৪৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান

ডেস্ক রিপোর্ট : বরগুনা সদর উপজেলায় ২৩৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এর মধ্যে ৮টি পরিত্যক্ত ও ৩৯টি বিদ্যালয়ের ভবন জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ভবনগুলো ধসে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। শ্রেণিসংকটের কারণে এর মধ্যেই ৪৭টি বিদ্যালয়ে চলছে পাঠদান।

গত এপ্রিলে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা বিদ্যালয়গুলো হলো পূর্ব গুলিশাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাহার মাহমুদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্য পাঁঠাকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব ঢলুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর বড় লবণ গোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফুলতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সরকারি কলেজসংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উত্তর কুমারখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব ভবন ১৯৯০ সাল থেকে ২০০১ সালের মধ্যে নির্মাণ করা হয়। শিক্ষক ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করায় ভবনগুলোর এমন ভগ্নদশা।

এসব বিদ্যালয় ভবন নির্মাণে অর্থায়ন করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী মন্ত্রণালয় (এলজিইডি)। ভবনগুলোর ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে। রড বেরিয়ে গেছে। বৃষ্টি হলে ছাদ চুয়ে পানি পড়ে। কক্ষের ভেতরের দেয়ালে ফাটল রয়েছে। এ ছাড়া দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, ৯১ নম্বর পূর্ব গুলিশাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর কুমড়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফুলতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাহার মাহমুদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুব ঢলুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর বড় লবণ গোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সরকারি কলেজসংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্য পাঁঠাকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ক্রোক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সরকারি কলেজসংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হামিদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পুব তেঁতুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কে লতিফ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর হেউলিবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে রড বেরিয়ে গেছে। খাম্বার ইট-সুরকি খসে পড়েছে। রড বেরিয়ে গেছে। ভবনগুলোর মেঝে দেবে গেছে। ভবনের দেয়ালে ফাটল ধরেছে। দরজা ও জানালা ভেঙে গেছে।

৯১ নম্বর পূর্ব গুলিশাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল রাজ্জাক বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০৯। ২০০৭ সালে সিডরের আঘাতে বিদ্যালয় ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কর্তৃপক্ষ ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে। কিন্তু বিকল্প কোনো ভবন না থাকায় বাধ্য হয়ে পাঠদান করতে হচ্ছে।’

বিদ্যালয়টির পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী আদুরি বলে, ছাদ মাথার ওপর ভেঙে পড়তে পারে, এমন আতঙ্কে ভোগে সে।

ক্রোক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল আলীম বলেন, বিদ্যালয়টি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। যেকোনো সময় ভবনটি ধসে পড়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তা ছাড়া জোরে বাতাস শুরু হলে ভবন ধসে পড়ার আশঙ্কায় দ্বিতীয় তলা থেকে শিক্ষার্থীদের নিচে নামিয়ে আনা হয়।

উত্তর কুমড়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পরিত্যক্ত হওয়ায় মাঠের দক্ষিণ প্রান্তে দুই কক্ষের দোচালা টিনের ঘরে পাঠদান চলছে। প্রধান শিক্ষক নিগার সুলতানা বলেন, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে তৈরি করায় কয়েক বছরের ব্যবধানে ভবনটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে।

পূর্ব তেঁতুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। দরজা-জানালা ভাঙাচোরা, মেঝে ফেটে দেবে গেছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফিরোজা বেগম বলেন, এই বিদ্যালয়টি অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোনো সময় মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০৫।

উপজেলা প্রকৌশলী শওকত হোসেন বলেন, লবণাক্ততা ও আবহাওয়া খারাপ হওয়ার কারণে অল্প সময়ের ব্যবধানে এসব ভবন পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। এ ছাড়া নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে নির্মাণ করায় ভবন পরিত্যক্ত বা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মজিবুর রহমান বলেন, পরিত্যক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয় ভবনের তালিকা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।

সূত্র : প্রথম আলো

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।