১৫ মাসে এইচএসসি পরীক্ষা, চাপে পরীক্ষার্থীরা

ডেস্ক | ২৫ মার্চ, ২০২৩:

জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষা নেয়ার পরিকল্পনা করেছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। এটি হলে পরীক্ষার্থীদের উচ্চমাধ্যমিক ক্লাস শুরুর পর এক বছর তিন মাসেই (১৫ মাস) এ পরীক্ষায় বসতে হচ্ছে। অথচ উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষাবর্ষ দুই বছরের।

আরো পড়ুন:ঢাবির ভর্তি পরীক্ষায় মোট আবেদন প্রায় তিন লাখ

শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকেরা বলছেন, তাড়াহুড়া করে পরীক্ষা নেয়ার পরিকল্পনায় শিক্ষার্থীরা পড়ার চাপে পড়ছেন। এতে শিখন ঘাটতি থেকে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। আবার পরীক্ষা হলেও এসব শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ভর্তি পরীক্ষা হবে আগামী বছরের এপ্রিল থেকে জুন-জুলাইয়ে। ফলে দীর্ঘ সময়জুড়ে তাদের কোচিং করতে হবে। যার খরচের বোঝা পড়বে অভিভাবকদের ঘাড়ে। তাই প্রশ্ন উঠেছে, উচ্চশিক্ষার ভর্তির সঙ্গে সমন্বয় না করে শুধু এইচএসসি পরীক্ষা আগে আগে নিয়ে কী লাভ?

অবশ্য, শিক্ষা বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ভিন্নমত। তারা বলছেন, করোনার কারণে স্বাভাবিক সময়ের মতো পরীক্ষা নেয়া যায়নি। এখন পরীক্ষা শুরুর সময় ধীরে ধীরে স্বাভাবিক সময়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।

করোনার সংক্রমণের কারণে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ থেকে টানা প্রায় দেড় বছর দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সশরীর ক্লাস বন্ধ ছিল। সে কারণে শিক্ষাপঞ্জিতে এলোমেলো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, যা এখনো স্বাভাবিক হয়নি। ফলে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতিও দূর হচ্ছে না।

গত বছর ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের একাদশ শ্রেণিতে ক্লাস শুরু হয়েছিল গত বছরের ২ মার্চ থেকে। এসব শিক্ষার্থীই এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় বসবেন। এবার পুনর্বিন্যাস করা পাঠ্যসূচিতে পরীক্ষা হলেও প্রশ্নপত্রের ধরন হবে আগের মতোই। করোনার সময় যেমন বেশি প্রশ্নপত্র থেকে কম প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছিল, এবার সেই সুবিধা নেই। মানে পাঠ্যসূচি পুনর্বিন্যাস হলেও পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হবে স্বাভাবিক সময়ের মতোই।

শিক্ষা বোর্ড-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকদের কেউ কেউ চেয়েছিলেন এ বছরের সেপ্টেম্বরে এইচএসসি পরীক্ষা নিতে। যাতে পরীক্ষার্থীদের ওপর চাপ কমে এবং পাঠ্যসূচি ভালোভাবে শেষ করা যায়। কিন্তু শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানেরা পরীক্ষা আগে আগে নেয়ার পক্ষে মত দেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে পরীক্ষা নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, স্বাভাবিক সময়েও উচ্চমাধ্যমিকে ১৮ মাসের বেশি ক্লাস হয় না। তখন পাঠ্যসূচি থাকে পূর্ণাঙ্গ। এবার হয়তো ১৫ মাসে পরীক্ষা হচ্ছে। এবার কিন্তু পাঠ্যসূচি পুনর্বিন্যাস করা, মানে পুরো পাঠ্যসূচি নয়। করোনার কারণে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এখন অনেক দেরিতে পরীক্ষা নিতে হচ্ছে। তাই পরীক্ষার সময় ধীরে ধীরে আগের সময়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছরের জুলাইয়ের ৮ থেকে ১০ তারিখের দিকে পরীক্ষা নেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এটি করলে পরীক্ষার্থীদের খুব অসুবিধা হবে না বলে তিনি মনে করেন।

গত প্রায় ১ যুগেরও ‍বেশি সময়ের প্রাকটিস হলো এসএসসি পরীক্ষা শুরু হতো ফেব্রুয়ারির শুরুতে। আর এইচএসসি পরীক্ষা এপ্রিলের শুরুতে। এ বছর জুলাইয়ে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু করলেও এই পরীক্ষার পরীক্ষার্থীদের ক্লাস হচ্ছে এক বছর দুই মাসে। কারণ, এসব পরীক্ষার্থীর নির্বাচনী পরীক্ষা হবে মে মাসে। আর নির্বাচনী পরীক্ষার পর ক্লাস হয় না। সেই হিসাবে গত বছরের মার্চে ক্লাস শুরুর সময় থেকে মে মাস পুরোটা ধরলেও ক্লাস হয় এক বছর দুই মাস।

পরীক্ষার্থীদের এভাবে চাপের মধ্যে রেখে পরীক্ষা নিয়ে বের করা হলে তাদের মধ্যে শিখন ঘাটতি থেকে যাওয়ার আশঙ্কা অনেক বাড়বে। আর এখন পরীক্ষা নিলেও এসব পরীক্ষার্থীকে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হবে। কারণ, এ বছরের উচ্চশিক্ষায় ভর্তি পরীক্ষাই মেডিকেল ছাড়া কোথাও শুরু হয়নি। সে ক্ষেত্রে আগামী বছরের উচ্চশিক্ষায় ভর্তির জন্য এসব শিক্ষার্থীকে কোচিংয়ে সময় বেশি ব্যয় করতে হবে। তাই তার পরামর্শ হলো, এ বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের আরেকটু পড়ানোর সুযোগ দিয়ে পরীক্ষা নেয়া উচিত।

সুত্র: দৈনিক শিক্ষা

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।