৯ হাজারের বেশি ঝুঁকিপূর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান

নিজস্ব প্রতিবেদক,১৫ এপ্রিল ২০১৯ : সারাদেশে সাড়ে ৯ হাজারের বেশি ঝুঁকিপূর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান চলছে। এসব ভবনের অধিকাংশই ২০০১ থেকে ২০০২ সালে নির্মিত। বাকি ভবনগুলোর বয়সও ২০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে এসব ভবন নির্মাণ করায় প্রাথমিকের লক্ষাধিক ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভবনগুলোর কোনোটির পিলার নড়বড়ে, কোনোটির ছাদ বা দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। ভবনগুলোর ছাদের অবস্থাও খুবই নাজুক। পলেস্তারা ওঠে রড বেরিয়ে পড়েছে। নতুন অনেক ভবনের দরজা-জানালাও নেই। কোনো বিদ্যালয়ে আবার বসার চেয়ার-টেবিলসহ সকল আসবাপত্রও নড়বড়ে।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের (ইইডি, সাবেক ফ্যাসিলিটিজ বিভাগ) একজন সিনিয়র প্রকৌশলী জানান, যদি একটি ভবন নির্মাণে বরাদ্দ যথাযথভাবে ব্যয় হয়, তাহলে কিছুতেই তা ৫০ বছরের আগে সংস্কারের দরকার পড়ে না। ভবন ভেঙে পড়ার মূল কারণ হচ্ছে, রড ছাড়া কাঠ-বাঁশের ব্যবহার এবং যথাযথ পরিমাণ বালু ও সিমেন্ট না ব্যবহার করা।

ঠিকাদার তো লাভ করতে চাইবেই, কিন্তু স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী নির্মাণকাজ নিশ্চিত করা প্রকৌশলীর দায়িত্ব। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ১৯৯০ সাল থেকে গ্রামের স্কুলগুলো এলজিইডি নির্মাণ করছে। শহরেরগুলো ফ্যাসিলিটিজ বিভাগ ২০০০ সাল পর্যন্ত নির্মাণের দায়িত্ব পালন করে। দেখা যাবে, ঢাকা শহরে ৮০ দশকে নির্মিত স্কুল এখন পর্যন্ত সংস্কারও করতে হয়নি।

তিনি আরও বলেন, এর মধ্যে ১৯৮৬ সালে নির্মিত করাতিটোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পরবর্তীতে তৈরি মানিকদীতে অবস্থিত ব্রাহ্মণনগর এবং বাংলামোটরের খোদেজা খাতুন স্কুল অন্যতম। এসব প্রতিষ্ঠান শুধু চুনকাম করলেই নতুনের মতো দেখায়। আমাদের নির্মাণ ব্যয় বেশি বলে এলজিইডিকে কাজ দেয়া হয়েছিল; কিন্তু আসলেই কি কম টাকায় ভবন হচ্ছে?

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) এবং মাঠপ্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এলজিইডির ভবন নির্মাণের সময় প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। নির্মাণ শেষে স্কুলের পরিচালনা কমিটি এবং প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষরে ভবনটি হস্তান্তর করা হয়। গোটা কাজ তদারকি করেন উপজেলা প্রকৌশলী।

সার্বিক দায়িত্বে সংশ্লিষ্ট ইউএনও। তবে হস্তান্তরের পর এসব ভবন রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচর্যা ও তদারকির ভার প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিইও) জেলার গোটা শিক্ষার ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত। এরপরও প্রাথমিকের ভবনগুলোর মরণ ফাঁদে পরিণত হওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গত ৬ এপ্রিল বরগুনার তালতলী উপজেলার ছোটবগী পিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাদের বিম ভেঙে পড়ে একজন শিশু ছাত্রী নিহত এবং ৯ জন আহত হয়।

জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেন, মাঠ প্রশাসনের মাধ্যমে সারাদেশের স্কুল ও এর শিক্ষার সার্বিক দিক তদারকি করানো হয়। তা সত্ত্বেও বরগুনার একটি স্কুলে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। আমরা খুবই ব্যথিত। এ ঘটনায় ভবন নির্মাণ থেকে শুরু করে, তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউই রেহাই পাবে না। তদন্ত কমিটি রোববার নাগাদ প্রতিবেদন দেবে। তার ভিত্তিতে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা সংগ্রহের কাজ চলছে। দ্রুত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা চূড়ান্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক্ষেত্রে কোনো ভবন সংস্কারের সুযোগ না থাকলে তা পরিত্যক্ত করা হবে। বাকিগুলো সংস্কারে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।