবে সন্তানদের দিয়েই যান। বিনিময়ে সন্তানদের কাছ থেকে কিছু পাওয়ার আশা করেন না। সন্তানের জন্য সর্বদা মঙ্গল কামনা করেন। এমনি একজন বাবা জলন্ধর নায়েক। ওই বাবার বাড়ি ভারতের ওড়িশায়।
জলন্ধর পেশায় সবজি বিক্রেতা। অক্ষর তার কাছে কালো কয়েকটি রেখা মাত্র। পড়াশোনা করার কোন সুযোগ তার জীবনে হয়ে উঠেনি। তাই প্রথম থেকেই ইচ্ছে ছিল ছেলেকে পড়াশোনা করাবেন। যতদূর সে পড়তে চায় ততদূর পড়াবেন। কিন্তু গ্রামে তো স্কুল নেই। একটা কাঁচা রাস্তাও পর্যন্ত নেই। শিক্ষার আলো পৌঁছানো তো দূরের কথা দুবেলা অন্ন জুটাতেই হিমশিম খায় সেখানকার বাসিন্দারা।
চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়ে যায় বাবা জলন্ধরের। ছেলে পড়বে কোথায়? অনেক ভেবে উপায় বের করেন জলন্ধর। গ্রামের পাথুরে পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরির পণ নেন তিনি। যেই ভাবা অমনি কাজ। গত ২ বছর ধরে প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা ধরে পাথর কেটে ১৫ কিলোমিটার রাস্তা তৈরির কাজ করেছেন তিনি। প্রতিদিন সকাল হলেই ছেনি হাতুড়ি নিয়ে চলে যেতেন পাথুরে পাহাড়ের কাছে। রোদ, বৃষ্টি, শীত কোনও কিছুর পরোয়া করেননি। অদম্য জেদে তার গ্রাম থেকে নিকটবর্তী শহর ফুলবনি পর্যন্ত রাস্তা তৈরি করে ফেলেছেন তিনি।
জলন্ধরের এই কৃতিত্বের কথা স্থানীয় একটি সংবাদপত্রে পড়েন জেলার কালেক্টর। তার পড়েই টনক নড়ে স্থানীয় প্রশাসনের। তড়িঘড়ি করে জলন্ধরকে নিজের দফতরে ডেকে নিয়ে সম্মান জানান। সেই সাথে নির্দেশ দেন সেখানকার রাস্তাটি যাতে ভালো করে নির্মাণ করা হয় তার ব্যবস্থা করতে। সেই সাথে ঘোষণা করা হয় কন্ধমাল উৎসবে বিশেষ সম্মান দেওয়া হবে জলন্ধরকে।