নিজস্ব প্রতিবেদক: মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে না পারলেও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। ফলে এখন থেকে পরীক্ষার ফি, ক্লাস ফি ও বিবিধ ব্যয়ের নামে বাড়তি অর্থ পরিশোধ করতে হবে সব শিশু শিক্ষার্থীকে। এদিকে সরকারি প্রাথমিকে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফি বাড়লেও লাভ হয়নি বিদ্যালয়ের।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর কর্তৃক সম্প্রতি পরীক্ষার ফি বাড়ানো সংক্রান্ত এক পরিপত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
তথ্য মতে, সারাদেশের সরকারি প্রাথমিকের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক। প্রথম শ্রেণির একজন পরীক্ষার্থীকে আগে যেখানে প্রথম সাময়িক পরীক্ষার জন্য ৫ টাকা ফি দিলেই হতো, এখন সেই একই পরীক্ষায় ফি দিতে হবে ১০টাকা। বছরে তিনটি পরীক্ষার জন্য প্রথম শ্রেণির পরীক্ষার্থীকে মোট গুণতে হবে ৩০ টাকা।
একইভাবে অন্য শ্রেণিতেও পরীক্ষার ফি বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া আগে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে একই হারে পরীক্ষার ফি নেয়া হলেও এবার থেকে এই দুই শ্রেণিতে আলাদা হারে পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।৪র্থ শ্রেণিতে ৩০ টাকা এবং ৫ম ৩৫ টাকা।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সম্প্রতি পরীক্ষার ফি বাড়ানো সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করে। পরিপত্রটি ইতোমধ্যেই মাঠপর্যায়ের প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, পরীক্ষার ফি পরীক্ষা খাতে খরচ করার পর উদ্বৃত্ত থাকলে তা দিয়ে বিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার ও শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীর পুরস্কারের কল্যাণে খরচ করা যাবে।
এতে আরও বলা হয়েছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় সাময়িক এবং বার্ষিক পরীক্ষা নেয়ার জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রধান করে ছয় সদস্যের একটি পরীক্ষা কমিটি গঠন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া পরীক্ষার ফি’র হিসাব ব্যাংকের মাধ্যমে সংরক্ষণ করার পাশাপাশি স্কুলেও আলাদা নথি রাখতে হবে।
এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, প্রতিনিয়ত সব কিছুর খরচ বেড়ে গেছে। এ কারণে স্কুলের খরচ কিছুটা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আগে এক পাতার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন হতো। এখন যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করতে ৮/৯ পৃষ্ঠা লাগে। ফলে আগে যে হারে পরীক্ষার ফি নেয়া হতো তাতে এখনকার প্রশ্নপত্র প্রণয়নের খরচ মেটানো যাচ্ছে না। এ নিয়ে শিক্ষকরা পরীক্ষা ফি বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এরপর মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পরীক্ষা ফি বাড়ানো হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর থেকে জারি করা পরিপত্রে বলা হয়েছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণিতে প্রথম সাময়িক পরীক্ষার ফি ১০ টাকা। উত্তরপত্র তৈরিসহ বিবিধ খরচ হিসেবে শিক্ষার্থী পরীক্ষার ফি’র সঙ্গে আরো ৬ টাকা এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসে প্রশ্নপত্র ছাপানোর জন্য দিতে হবে ৪ টাকা।
এ বিষয়ে প্রাথমিক প্রধান শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রিয় সিনিয়ার যুগ্ন সাধারন সম্পাদক স্বরুপ দাস বলেন, আগে প্রশ্নপত্র বাবদ ফি দিতে হত ৩ টাকা হারে। তা বেড়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসকে দিতে হবে ৪/৬/৭/৮/১০ টাকা হারে। আগে পঞ্চম শ্রেণির পরীক্ষার ফি ২০ টাকা নির্ধারন ছিল। সেখান থেকে ৩ টাকা দিতে হত। অর্থাৎ ১৭ টাকা বিদ্যালয়ে থাকত । এখন থাকবে ২৫ টাকা।
এদিকে উপজেলা শিক্ষা অফিসে ৩ টাকা হারে প্রশ্ন ও অনান্য খরচ বাবদ দিতে হত। এখন দিতে হবে ১০ টাকা হারে। বিধায় লাভ হয়েছে উপজেলা শিক্ষা অফিসার সহ অনান্যদের। বিদ্যালয়ের কোন লাভ হয়নি। অথাৎ আমার বিদ্যালয়ে এখন ৫০০ টাকা দিলেই প্রশ্ন পেতাম। কিন্তু ১০০০ টাকার বেশি দিতে হবে।
প্রধান শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রিয় সিনিয়ার যুগ্ন সাধারন সম্পাদক রঞ্জিত ভট্রাচার্য বলেন আগে যেভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন শিক্ষক সমিতি করত এখনও ঠিক সেভাবে উপজেলা শিক্ষা অফিসের সাথে প্রধান শিক্ষক সমিতির সমন্বয় করে প্রশ্নপত্র ছাপানোর দাবী জানান।