৩৪তম বিসিএস থেকে ৩ হাজার প্রাথমিক প্রধান শিক্ষক নিয়োগ

১০ম গ্রেড না ১১তম গ্রেড তা চুড়ান্ত করবে মন্ত্রনালয়

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষকের সংকট দূর করতে ৩৪তম বিসিএস থেকে ২ হাজার ৮৯৯ জন নন-ক্যাডার নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি)। ৩৫তম বিসিএসের রেজাল্ট হওয়ার আগেই এ নিয়োগ সম্পন্ন করা হবে বলে জানা গেছে। জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ৩৫তম বিসিএসের রেজাল্ট প্রকাশ হতে পারে।

hsc pic_132930
প্রধান শিক্ষক পদটি দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ায় এই নিয়োগের দায়িত্ব সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) হাতে চলে গেছে। তাই গত মার্চে ৫ হাজার ৭৯৭ জন প্রধান শিক্ষক নিয়োগের চাহিদাপত্র পিএসসিকে দেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে বিলম্ব হচ্ছিল। কারণ, নন-ক্যাডার নিয়োগে বিধিমালায় প্রার্থীদের বয়সের শর্ত রয়েছে ২১ থেকে ৩০ বছর, আর প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালায় রয়েছে ২৫ থেকে ৩৫ বছর। এছাড়া প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে পোষ্য কোটা রয়েছে, কিন্তু নন-ক্যাডার বিধিমালায় কোনো পোষ্য কোটা নেই।
সরকারি কর্মকমিশনের সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ এ প্রতিবেদককে বলেন, ৩৪তম বিসিএসের ২ হাজার ৮৯৯ নন-ক্যাডার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়ার কার্যক্রম চলছে। তাই প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালার কিছু বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তারা ইতিবাচক ভাবেই জানিয়েছেন। তবে  কোন গ্রেডে তাদের বেতন নির্ধারন হবে তা  নিয়ে রয়েছেজটিলতা।

এখন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনায় মৌলিক কোনো সমস্যা না থাকলে ৩৫তম বিসিএসের রেজাল্ট হওয়ার আগেই এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
পিএসসির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ৩৪তম বিসিএসের নন-ক্যাডার প্রার্থীরা এবার নিয়োগ না পেলে অনেকের সরকারি চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাবে। তারা আর সরকারি চাকরি করতে পারবেন না। এজন্য নন-ক্যাডারদের নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে পিএসসি শতভাগ একমত।

পিএসসির একটি সুত্র শিক্ষাবার্তাকে জানায় পিএসসি প্রধান শিক্ষকদের নিয়োগ  দিলেও  তা ১০ম গ্রেড না ১১তম গ্রেড তা চুড়ান্ত করবে মন্ত্রনালয়। তবে পিএসসি ১০ গ্রেডের  নিচে নিয়োগ দিতে পারে না।

এদিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষকের ৪৩ হাজার ও প্রধান শিক্ষকের প্রায় ২০ হাজার পদ শূন্য রয়েছে। প্রতিনিয়ত শিক্ষক অবসরে যাওয়ায় শূন্য পদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। পদোন্নতি নিয়ে জটিলতার কারণে ২০০৯ সাল থেকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। শিক্ষক সংকটের কারণেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর প্রায়দেড় কোটি শিক্ষার্থীর লেখাপড়া বিঘ্নিত হচ্ছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন খালিদ বলেন, নন-ক্যাডার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগে আর কোনো জটিলতা নেই। নীতিমালা নিয়ে পিএসসির জিজ্ঞাসার প্রেক্ষিতে আমরা জবাব দিয়েছি। আমরা বলেছি, আপনারা আপনাদের নীতিমালা অনুযায়ী নিয়োগ দিন। আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কারণ, আমাদের শিক্ষক দরকার।

হুমায়ুন খালিদ বলেন, নীতিমালা পরিবর্তন করতে গেলে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যাবে না। কারণ, নীতিমালা পরিবর্তন করতে এক থেকে দেড় বছর লাগবে। কিন্তু শিক্ষক সংকট দূর করতে দ্রুত নিয়োগ দেওয়া দরকার। পিএসসি ইচ্ছা করলেই ৩৪তম বিসিএস থেকে নন-ক্যাডারদের নিয়োগ দিতে পারে। কারণ, প্রধান শিক্ষক পদটি দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ায় এই নিয়োগের দায়িত্ব পিএসসির হাতে।

তিনি বলেন, এই মেধাবীদের নিয়োগ দেওয়া হলে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর অনেক উন্নতি হবে। নতুন পরীক্ষার মাধ্যমে নিলেও এরাই আসবে। তবে একটি পরীক্ষার সকল কার্যক্রম শেষ করতে কমপক্ষে এক বছর সময় লাগবে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে সরকারিকরণ হওয়া প্রায় ২৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৪-১৫ হাজার বিদ্যালয়েই প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষক পদে চলতি দায়িত্ব পালন করছেন। প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণের ক্ষেত্রে ৬৫ শতাংশ সহকারী শিক্ষকের মধ্য থেকে পদোন্নতি এবং ৩৫ শতাংশ নতুন করে পরীক্ষা নিয়ে পূরণ করা হয়।
২০০৯ সালে সহকারী শিক্ষকদের করা রিটের জের ধরে বন্ধ ছিল প্রধান শিক্ষক নিয়োগ। গত বছরের মার্চে ওই রিটের নিষ্পত্তির পর বাধা কেটে যায়।

কিন্তু বছর না ঘুরতেই আবারও রিটের কারণে আটকে গেছে পদোন্নতি। গত মার্চে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ নিয়ে সাবেক রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের করা একটি রিটের কারণে পদোন্নতির উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।