সুযোগ হারাবে মেধাবীরা, সরকার বলছে সমতা

Image

ডেস্ক,১৪ ডিসেম্বর ২০২১ঃ
এবারই প্রথম দেশের সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেন্দ্রীয়ভাবে ডিজিটাল ভর্তি লটারির আয়োজন করছে সরকার। বুধবার বিকেল ৩টায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটে সরকারি বিদ্যালয়ের লটারি কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

আরো খবরঃ এসএসসির ফল যথা সময়ে

অন্যদিকে আগামী ১৯ ডিসেম্বর রাজধানীর নায়েমে অনুষ্ঠিত হবে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভর্তি লটারির অনুষ্ঠান। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধুমাত্র ডিজিটাল পদ্ধতির কারণে প্রথম সারির শিক্ষার্থীরা ভালো স্কুলে পড়ার সুযোগ হারাবে। যদিও সরকার বলছে, এই পদ্ধতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মেধার সমতা ফেরাবে।

সারাদেশে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী আসন রয়েছে ৮০ হাজার ১১৭টি। এখন পর্যন্ত এই আসনের বিপরীতে ৫ লাখ ৩৮ হাজার ১৫৩ শিক্ষার্থী আবেদন করেছে। ফলে প্রতি আসনে ভাগ্য পরীক্ষা দিতে হচ্ছে ১৩ শিক্ষার্থীকে। এর ফলে শুধু মেধাবী শিক্ষার্থীই নয়, দুর্বল শিক্ষার্থীরাও ভর্তি হতে পারবে ভালো স্কুলে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর জানায়, সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মিলিয়ে মোট আসন সংখ্যা ১০ লাখ। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আবেদন পড়েছে ৮ লাখের কিছু বেশি। এর মধ্যে সরকারি মাধ্যমিকে ৮০ হাজার আসনের বিপরীতে আবেদন পড়েছে ৫ লাখ ৩৮ হাজার ১৫৩টি। তবে ব্যতিক্রম চিত্র বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে। বেসরকারি বিদ্যালয়ে ৯ লাখ ৩৫ হাজার আসন থাকলেও আবেদন পড়েছে মাত্র তিন লাখ। অর্থাৎ আবেদনের চেয়ে দুই লাখ আসন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ফাঁকা থাকবে।

অধিদপ্তর বলছে, এই পদ্ধতির ফলে যেমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মেধার সমতা আসবে, তেমনি শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপও কমবে। এছাড়াও বন্ধ হবে তদবির ও ঘুষ বাণিজ্য।

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের প্রফেসর ড. মো. আব্দুল মালেক বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, সব শিক্ষার্থীর সমান সুযোগ থাকা দরকার। আবার সমমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সবার পড়ার অধিকার আছে। এটি মৌলিক অধিকার। কিন্তু আজ সমাজ বিভক্ত। যেকারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও বিভিন্ন মান গড়ে উঠেছে। কোনটাকে আমরা বলছি ভালো স্কুল, আবার কোনোটাকে বলছি ভালো স্কুল নয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পার্থক্যের সঙ্গে শিক্ষার মানের পার্থক্যও সৃষ্টি হয়েছে। সবাই মেধাবী ফলে সবারই শিক্ষার সমান সুযোগ থাকা দরকার। তা না হলে ভর্তি আর লটারি বিষয়টি একই থেকে যাবে। এক্ষেত্রে শিক্ষা খাতে বাজেটের বরাদ্দ বৃদ্ধি ও সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সমান সুযোগের কথা জানান তিনি।

