ডেস্ক: নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার পি আর সাত্তার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে আইনবহির্ভূতভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি ওই শিক্ষকের কাছ থেকে জোর করে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেয়, যা আইনসিদ্ধ হয়নি বিধায় তিনি স্বপদে বহাল আছেন বলে বিবেচিত হতে পারে।
প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ মতামত দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, যে প্রক্রিয়ায় শ্যামল কান্তি ভক্তকে বরখাস্ত করা হয়েছিল, তা বিধিবহির্ভূত হওয়ায় তাঁকে ওই পদে বহাল রাখা হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ ও নারায়ণগঞ্জের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুস জামান স্বাক্ষরিত তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লিখিত মতামতসহ চার দফা সুপারিশ করা হয়েছে।
এ প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করার জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। আজ শুক্রবার হলফনামা আকারে এ প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইন কর্মকর্তা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। এরপর আগামী ২৯ মে রবিবার এ বিষয়ে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে শুনানি হতে পারে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগকারী শিক্ষার্থী রিফাত হাসান একেক সময় একেক কথা বলেছে। স্কুল কমিটির সামনে রিফাত হাসানের উপস্থাপিত জবানবন্দি ও গণমাধ্যমে প্রদত্ত জবানবন্দি এবং রিফাতের মায়ের লিখিত অভিযোগ ও মৌখিক অভিযোগের বক্তব্যের মধ্যে গরমিল পাওয়া যায়। তাই বিতর্কিত বিষয়ের সত্যতা গ্রহণযোগ্য নয় বলে বিবেচিত হতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির আর্থিক দ্বন্দ্ব বিরাজমান ছিল। এই দ্বন্দ্ব নিরসনে কখনো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আর্থিক জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি দিয়ে এ ঘটনার অধিকতর তদন্ত করা যেতে পারে। অজ্ঞাত কোনো পক্ষ প্রধান শিক্ষকের নামে যে বিষোদ্গার মসজিদের মাইকে প্রচার করে জনগণকে উত্তেজিত করতে প্ররোচনা দিয়েছে সেটি উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য দায়ী বলে প্রতীয়মান হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থী রিফাত এবং তার মায়ের লিখিত ও মৌখিক জবানবন্দি এবং গণমাধ্যমের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে মনে হয়েছে এগুলোর মধ্যে গরমিল রয়েছে। সেহেতু বিতর্কিত বিষয়টির সত্যতা গ্রহণযোগ্য নয় বলে বিবেচিত হতে পারে।
গত ১৩ মে ইসলাম ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়িয়ে শ্যামল কান্তি ভক্তকে বিদ্যালয়ের ভেতরে অবরুদ্ধ করে মারধর করা হয়। পরে তাঁকে কান ধরে উঠবোস করানো হয়। এরপর ১৬ মে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ফারুকুল ইসলামের স্বাক্ষর করা চিঠিতে শ্যামল কান্তি ভক্তকে চারটি অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ঘটনায় সারা দেশে নিন্দার ঝড় ওঠে। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাঁকে পুনর্বহাল করে কমিটি বাতিল করে। বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত হওয়ার পর গত ১৮ মে তা বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান ও অ্যাডভোকেট মহসীন রশিদ। এরপর আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আদেশ দেন। আদেশে ওই শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা তিন দিনের মধ্যে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ওই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়। স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসিকে দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
এ ঘটনার পর শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং শ্যামল কান্তি ভক্তকে স্বপদে বহাল রাখার ঘোষণা দেন। পাশাপাশি বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করেন মন্ত্রী।