অপরাধের নিরাপদ চারণভূমি হয়ে উঠছে ফেসবুক। ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে প্রতারণা, ছবি এডিট করে গুজব ছড়ানোসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে ফেসবুকের মাধ্যমে। ফেসবুক ব্যবহারকারী নারীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ফেসবুকে সাম্প্রদায়িক গুজব ছড়িয়ে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি বড় ধরনের ঘটনাও ঘটে গেছে দেশে। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এ ধরনের অপরাধগুলোকে। সরকারের পক্ষ থেকে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার পরও উন্নতি হয়নি পরিস্থিতির। তবে সংশ্লিষ্টদের মতে ফেসবুক সংক্রান্ত অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ব্যক্তি সচেতনতা সবচেয়ে বেশি জরুরি।
জানা যায়, দেশে বর্তমানে সক্রিয় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫ কোটি ৪১ লাখ। এর মধ্যে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা এক কোটি ৭০ লাখ। ফেসবুকের মাধ্যমে একদিকে যেমন বিভিন্ন ধরনের ই-কমার্স ব্যবসার সম্প্রসারণ হচ্ছে অন্যদিকে ব্যাপকভাবে এর অপব্যবহারও হচ্ছে।
নারীর প্রতি অবমাননাকর কনটেন্ট, ধর্মীয় উসকানি, জঙ্গি কার্যক্রমের কৌশলী প্রচারণাসহ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির মতো নানা চেষ্টা ফেসবুকের মাধ্যমে ঘটে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর এবং হবিগঞ্জের মাধবপুরে ছবি এডিট করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করা হয়। এর আগে বান্দরবনের রামুতেও ফেসবুকে বিতর্কিত ছবি পোস্ট দিয়ে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস হয়।
জামায়াতে ইসলামীর নেতা ও যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছবি চাঁদে দেখা গেছে বলে ফেসবুকে ছবি পোস্ট করে ব্যাপক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরীর নামে ফেসবুকে ভুয়া আইডি দিয়ে পেজ খোলার ঘটনায় চলতি বছরের ৩১ মে রমনা থানায় সাধারণ ডায়রি করা হয়।
জানা যায়, বাংলাদেশে ফেসবুকের কোনো অ্যাডমিন না থাকায় আপত্তিকর পোস্ট বা কনটেন্ট সরানো কঠিন হয়ে পড়ে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো ধরনের চুক্তি না থাকায় ফেসবুকের অপব্যবহারের মাধ্যমে সংঘটিত এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়াও সম্ভব হচ্ছে না।
গত ৩ বছরে (২০১৩-২০১৫) বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ২৮টি অনুরোধের মাধ্যমে ৬৮টি ফেসবুক অ্যাকাউন্টের বিষয়ে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য চাওয়া হয়। এর বিপরীতে শুধুমাত্র ২০১৫ সালে কয়েকটি অ্যাকাউন্টের (১৬.৬৭%) বিষয়ে তথ্য দেয়া হয়।
বিভিন্ন সময়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার ফেসবুক সাময়িকভাবে বন্ধও করে। গত বছরের ১৮ নভেম্বর ফেসবুকসহ বেশ কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বন্ধ করে দেয় সরকার। বন্ধ হওয়ার ২২ দিন পর ১০ ডিসেম্বর ফেসবুক খুলে দেয়া হয়।
বিভিন্ন সময়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার ফেসবুক সাময়িকভাবে বন্ধও করে। গত বছরের ১৮ নভেম্বর ফেসবুকসহ বেশ কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বন্ধ করে দেয় সরকার। বন্ধ হওয়ার ২২ দিন পর ১০ ডিসেম্বর ফেসবুক খুলে দেয়া হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার (সাইবার ক্রাইম) আলিমুজ্জামান এসব প্রসঙ্গে মানবকণ্ঠকে বলেন, তারা তাদের সক্ষমতা ও সাধ্য অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছেন। প্রতিনিয়ত তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে ডিএমপির সাইবার ক্রাইম টিমকে উন্নত প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এ সংক্রান্ত যে কোনো ধরনের অভিযোগ বা মামলা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে তদন্ত করা হচ্ছে। এ ছাড়াও গুজব ছড়াতে পারে এমন অনেক বিষয়ের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আগাম পদক্ষেপও নেয়া হচ্ছে। পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ থেকে রক্ষা পেতে ব্যবহারকারীদেরই সবচে বেশি সচেতন হতে হবে।
সতর্কতার সঙ্গে বন্ধু নির্বাচন (ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট), লাইক, শেয়ারসহ ফেসবুকের প্রতিটি কনটেন্ট জেনে বুঝে ব্যবহার করা উচিত। কোন পোস্টটি পাবলিকলি কিংবা প্রাইভেটলি প্রচার হবে তা বুঝতে হবে। ক্ষেত্র বিশেষে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সহায়তা নেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি জানান, ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তাদের পলিসির ভেতর থেকে যতটুকু সহায়তা করার তা করছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী তারানা হালিম জানিয়েছেন, ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৭৩ শতাংশ নারী সাইবার সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। তিনি এ বিষয়টি ফেসবুক কর্তৃপক্ষের নজরেও আনেন। গত বছরের ২ ডিসেম্বর হোটেল সোনরগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠানে তারানা হালিম বলেছিলেন, ‘আমাদের ৭৩ শতাংশ নারী এখন সাইবার সহিংসতার শিকার। যখনই ফেসবুককে অভিযোগ করি তখন ফেসবুক গুরুত্ব দেয় না, কারণ আমাদের সঙ্গে কোনো চুক্তি নেই। আমাদের নারীরা যে সহিংসতার শিকার হচ্ছেন এটা তাদের গণনায় নিতে হবে। ফেসবুকের সঙ্গে আমাদের চুক্তি করতেই হবে।’
