‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ নিয়ে কোনোদিনই তেমন মাতামাতি ছিল না তমাল-সুব্রতার জীবনে। লাল গোলাপ, নামী রেস্তোরাঁয় মৃদু আলোয় ‘ডিনারে’ ভালবাসার দিন উদযাপনও সেভাবে করতেন না। কিন্তু, মধ্য তিরিশের সুব্রতা স্বামী তমালকে গত বড়দিনের দুদিন আগে এমন উপহার দিয়েছেন যে ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ তে সেটাই আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্বামীকে বাঁচাতে নিজের একটি কিডনি দিয়েছেন স্ত্রী। সেই উপহারই হারিয়ে দিয়েছে অন্য সব কিছুকে। ২৩ ডিসেম্বর কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে। আপাতত দুজনে হাসপাতালের কাছেই একটি ঘর ভাড়া করে রয়েছেন। অন্তত তিন মাস হাসপাতালের কাছাকাছি থেকে প্রতিস্থাপন পরবর্তী প্রতিক্রিয়া সামাল দিতেই এই ব্যবস্থা।
মঙ্গলবার বিকেলে তমাল-সুব্রতা ২ বছরের দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণা-উদ্বেগের কথা বলতে গিয়ে বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু, স্ত্রীর কথা উঠতেই তমাল যেন অন্য উদ্দীপনার জগতে চলে যান। তিনি বলেন, ‘‘জীবনে এর চেয়ে বড় কোনও উপহার কী হয়!’’ সুব্রতা মৃদুভাষী। তাঁর মন্তব্য, ‘‘ভালবাসার জন্যই আলাদা কোনও দিন হয় নাকি? রোজই তা অনুভব না করলে কীসের একসঙ্গে বেঁচে থাকা!’’
শিলিগুড়ি পুরসভার ঠিকাদার তমালের বাড়ি সুর্যনগর এলাকায়। সেখানকার সমাজকল্যাণ সংস্থার সক্রিয় সদস্যও তিনি। জলপাইগুড়ির মেয়ে সুব্রতাকে বিয়ে করেছেন বছর ১৫ আগে। ওঁদের মেয়ে তুলিকা এখন ক্লাস নাইনে পড়ছে। বছর দুয়েক আগে দেখা যায়, তমালের দুটি কিডনিই প্রায় অকেজো হয়ে গিয়েছে। দক্ষিণ ভারত, দিল্লি ঘুরে কলকাতায় চিকিৎসা শুরু করান তিনি। কিন্তু, কিডনি প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা হচ্ছিল না। কারণ, প্রচুর টাকা দরকার। দিনে দিনে শরীর খারাপ হচ্ছিল।
গত বছর স্ত্রী সুব্রতা কলকাতার হাসপাতালে চিকিৎসকদের জানিয়ে দেন, তাঁর একটি কিডনি তিনি দিতে চান। সুব্রতা রক্ত বি পজিটিভ। তমালের ও নেগেটিভ। তা হলে! বিশেষজ্ঞরা জানিয়ে দেন, বিশেষ পদ্ধতিতে কিডনি প্রতিস্থাপন করা যেতে পারে। এর পরে ২৩ ডিসেম্বর কিডনি প্রতিস্থাপন হয়। তমাল জানান, তিনি সুস্থ থাকলেও তাঁর স্ত্রী কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েন। টানা চিকিৎসায় তিনি সেরে উঠেছেন।