চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি,২৩ অক্টোবর ২০২২:
আলমডাঙ্গায় ইবির অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সুপ্রীতি দত্ত তমা হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করায় তাকে ত্যায্য ঘোষণা করেছেন তার মা বন্ধনা দত্ত।
গত বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির হয়ে তিনি তার মেয়েকে ত্যায্য ঘোষণা করেন। তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেন- ‘এখন থেকে তার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক থাকবে না।
সে তার পিতা-মাতা হিসেবে আমাদের আত্মীয়-স্বজনকে পরিচয় দিতে পারবে না। আমার পরিবার বা তার প্রতিপালনকারী মামা এবং আমার কোনো আত্মীয়-স্বজনের সাথে তার সম্পর্ক থাকবে না। আমার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি হতে বঞ্চিত হবে এবং তার কোনো কর্মকাণ্ডের জন্য আমি, আমার ভাই-বোন ও আমার কোনো আত্মীয়-স্বজন দায়ী থাকবে না।
এদিকে নিজের মেয়েকে ত্যায্য ঘোষণার পর আলমডাঙ্গা উপজেলার ক্যানেল পাড়ার মৃত শ্যামল দত্তের বিধবা স্ত্রী বন্ধনা দত্ত জানান, ‘গত পরশু ফেসবুকে দেখতে পেলাম আমার একমাত্র মেয়ে তমা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্মান্তরিত হয়েছে। সেখানে লিখেছে সে নাকি ইসলামী ওয়াজ মাহফিল শুনে এবং বই পড়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। কিন্তু আমি তার মা হয়ে বলছি, সে যা লিখেছে তা সম্পূর্ণ ভুল। সে ইসলাম ধর্মকে ভালোবেসে নয়, মুসাফ নামের এক মুসলিম ছেলেকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে। যে কারণে সে বাধ্য হয়ে ধর্মান্তরিত হয়েছে।’
তিনি জানান, ‘আমি এক হতভাগ্য বিধবা নারী। আমার প্রথম স্বামী স্ট্রোক করে মারা যায়, যখন আমার একমাত্র মেয়ে সুপ্রীতি দত্ত তমার বয়স মাত্র দুই বছর। মেয়ের ইচ্ছা অনুযায়ী মেয়ের বাবার অভাব পূরণ করতে ২য় বার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। মেয়ের কথা ভেবে ২য় বার সন্তান নেওয়ার কথা ভাবিনি কখনো। এক মেয়ে এবং স্বামী নিয়ে খুব সুখের সংসার ছিল আমার। কিন্তু সুখ আমার কপালে বেশিদিন সইলো না। ২য় স্বামীও ক্যান্সারে আক্রান্ত হলেন। আমার ভাইদের সাহায্যে ভারতের ভেলোরে সিএসি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসা করায়। কিন্তু আমার স্বামীকে বাঁচাতে পারিনি।’
বন্ধনা দত্ত জানান, ‘দুই দুই বার স্বামী হারিয়ে বেঁচে থাকার আশা হয়ত ছেড়েই দিতাম, যদি না আমার মেয়েটা থাকত। মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে নতুন করে আবার বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম।
ভাইদের সহযোগিতায় আমার স্বামীর রেখে যাওয়া দোকানটা নতুন করে চালু করলাম। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে টুকটাক করে আমি টাকা উপার্জন করেছি মেয়েকে মানুষ করার জন্য। তমা খুব মেধাবী ছাত্রী ছিল। ও ছিল আমার এবং আমার ভাইদের গর্ব।
খুব স্বপ্ন ছিল মেয়ে বড় হয়ে একজন বড় সরকারি অফিসার হবে, আর আমাকে সবাই বলবে আমি একজন সফল জননী। যিনি স্বামী হারিয়েও বুকে পাথর চেপে মেয়েকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। মেয়ে ইবিতে অর্থনীতিতে ভর্তি হলো। মেয়েকে বাবা আর মায়ের ভালোবাসা দিয়ে মানুষ করার চেষ্টা করেছি। বাবার অভাব বুঝতে দেইনি।
শুধু আমি না, ওর মামার বাড়ির প্রত্যেকে খুব ভালোবাসতো ওকে। এত ভালোবাসা খুব কম মেয়েই পেয়ে থাকে। নিজে কষ্ট করলেও কোনোদিন তমাকে কোনো অভাব বুঝতে দেইনি। দেখতে দেখতে মেয়ের পড়ালেখা শেষের দিকে চলে এলো।
মেয়ে আমার ফাইনাল ইয়ারে উঠে গেল। খুব আনন্দ হতো এই ভেবে যে আমার তমা স্বপ্ন পূরণের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। কিন্তু গত ১৮ অক্টোবর মঙ্গলবার সকালে তমা আমাকে কল দিয়ে জানায় বাড়ি আসবে। কিন্তু সময়মতো বাড়ি না আসায় আমি বেশ ভয় পেয়ে যাই এবং আমার ভাইয়ের পরামর্শ অনুযায়ী থানায় জিডি করি। হঠাৎ করে তমা আমাকে কল দিয়ে জানায় সে মুসাফ নামের একজনকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে।
পরদিন ফেসবুকে দেখতে পাই আমার মেয়ে ধর্মান্তরিত হয়েছে এবং এই সংবাদ ভাইরাল হয়েছে। আমি একটা বিরাট ধাক্কা খাই। আমার মেয়ে ছিল আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। সেই অবলম্বন আজকে আর আমার নেই। সারা দেশবাসীর কাছে আমার প্রশ্ন আমি কি আমার মেয়েকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে ভুল করেছি?
আমার মেয়েকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করে আমি কি ভুল করেছি? আমার ভাই-বোনদের সম্মতিতে সুস্থ মস্তিষ্কে আজ থেকে আমার মেয়ের পরিচয় আমি মুছে দিলাম। আমি আদালতসহ সারা দুনিয়ার সামনে সুপ্রীতি দত্ত তমাকে ত্যাজ্য কন্যা ঘোষণা করলাম।’
উল্লেখ্য, গত বুধবার ঝিনাইদহ আদালতের আইনজীবী আল মামুনের চেম্বারে ইসলামী শরিয়ত মেনে কালেমা পড়ে মুলমান হন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের শ্যামল দত্তের মেয়ে সুপ্রীতি। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পরে তাঁর নাম রাখা হয় ত্বহিরা তাসনিম আয়াত। তাঁকে ইসলাম ধর্মের রীতি-নীতি মেনে একজন আলেমের নিকট কালেমা পড়িয়ে মুসলমান করা হয়। পরে নোটারি পাবলিকের হলফনামায় স্বাক্ষর করেন তিনি।