সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে একযোগে আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। গতকাল বুধবার এ আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আগামী সপ্তাহে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি সর্বজনীন পেনশন স্কিমের বিরুদ্ধে বিবৃতি দেবেন। এছাড়া আসন্ন রমজানের ঈদের পর র্যালি, মানববন্ধন এবং কর্মবিরতির মতো ঘোষণা আসবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা অনেক আগেই প্রত্যাখান করেছে। সরকার এটি প্রত্যাখ্যান না করলে আমরা কর্মবিরতির মতো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হব।
জানা গেছে, আগামী ১ জুলাই বা তার পরে রাষ্ট্রায়ত্ত-স্বায়ত্তশাসিত ও সমজাতীয় প্রতিষ্ঠানে যোগ দেওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনার আওতায় আসবেন। তারা বিদ্যমান পেনশনের বদলে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির ‘প্রত্যয়’ স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হবেন। গত বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘মূল বেতনের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা– এ দুয়ের মধ্যে যেটি কম, সংশ্লিষ্ট সংস্থা তা চাকরিজীবীর বেতন থেকে কেটে রাখবে এবং সমপরিমাণ অর্থ সংস্থা দেবে। দুই অঙ্ক একত্রে চাকরিজীবীর পেনশন আইডির (পরিচয় নম্বর) বিপরীতে সর্বজনীন পেনশন তহবিলে জমা করবে। যেদিন প্রতি মাসের বেতন দেওয়া হয়, তার পরের কর্মদিবসের মধ্যেই কাজটি করতে হবে। এ জমা অর্থের পরিমাণ ও মেয়াদের ভিত্তিতে অবসরকালীন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী পেনশন ভোগ করবেন।’
নতুন এ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়েছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তারা বলছেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সব মিলিয়ে শিক্ষক রয়েছেন প্রায় ১৬ হাজার। কর্মকর্তা মিলিয়ে এ সংখ্যা ৩০ হাজারের বেশি। কর্মচারী ধরলে সব মিলিয়ে এ সংখ্যা চার লাখে দাঁড়াবে। অথচ সরকারি অন্যান্য চাকরিজীবীর সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি। তবে তাদের ক্ষেত্রে আগের নিয়মেই পেনশন ব্যবস্থা চালু রাখা হয়েছে।
নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন শাখার এক শিক্ষক বলেন, সরকারের এ সিদ্ধান্ত সর্বজনীন হয়নি। পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সংখ্যা সব মিলিয়ে ১৭ লাখ। তাদের সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনার মধ্যে আনা হয়নি। অথচ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে এর আওতায় আনা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা না হলে শিক্ষকরা রাস্তায় নেমে আসবেন।
এ বিষয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, পেনশন ব্যবস্থা নিয়ে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা প্রত্যাহার করতে হবে। সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। এ বিষয়ে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করা হবে।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, এই সর্বজনীন পেনশন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে হতাশা ও অসন্তুষ্টি সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রজ্ঞাপন কার্যকর হলে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা চরম বৈষম্যের শিকার হবেন।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর কবির বলেন, সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্ত অগ্রহণযোগ্য ও একচোখা। যদি এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না হয় তাহলে সামনে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে।