সর্বজনীন পেনশন: ১০ বছরের কম চাঁদা দিলে সেই টাকাও ফেরত ৬১ বছর বয়সে

Image

দেশে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালু হয়েছে প্রায় দুই সপ্তাহ আগে। দেশের মানুষের পাশাপাশি বিদেশে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরাও এতে অংশ নিচ্ছেন। ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী ব্যক্তিরা এই পেনশন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। বিশেষ ব্যবস্থায় পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিরাও সুযোগ পাবেন। ৬১ বছর বয়স থেকে প্রতি মাসে পেনশন পেতে হলে কমপক্ষে ১০ বছর নির্ধারিত পরিমাণে চাঁদা দেওয়া বাধ্যতামূলক।

এমন প্রেক্ষাপটে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসছে, পেনশন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে কেউ যদি আর্থিক সংকট বা অন্য কোনো কারণে ১০ বছর চাঁদা দিতে না পারেন, তাহলে কী হবে? কিংবা চাঁদাদাতা যদি মারা যান, তাহলে কি তাঁর জমাকৃত অর্থ ফেরত মিলবে?

আরো পড়ুন: সর্বজনীন পেনশন রেজিস্ট্রেশন করবেন যেভাবে

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান কবিরুল ইজদানী খান  বলেন, কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা না দিলে মাসিক পেনশন পাওয়া যাবে না। যাঁরা ১০ বছরের কম চাঁদা দেবেন, তাঁদের জমাকৃত টাকাও ফেরত পাবেন ৬০ বছর বয়সের পর। তবে ২, ৩ কিংবা যত বছর চাঁদা দেবেন, তার সঙ্গে মুনাফা যোগ করেই ফেরত দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

আরো পড়ুন: যেভাবে সর্বজনীন পেনশনে অংশ নিবেন

ধরুন, আপনার বয়স এখন ৩০ বছর। বেসরকারি চাকরি করছেন। আপনি সর্বজনীন পেনশনের প্রগতি কর্মসূচি বা স্কিমে নিবন্ধন করে প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দেওয়া শুরু করলেন। এভাবে টানা পাঁচ বছর চাঁদা দেওয়ার পর হঠাৎ আর্থিক সংকট বা অন্য কোনো পারিবারিক কারণে আপনি আর পেনশনের চাঁদা দিলেন না। চাঁদা দেওয়া একেবারেই বন্ধ করে দিলেন। অথচ পাঁচ বছরে আপনি কিন্তু তিন লাখ টাকা জমা দিয়ে ফেলেছেন। জমা হওয়া টাকার অঙ্কটা কিন্তু একেবারে কম নয়। ব্যক্তিগত কিংবা পারিবারিক প্রয়োজনে টাকাটি আপনি তুলতে চাচ্ছেন। কিন্তু সেই টাকা পেতে আপনাকে ২৫ বছর অপেক্ষা করতে হবে। তারপর আপনি মুনাফাসহ সেই টাকা এককালীন ফেরত পাবেন। সর্বজনীন পেনশনের বর্তমানের নিয়ম অনুযায়ী, একজন চাঁদাদাতার ৬০ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার পরই কেবল টাকা ফেরত পাবেন।

অবশ্য এ নিয়মের একটি ব্যক্তিক্রম আছে। সেটি হচ্ছে, কোনো চাঁদাদাতা যদি ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার পূর্বে মারা যান। চাঁদাদাতা মারা যাওয়ার পরপরই তাঁর নমিনিকে জমাকৃত অর্থের সঙ্গে মুনাফা যোগ করে পরিশোধ করা হবে।

এমন নিয়মের বিষয়ে কবিরুল ইজদানী খান বলেন, ‘পেনশনের ধারণার সঙ্গে সম্পর্ক রেখে নিয়মকানুনগুলো তৈরি করা হয়েছে। ব্যাংকের ডিপিএস ও এফডিআর কিংবা সঞ্চয়পত্র নির্ধারিত মেয়াদের আগে নগদায়ন করা যায়। কিন্তু সর্বজনীন পেনশন হচ্ছে মানুষের অবসরকালের আর্থিক নিরাপত্তা। ১০ বছরের কম চাঁদা দিলে ৬০ বছর পর মাসিক পেনশন পাওয়া যাবে না। তাই গ্রাহকদের নিরুৎসাহিত করতে এ নিয়মে আমরা কঠোর হয়েছি।’

দেশের চার শ্রেণির প্রায় ১০ কোটি মানুষের কথা বিবেচনায় রেখে চালু করা হয়েছে সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থা। শুরুতে পেনশন-ব্যবস্থায় রয়েছে চারটি আলাদা স্কিম—প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা। এর মধ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য প্রবাস স্কিম; বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদের জন্য প্রগতি; রিকশাচালক, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি ইত্যাদি স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য সুরক্ষা এবং নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সমতা স্কিম। গত ১৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।