অন্যদিকে গণসাক্ষরতা অভিযানের উপ-পরিচালক কে এম এনামুল হক বলেন, সব বাবা মাই মনে করেন আমি যা হতে পারিনি সন্তানকে তাই বানাবো। আবার অনেকে মনে করেন, আমার টাকা আছে। যদি সন্তানের পেছনে খরচই করতে না পারলাম তাহলে কী হলো! এ ধরনের মানসিকতা ক্ষুদে শিক্ষার্থীর জীবন বিষিয়ে তোলে। এতো অল্প বয়সে শিশুর মেধা যাচাইয়ের কিছু নেই। আন্তর্জাতিক পরিসরে যে যেই কমিউনিটির লোক তাদের বাচ্চারা সেখানেই পড়াশোনা করে। সমাজে মেধার সমতা নিশ্চিতে পরীক্ষার চেয়ে লটারি পদ্ধতিই বেশি বিজ্ঞানসম্মত।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আগামীকাল শুরু হওয়া ৪০৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি লটারি অনুষ্ঠিত হবে। ডিজিটাল লটারি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর প্রতিষ্ঠান প্রধান, অভিভাবক ও শিক্ষার্থী এই ওয়েবসাইট থেকে টেলিটকের ওয়েবসাইট থেকে তাদের নির্ধারিত আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে ফলাফল দেখতে পারবেন। নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষেত্রে ভর্তি কমিটির সভা আহবান করে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক শিক্ষার্থীদের ভর্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এর মধ্যে কিছু আত্তীকৃত বিদ্যালয় আছে যারা কেন্দ্রীয় লটারিতে অংশ নিতে পারছে না। এসব বিদ্যালয়ে পরবর্তীতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে লটারির মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে। তবে কোনো অবস্থাতেই কোন ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা যাবে না। তবে এবারই সমঝোতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় পরিবর্তন করতে পারবেন। ক্যাচমেন্ট এরিয়ার মধ্যে এক স্কুলের কোন শিক্ষার্থী অন্য স্কুলের শিক্ষার্থীর মধ্যে সমঝোতা হলে ট্রান্সফার সার্টিফিকেটের মাধ্যমে বিদ্যালয় পরিবর্তন করতে পারবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা শহরে ভিকারুননিসা, মতিঝিল আইডিয়াল এছাড়াও বেশ কিছু মাফিয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনার মান যাই হোক না কেন, তারা সেরা শিক্ষার্থীদেরকে ছেকে নিয়ে বিদ্যালয়ে ভর্তি করে। এরফলে সেখানে পড়ানো যাই হোক বা শিক্ষকের মান যেমনই হোক শিক্ষার্থীরা ভালো ফল করে। সেই বিবেচনায় আমরাও এসব প্রতিষ্ঠানকে সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি দিয়ে থাকি। তবে এই পদ্ধতি অনুসরণের ফলে চিরাচরিত ভালো প্রতিষ্ঠান চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। তারা যেমন ভালো শিক্ষার্থী পাবে, তেমনি দুর্বল শিক্ষার্থীও পবে। মেধার সমতার ভিত্তিতে তখন সেসব প্রতিষ্ঠান ভালো করলেই তাকে ভালো বলা হবে। যা আমাদেরকে একটি সুন্দর সমাজ ও সুন্দর দেশ বিনির্মাণে সহায়তা করবে।

মাউশি উপ-পরিচালক মো. আজিজ উদ্দিন এ বিষয়ে বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ভালো মানুষ তৈরি করা। ভালো দেশ ও সমাজ তৈরি করা। টেলিটকের মাধ্যমে মাত্র ১১০ টাকায় ৫টি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই অনলাইনে আবেদন করতে পেরেছে। এক্ষত্রে তাদের একটি একটি করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ঘুরতে হয়নি। ভর্তিযুদ্ধের নামে যে মানসিক চাপ থাকতো শিক্ষার্থীদের, এবার সেই চাপ থেকেও তারা মুক্ত।

তিনি বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় ঘুষবাণিজ্য ও তদবির চলতো। কিন্তু ডিজিটাল ভর্তি লটারিতে এইসব সুযোগ আর থাকবে না।

এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ ইমামুল হোসেন হোসেন বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আমাদের সময়ে যাদের স্কুলে ১৭-১৮ রোল ছিলো সে আজ সমাজে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু যার রোল ছিল এক সে পরবর্তীতে পিছিয়ে পড়েছে। আমরা চাই শিশুদের অল্প বয়সে যেন শ্রেণিবিন্যাস না করা হয়। আমরা চাই প্রত্যেকটা শিক্ষার্থীই ভালো হোক। আমাদের সব প্রতিষ্ঠানে যেন ভালো পাঠদান হয় এ বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত। শুধুমাত্র ঢাকা কলেজে নয়; বরং একটি স্ট্যান্ডার্ড সব প্রতিষ্ঠানে অনুসরণ করা উচিৎ।

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।