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী তারানা হালিম জানিয়েছেন, ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৭৩ শতাংশ নারী সাইবার সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। তিনি এ বিষয়টি ফেসবুক কর্তৃপক্ষের নজরেও আনেন। গত বছরের ২ ডিসেম্বর হোটেল সোনরগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠানে তারানা হালিম বলেছিলেন, ‘আমাদের ৭৩ শতাংশ নারী এখন সাইবার সহিংসতার শিকার। যখনই ফেসবুককে অভিযোগ করি তখন ফেসবুক গুরুত্ব দেয় না, কারণ আমাদের সঙ্গে কোনো চুক্তি নেই। আমাদের নারীরা যে সহিংসতার শিকার হচ্ছেন এটা তাদের গণনায় নিতে হবে। ফেসবুকের সঙ্গে আমাদের চুক্তি করতেই হবে।’
সূত্র জানায়, ফেসবুকের সঙ্গে চুক্তির উদ্যোগ নিতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) নির্দেশ দিয়েছিলেন ডাক ও টেলি যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী। কিন্তু বিটিআরসি এ বিষয়ে তেমন কোনো কাজ করতে পারেনি।
এরপর গত বছরের ৩০ নভেম্বর বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার জন্য ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেন প্রতিমন্ত্রী। প্রতিমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে আলোচনার জন্য ফেসবুক কর্তৃপক্ষের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের পলিসি অ্যাডভাইজার ৬ ডিসেম্বর ঢাকা আসেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন সরকারের তিন মন্ত্রী। দেশে বৈঠকের পর ১২ থেকে ২৪ জানুয়ারি সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া সফরকালে সিঙ্গাপুরেও ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। ওই বৈঠকের পরও বাংলাদেশে ফেসবুকের এডমিন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
ফেসবুক কতৃপক্ষের ‘গ্লোবাল গভর্নমেন্ট রিকোয়েস্ট রিপোর্ট’ সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের শেষ ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১২টি অনুরোধের মাধ্যমে ৩১টি অ্যাকাউন্টের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে মাত্র ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ তথ্য সরবরাহ করে ফেসবুক। এর আগে ২০১৫ সালের প্রথম ৬ মাসে (জানুয়ারি-জুন) বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ৩টি অনুরোধের মাধ্যমে ৩টি অ্যাকাউন্ট, ২০১৪ সালে মোট ১২টি অনুরোধের মাধ্যমে ২২টি অ্যাকাউন্টের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু এসব কোনো অনুরোধেই সাড়া দেয়নি বলে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে।
এরপর গত বছরের ৩০ নভেম্বর বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার জন্য ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেন প্রতিমন্ত্রী। প্রতিমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে আলোচনার জন্য ফেসবুক কর্তৃপক্ষের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের পলিসি অ্যাডভাইজার ৬ ডিসেম্বর ঢাকা আসেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন সরকারের তিন মন্ত্রী। দেশে বৈঠকের পর ১২ থেকে ২৪ জানুয়ারি সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া সফরকালে সিঙ্গাপুরেও ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। ওই বৈঠকের পরও বাংলাদেশে ফেসবুকের এডমিন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
ফেসবুক কতৃপক্ষের ‘গ্লোবাল গভর্নমেন্ট রিকোয়েস্ট রিপোর্ট’ সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের শেষ ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১২টি অনুরোধের মাধ্যমে ৩১টি অ্যাকাউন্টের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে মাত্র ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ তথ্য সরবরাহ করে ফেসবুক। এর আগে ২০১৫ সালের প্রথম ৬ মাসে (জানুয়ারি-জুন) বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ৩টি অনুরোধের মাধ্যমে ৩টি অ্যাকাউন্ট, ২০১৪ সালে মোট ১২টি অনুরোধের মাধ্যমে ২২টি অ্যাকাউন্টের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু এসব কোনো অনুরোধেই সাড়া দেয়নি বলে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে।