৬ষ্ঠ শ্রেণীর বইয়ে যৌনশিক্ষার সুড়সুড়ি

Image

ডেস্ক,২২ জানুয়ারী ২০২৩: লাজ শরমের যেন কোনোই বালাই নেই ক্লাস সিক্সের বিজ্ঞান বইয়ের একটি অধ্যায়ে। বিজ্ঞান অনুশীলন পাঠ বইয়ের ১১তম অধ্যায়ের ‘মানব শরীর’ শিরোনাম অংশে কিশোর-কিশোরীর বয়ঃসন্ধিকালে তাদের শরীরের নানা অঙ্গের যেভাবে বর্ণনা দেয়া হয়েছে প্রকাশ্যে তা পড়ার/ পড়ানোর উপযোগী নয়। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক কিংবা বাসাবাড়িতে অভিভাবকদের সামনেও এই বর্ণনা প্রকাশ করার মতো নয়। বইয়ের ১১৯ থেকে ১২২ পৃষ্ঠায় কিশোর-কিশোরীদের বয়ঃসন্ধি অধ্যায় যেভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, তা চটি বইয়ের রগরগে রসালো রীতিমতো গল্পকে হার মানাবে।

বইটির ১২০ পৃষ্ঠায় বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেদের শারীরিক পরিবর্তনের বিশদ বর্ণনা দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেদের গলার স্বর ও বিভিন্ন অঙ্গের পরিবর্তন হতে থাকে। বিশেষ করে এক জায়গায় বলা হয়েছে পেশি সুগঠিত হওয়ার পাশাপাশি ছেলেদের শিশ্ন (পেনিস) ও অণ্ডকোষ এই সময়ে আকৃতিতে বড় হতে থাকে। এই বৃদ্ধি ঘটতে থাকে ৩০ বছর পর্যন্ত। এ ছাড়া পেনিসে রক্ত ও অক্সিজেন সঞ্চালন বৃদ্ধি হতে থাকলে ছেলেদের পেনিস সময়ে সময়ে দৃঢ়তা বা শক্ত হয়ে ওঠে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ছেলেদের পেনিসে ও অণ্ডকোষে শুক্রানো তৈরি হয় এবং তা অণ্ডকোষে জমা হতে থাকে। বইটির ১২১ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে ছেলেদের বয়ঃসন্ধিতে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লোম বা পশম গজাতে থাকে। প্রথমে পেনিসের গোড়ার দিকে লোম গজালেও পরে এই লোম আস্তে আস্তে পেনিসের উপরের দিকেও ছড়িয়ে পড়ে।

আরো পড়ুন:ডিসি সম্মেলন ২৪-২৬ জানুয়ারি, উঠছে ২৪৫ প্রস্তাব

একই বইয়ের ১২২ পৃষ্ঠায় মেয়ের বিভিন্ন অঙ্গের যেভাবে বর্ণনা দেয়া হয়েছে তা আরো আপত্তিকর। বলা হয়েছে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকালে শরীরের বেশি অংশজুড়েই পরিবর্তন আসতে থাকে। মেয়ের স্তনগ্রন্থি, অর্ধনিম্নাংশ, উরু, উপরের বাহু ও নিতম্ব অঞ্চল বেশি পরিবর্তন হয়। মেয়েদের শ্রেণী দেশীয় লোম বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছানোর প্রধান লক্ষণ। প্রথম দিকে কেবল যোনিপথের চারপাশে ও উপরের দিকে হালকা ও ছোট লোম দেখা গেলেও বয়স বাড়ার সাথে সাথে লোমের বিস্তার বাড়তে থাকে এবং ঘনত্বও বাড়ে। একই সাথে মেয়ের উরুতে ও বগলেও চুল গজাতে থাকে। মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকালের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এই সময়ে তাদের দুই স্তনের মধ্যে শক্ত ও কোমল পিণ্ড দেখা যায়। স্তনের উভয় পাশেই ফুলে নরম হয়ে ওঠে। আর এটি হয় মূলত মেয়েদের স্তন অঞ্চলে মেদ সঞ্চয়ের কারণে। একই অধ্যায়ে আরো বলা হয়েছে এই সময়ে মেয়েদের যোনিপথ জরায়ু ও ডিম্বাশয়েরও পরিবর্তন এবং কাজের ধরনেও ব্যাপকতা আসে। প্রথম দিকে যোনিপথে দিয়ে সাদাস্রাব বের হয়। এর দুই বছর পর থেকে যোনিপথ দিয়ে নিয়মিতভাবে মাসে রক্ত স্রাব বের হয়। এটাকেই মেয়েদের মাসিক বা পিরিয়ড বলা হয়। বইটির ১১৯ পৃষ্ঠায় এটাও বলা হয়েছে যে ছেলেমেয়েদের এসব হরমোন সেক্স বা লিঙ্গভিত্তিক হরমোন শিক্ষাই তাদেরকে পূর্ণতার দিকে নিয়ে যাবে। একটি সময়ে ছেলে এবং মেয়েরা তাদের বাহ্যিক প্রজনন অঙ্গগুলোর বিষয়ে সচেতন হয়ে উঠবে।

