জীবননগর ব্যুরো: বিদ্যালয়ের অর্থ তছরুপ, অভিভাবকদের সাথে অসদাচারণ ও এক সহকর্মী শিক্ষিকার সাথে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ তুলে প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার দাসের গলায় জুতোর মালা দেয়া হয়েছে। এ সময় তাকে মারপিট ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও করা হয়। বিদ্যালয় থেকে অভিযুক্ত দু শিক্ষককে অবিলম্বে প্রত্যাহার ও চাকরি থেকে তাদের অপসারণের দাবিতে এ সময় গ্রামবাসী স্কুলের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করে। কর্মসূচি পালন কালে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক তাপস ও সহকারী শিক্ষিকা শিউলী খাতুনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্ত করে শিক্ষা অফিসের ২ সদস্যের টিম। তাদের তদন্ত রিপোর্ট পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে অভিযুক্ত দু শিক্ষককে বিদ্যালয়ে আর ঢুকতে দেয়া হবে না বলে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী। এ নিয়ে গ্রামবাসীদের মাঝে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এলাকাবাসী নৈতিক স্খলন হারানো শিক্ষক নামের কলঙ্ক এ দু শিক্ষকের চাকরি থেকে অবিলম্বে অপসারণের দাবি তুলেছেন। আলোচিত এ ঘটনা ঘটেছে গত বুধবার জীবননগর উপজেলা সীমান্ত ইউনিয়নের হাবিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
সম্প্রতি হাবিবপুর গ্রামবাসী প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার দাসের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের অর্থ তছরুপ, অভিভাবক সদস্যদের সাথে অসদাচরণ ও সহকারী শিক্ষিকা শিউলী খাতুনের সাথে অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগ তুলে সংশ্লিষ্ট অফিসে অভিযোগ করেন। উপজেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী শিক্ষা অফিসার নূর ইসলাম ও রাশেদুল হাসান গতকাল বিদ্যালয়ে যান তদন্ত কাজ পরিচালনার জন্য। এ সময় বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার দাস ও সহকারী শিক্ষিকা শিউলী খাতুনের অবিলম্বে বিদ্যালয় থেকে প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। একপর্যায়ে তারা তাপস কুমার দাস ও শিউলী খাতুনকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। ইটের আঘাতে মিঠুন মাহমুদ নামক স্থানীয় এক সাংবাদিক আহত হন। পরে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী বিদ্যালয়ে ঢুকে প্রধান শিক্ষককে গালিগালাজসহ মারপিট করে গলায় জুতোর মালা পরিয়ে দেয়। তারা অভিযুক্ত দু শিক্ষককে অবরুদ্ধ করে রাখে। হাবিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে অবিলম্বে তাদেরকে প্রত্যাহারসহ ও নৈতিক স্খলন হারানো এ দু শিক্ষকের চাকরি থেকে অপসারণের দাবিতে বিদ্যালয়ে সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, গ্রামবাসী ও স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক তাপস কুমারের সাথে সহকারী শিক্ষিকা শিউলী খাতুনের অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। প্রধান শিক্ষকের মোটরসাইকেলে শিউলী খাতুন প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে থাকেন। তারা প্রতিদিন ক্লাস ফাঁকি দিয়ে অফিসে বসে প্রেমালাপ করে থাকেন। বেশ কয়েকদিন তাদেরকে চুম্বনরত অবস্থাতেও দেখা গেছে বলে অভিযোগকারীরা জানান। শিক্ষার্থী পড়ার বিষয়ে জানতে গেলে তাদের সাথে খারাপ আচরণ করা হয়ে থাকে। ম্যানেজিং কমিটির অভিযোগ প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের স্লিপের টাকা তুলে তছরুপ করেছেন। তিনি অভিভাবকদের সাথে সর্বদা অসদাচরণ করে থাকেন।
এ ব্যাপারে স্কুলের অন্য শিক্ষকরা জানান, প্রধান শিক্ষক ও শিউলী খাতুন দুজনই একই মোটরসাইকেলে স্কুলে আসেন সবার আগে এবং দুজনই আবার একই সাথে মোটরসাইকেলযোগে বাড়িতে চলে যান। একটি সূত্র জানায়, শিউলী খাতুনের সাথে তাপসের অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগ তুলে তাপসের স্ত্রী বিচার প্রার্থীও হয়েছিলেন। কিন্তু সে বিচার আলোর মুখ দেখেনি।
এলাকাবাসী জানান, প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার দাস ও শিউলী খাতুনকে তাদের চালচলন নিয়ে একাধিকবার সতর্ক করা হয়। কিন্তু তারা তারা তারপরও অবৈধ সম্পর্ক বজায় রাখেন। এ অবস্থায় তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিলো। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুল গাফফার জানান, প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার ও সহকারী শিক্ষিকা শিউলী খাতুনের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে বলে অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ আমাদের কাছে অভিযোগ করেছে। অভিযোগের বিষয়ে তাদেরকে বলা হয়। কিন্তু তারপরও তারা আমাদের কোনো কথা শোনেননি। এছাড়াও প্রধান শিক্ষক তাপস স্কুলের উন্নয়নমূলক কাজের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এসব বিষয় নিয়ে আমরা ম্যানেজিং কমিটির সকল সদস্য প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট অফিসে লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। তারই পরিপেক্ষিতে গতকাল উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে দুজন সহকারী শিক্ষা অফিসার তদন্তের জন্য আসেন। এ সময় স্কুলের সকল শিক্ষার্থী ক্লাস বর্জন করে গ্রামবাসী ও অভিভাকগণের সাথে একত্রিত হয়ে অভিযুক্ত দু শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন করে। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক তাপস সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তদন্ত টিমের তদন্ত রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেলিম রেজা জানিয়েছেন, এখনও কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।