পাবলিক পরীক্ষা থেকে বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (এমসিকিউ) তুলে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা।
এছাড়া প্রশ্ন ব্যাংক তৈরি করে সেখান থেকে প্রশ্ন প্রণয়ন এবং নোট ও গাইড বই নিষিদ্ধ করে পাঠ্যবইকে আরও সহজবোধ্য করারও সুপারিশ জানিয়েছেন তারা।
ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার মাধ্যমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে করণীয় শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় এসব পরামর্শ আসে।
এসএসসি ও এইচএসসিতে বর্তমানে ৪০ নম্বর এমসিকিউ ও ৬০ নম্বর রচনামূলক প্রশ্নে পরীক্ষা হয়। ২০১৭ সাল থেকে এমসিকিউ অংশ থেকে ১০ নম্বর কমানো হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন এমসিকিউ প্রশ্ন শূন্যে নামিয়ে আনার পরামর্শ দিয়ে বলেন, “এখন কোচিং ও প্রাইভেট টিউশনের রমরমা ব্যবসা হচ্ছে। যদি গাইড বই পড়তে হয়, তাহলে পাঠ্যবই দরকার কী?”
সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে পাবলিক পরীক্ষা শেষ করারও পরামর্শ দেন তিনি।
অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, শিক্ষকেরা সৃজনশীল পদ্ধতিতে প্রশ্ন করতে না পেরে গাইড বই অনুসরণ করছেন।
কেন্দ্রীয়ভাবে প্রশ্নব্যাংক তৈরি করে সেখান থেকে পরীক্ষা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “এত পাস সমস্ত শিক্ষা ব্যবস্থায় সন্দেহ তৈরি করছে, মানুষের আস্থা কমে গেছে।”
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক করার দাবি জানান। এছাড়া এমসিকিউ তুলে দেওয়ার পক্ষেও মত দেন তিনি।
অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, এমনভাবে বই লেখা উচিতে যেন শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়তে না হয়। শিক্ষকরা না পড়ালেও যেন শিক্ষার্থীরা বই পড়ে জেনে নিতে পারে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদও ‘চমৎকার’ করে পাঠ্যবই প্রণয়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
এছাড়া ভালো প্রশ্ন করে উত্তরপত্র মূল্যায়ন ব্যবস্থা আরও ভালো করারও পরামর্শ দেন তিনি।
সবার বক্তব্য শুনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, শিক্ষাবিদদের এই পরামর্শ অনুযায়ী তারা কর্মপন্থা ঠিক করবেন।.
২০১৭ সাল থেকে এমসিকিউ অংশ থেকে ১০ নম্বর কমিয়ে আনার সরকারি সিদ্ধান্তের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন মন্ত্রী।
শিক্ষকদের ‘অনৈতিক’ কার্যকলাপ ঠেকাতে পাবলিক পরীক্ষায় এমসিকিউ পদ্ধতি তুলে দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে বলে গত বছরের ৩০ মে জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী।
ওই দিন মন্ত্রী বলেছিলেন, “অসৎ উপায়ে এমসিকিউতে ৪০ নম্বর পাওয়া সহজ হয়ে যাচ্ছে। আগামীতে এই পদ্ধতি রাখা হবে কি না তা নিয়ে শিক্ষাবিদসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
কিছু শিক্ষক সিলগালা করা এমসিকিউ প্রশ্ন পরীক্ষা শুরুর আগেই হলের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়ায় শিক্ষার্থীরা সহজেই পুরো নম্বর পেয়ে যাচ্ছে বলেও স্বীকার করেন শিক্ষামন্ত্রী।
শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইনের সঞ্চালনায় অর্থনীতিবিদ কাজী খলিকুজ্জমান আহমদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফাহিমা খাতুন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমেদ প্রমুখ মতিবিনিময় সভায় ছিলেন।