ক্লাস সিক্সের বইয়ে যৌনতার এসব বিষয়ে এত বেশি খোলামেলা আলোচনাকে ভালোভাবে দেখছেন না অধিকাংশ অভিভাবক ও শিক্ষকরা। তাদের মতে ক্লাসরুমে ছেলেমেয়ের গোপন অঙ্গ বিষয়ে বিশদ এত আলোচনার কোনোই প্রয়োজন ছিল না। কয়েক বছর আগের পাঠ্যবইয়েও এসব বিষয়ে এভাবে বিস্তারিত বর্ণনা ছিল না। তাই বলে কি সে সময়ের শিক্ষার্থীদের কাছে এগুলো অজানা ছিল? বরং বেশি খোলামেলা আলোচনা হলেই বিপদের আশঙ্কা বেশি। ছেলেমেয়েরা লাজ শরম হারিয়ে ফেলে। তাদের মধ্যে বেহায়াপনা চলে আসে। অভিভাবকদের পক্ষেও তখন তাদের আর নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয় না। আর মেয়েদের কিছু বিষয় তারা তাদের মা খালা বা দাদী চাচীদের কাছ থেকেই বেশি জানতে পারে। বিশেষ করে মেয়েদের গোপন বিষয়গুলো এতবেশী খোলামেলাভাবে পাঠ্যবইয়ে আলোচনা করার প্রয়োজনই নেই।

এ দিকে পাঠ্যবইয়ে নানা ধরনের অসঙ্গতি তুলে ধরে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতারা। তারা এসব অপ্রকাশতুল্য বিষয়াদি পাঠ্যবই থেকে বাদ দেয়ারও দাবি জানিয়েছেন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব শাইখুল হাদিস গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম এ বিষয়ে বলেন, কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বেহায়াপনা বাড়াবে এমন বিষয় পাঠ্য বইয়ে থাকা কোনো মতেই উচিত নয়। একই সাথে পাঠ্যসূচি থেকে নাস্তিক্যবাদী ও বেহায়াপনার সাথে সম্পর্কিত শিক্ষা পরিহার করে সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। অবিলম্বে পাঠ্যবইয়ে বিতর্কিত অংশগুলো সংশোধন করারও দাবি জানান তিনি।

বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি ও ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুর রকীব বলেন, নতুন শিক্ষা সিলেবাসে ইসলামবিদ্বেষী শিক্ষা সংযোজন এবং ইসলামী শিক্ষা সঙ্কোচন করে ছাত্রছাত্রীদের নাস্তিক্যবাদী বানাবার ষড়যন্ত্র চলছে। ৯৫ ভাগ মুসলমানদের এই দেশে লাজ লজ্জাহীন কোনো বিষয় পাঠ্যপুস্তকে সংযোজন দেশবাসী মেনে নেবে না। এ ছাড়া কিছু বিষয় আছে যেগুলো ধর্মীয়ভাবেই গোপনে শিক্ষালাভ করতে হবে। কাজেই সব বিষয়ে এভাবে খোলামেলাভাবে শ্রেণিকক্ষে ছাত্রছাত্রীদের একত্রে একই ক্লাসরুমে আলোচনা ইসলাম ও ঈমানের বরখেলাপ।

Image Not Found
1 Comments Text

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।