সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসছে ৪০ হাজার কিন্ডারগার্টেন

Image

নিজস্ব প্রতিবেদক , ২৮ জুলাই, ২০২২

সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসছে দেশের ৪০ হাজার কিন্ডারগার্টেন। আগামী শিক্ষাবর্ষে নতুন পাঠ্যপুস্তক বিতরণ থেকে শুরু করে সহায়ক বই পাঠ্য করতেও সরকারের নির্দেশনা মানতে হবে এসব প্রতিষ্ঠানকে। ব্যক্তি মালিকানায় গড়ে ওঠা শহর কিংবা গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কয়েক হাজার কিন্ডারগার্টেন এখনো সরকারের কোনো নিয়মনীতিরই তোয়াক্কা করছে না। ইচ্ছেমতো কারিকুলাম, অতিরিক্ত বই পাঠ্য করা, এমনকি কোমলমতি শিশুদের ওজনের চেয়েও বেশি ওজনের বই ক্লাসে নিয়ে এসে পড়ানো থেকে শুরু করে নানা অসঙ্গতির অভিযোগ রয়েছে কিন্ডারগার্ডেন মালিক ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। এবার এসব অনিয়ম দূর করতে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে বেশ কিছু বিষয়ের নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছে সরকার।

আরো পড়ুনঃ প্রাথমিক শিক্ষকরা যেভাবে বদলির আবেদন করবেন

শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা জানান, কিন্ডারগার্টেনগুলো নিজস্বভাবে বোর্ড বইয়ের বাইরেও বেশ কিছু বই পাঠ্য করে শিক্ষার্থীদের পড়তে বাধ্য করে। সহজ কথায় এই বইগুলোকে সহায়ক বই হিসেবেই পাঠ্য করে তারা। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের পাঠপরিকল্পনা, পরীক্ষা পদ্ধতি, মূল্যায়নের ধরনসহ বেশ কিছু বিষয়ে কিন্ডারগার্টেনের মালিকরা বা পরিচালকরা নিজেদের মতো করেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। কিন্তু সরকারের সিদ্ধান্ত হচ্ছে এখন থেকে কিন্ডারগার্ডেন স্কুলগুলোকে শুধু বিনামূল্যের পাঠ্যবই সরবরাহই করবে না বরং এর সাথে পাঠ্যসূচি তৈরি ও কারিকুলাম অনুযায়ী পাঠদানেও বাধ্য করা হবে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে।

এসব বিষয়ে গতকাল সচিবালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো: আমিনুল ইসলাম খান বলেছেন, দেশে এই মুহূর্তে যত প্রাইভেট কিন্ডারগার্টেন আছে, বেসরকারি প্রাথমিক আছে এবং অন্যান্য স্কুল আছে তার সবই একই নিয়মে পরিচালনা করতে চাই। আমরা চাই একীভূত শিক্ষানীতির আলোকে একই বই, একই কারিকুলাম বাস্তবায়ন করতে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, শিশুদের ওপর কম বই চাপানো। প্রধানমন্ত্রী সব সময়ই এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। প্রধানমন্ত্রী নিজেও সব সময়ই অত্যন্ত শিশুবান্ধব। আমরা নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, এখন থেকে বিভিন্ন কিন্ডারগার্টেন বা বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেন ভিন্ন বই, ভিন্ন ছড়া, রাইমস বা সরকারের নির্ধারিত কারিকুলামের বাইরের কোনো বই যাতে পড়ানো না হয়।

সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম আরো বলেন, শিশুদের ১০-১২ বছর পর্যন্ত মস্তিষ্ক বর্ধনশীল। সেহেতু আমরা তাদের এমন কোনো চাপে বা এমন কোনো বিষয়ের মধ্যে ফেলতে চাই না, এমনকি পৃথক ডিজিটাল ডিভাইস হাতে ব্যবহার করাও নিরুৎসাহিত করছি। তবে বাসায় স্মার্ট টেলিভিশন, কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারবে। তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত এটা করতে চাই না। কিন্ডারগার্টেন মালিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে কিন্ডারগার্টেনে ভিন্ন সিলেবাসে পড়ানো যাবে না। প্রয়োজনে আমরা কিন্ডারগার্টেন মালিক বা পরিচালকদের সাথে বসব, আলাপ-আলোচনা করব। সব প্রতিষ্ঠানে একই বিষয়ে একইভাবে যেন পড়ানো হয়।

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মো: মিজানুর রহমান সরকার গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, দেশের সব কিন্ডারগার্টেনই সরকারের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। সময়ে সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে যেসব নির্দেশনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয় আমরা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হয়েও সব বিষয়ে সরকারের নির্দেশনা প্রতিপালন করে আসছি। কাজেই নতুন করে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করার আর কী আছে? আমরা সরকারের নির্দেশনা সব সময়েই মেনে আসছি এবং মানতে বাধ্যও। তবে সরকারের পক্ষ থেকে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে নতুন যে কারিকুলাম বাস্তবাস্তবায়নের নির্দেশনা আসছে আমরাও তার বাইরে থাকব না। তবে এ ক্ষেত্রে আমরা একটি অনুরোধই করব, সরকার যেন কিন্ডারগার্টেন মালিকদের সুবিধা-অসুবিধাও বিবেচনায় রাখে।

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।