শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ২০১৭ সালে ১৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। তবে যে উদ্দেশ্যে এই সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছে দীর্ঘ প্রায় সাত বছরেও সেটা প্রতিফলিত হয়নি বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। অধিভুক্ত এই কলেজগুলোর শিক্ষক সংকট, ক্লাসরুম সংকট, আবাসন সংকট, পরিবহণ সংকট, ল্যাব সংকটসহ এসব সংকট সমাধানের দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ নেয়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও শিক্ষার্থীদের শুধু পরীক্ষা আর সনদ প্রদান করে আসছে। এসব সমস্যার সমাধানে ইতিমধ্যে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা সাত কলেজ নিয়ে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি তুলেছেন। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের স্বার্থ বিবেচনা করে যেভাবে সাত কলেজ নিয়ে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গঠন করা যেতে পারে-
বিশ্ববিদ্যালয় আইন
‘সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ বা যে নামে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গঠন করা হবে সেই নামে নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় আইন তৈরি করা। এখন যেহেতু সংসদীয় সরকার নেই, তাই সংসদীয় সরকার গঠিত হলে এই আইন সংসদে পাসের ব্যবস্থা করা। যেমনটা করা হয়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ক্ষেত্রে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম ২০০৮ সালের অক্টোবরে শুরু হলেও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংসদে পাশ হয়েছে ২০০৯ সালের এপ্রিলে।
কমিশন গঠন
নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সাত কলেজ প্রশাসন এবং শিক্ষাবিদদের নিয়ে একটি কমিশন গঠন করা যেতে পারে। কমিশন সাত কলেজকে কীভাবে ঢাবি থেকে বের করে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নিয়ে আসা হবে এবং কীভাবে এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা যাবে এটি নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা তৈরি করে সুপারিশ প্রদান করবে। কমিশন সাত কলেজের সকল স্টেক হোল্ডার সাত কলেজে বর্তমানে কর্মরত শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তাসহ সকলের স্বার্থ বিবেচনা করে সুপারিশ প্রদান করবে।
বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা
সাত কলেজের যেকোনো একটি কলেজের প্রশাসনিক ভবনকে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন হিসেবে বিবেচনা করে কাজ পরিচালনা করা যেতে পারে। এছাড়াও সাত কলেজের বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থীর কার্যক্রম পরিচালনায় রেজিস্ট্রার দপ্তর, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরসহ সকল দপ্তরে পর্যাপ্ত সংখ্যক কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব কর্মকর্তা নিয়োগ নিশ্চিত করবে সাত কলেজের সংস্কারে গঠিত কমিশন।
সাত কলেজ শিক্ষক প্রসঙ্গ
সাত কলেজের কর্মরত শিক্ষকদের সরাসরি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ প্রদান অথবা প্রেষণে নিয়োগ প্রদান করা যেতে পারে। জগন্নাথ কলেজকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের সময় জগন্নাথ কলেজের ২২০ জন শিক্ষককে প্রেষণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এছাড়াও শিক্ষক সংকট দূরীকরণে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী নতুন শিক্ষক নিয়োগ প্রদান করতে হবে।
ইন্টারমিডিয়েট শিক্ষার্থীদের প্রসঙ্গ
সাত কলেজের যেই পাঁচটি কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পর্যায়ের শিক্ষার্থী রয়েছেন তাদেরকে বুয়েট, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোর ইন্টারমিডিয়েটের শিক্ষার্থীদের মতো পরিচালনা করা যেতে পারে। অথবা বর্তমানের মতো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনও রাখা যেতে পারে।
সাত কলেজের অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের প্রসঙ্গ
সাত কলেজে অধ্যয়নরত স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীরা যেন কোনো ধরনের সেশনজটে না পড়েন সে বিষয় বিবেচনা করা। এক্ষেত্রে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গ রূপে শুরু হওয়া পর্যন্ত সাত কলেজের এসব শিক্ষার্থীদের কার্যক্রম পরিচালনা করে যাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসা হবে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের। এছাড়া যারা এরমধ্যে পাস করে বের হয়ে যাবে তাদেরও সনদ প্রদান করবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আর এসব বিষয় নিশ্চিত করবে সাত কলেজের সংস্কারে গঠিত কমিশন।
লেখক: সাবেক শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী, ঢাকা কলেজ
ই-মেইল: [email protected]