ডেস্ক রিপোর্ট : মাসিক ৭০০ টাকার চিকিৎসা ভাতা দেয়ার বর্তমান ব্যবস্থার পরিবর্তে সরকারি কর্মচারীদের আরও বড় সুবিধার যৌথ স্বাস্থ্য বীমার অধীনে আনার কথা ভাবছে সরকার। বিদ্যমান যৌথ স্বাস্থ্য বীমার চাঁদা ৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০০ টাকা করার কথাও ভাবা হচ্ছে। বর্তমান চিকিৎসা ভাতা ও বর্তমান স্বাস্থ্য বীমাকে একীভূত করে নতুন সুবিধার যৌথ স্বাস্থ্য বীমা চালু করা গেলে একজন কর্মচারী বছরে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকার চিকিৎসা সুবিধা পেতে পারেন। তবে নতুন পরিকল্পনায় এ দুটি পৃথক সুবিধা রাখা হবে, নাকি একীভূত করা হবে—তা নিয়ে পর্যালোচনা ও সুবিধাভোগীদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
সরকারের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, নতুন আরেকটি বেতনক্রম ঘোষণার আগেই সরকারি কর্মচারীদের বিদ্যমান সুযোগ সুবিধা কাঠামোয় বড় ধরনের সংস্কারের উদ্দেশ্য নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে সরকার। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সুবিধাকেই প্রথম বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। বিবেচনায় থাকছে গৃহঋণ ও গাড়ি কেনার ঋণ সুবিধাও।
প্রসঙ্গত, বিদ্যমান বেতনক্রমের সঙ্গে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য মাসিক ৭০০ টাকা করে চিকিৎসা ভাতা দেয়া হয়। বস্তুত এ টাকায় একটি পরিবারের চিকিৎসা সুবিধা খুব সামান্যই মেটানো সম্ভব। এ বাস্তবতাকে সামনে রেখে সরকার ভাবছে কীভাবে সরকারি চাকরিজীবীদের চিকিৎসা সুবিধা বাড়ানো যায়।
সূত্র জানায়, সরকারের দেয় ৭০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা যৌথ স্বাস্থ্য বীমার বিপরীতে প্রিমিয়াম দাবি হিসাবে পরিশোধ করা হবে। এতে বছরে একজন চাকরিজীবী অন্তত এক লাখ টাকার চিকিৎসা সুবিধা পাবেন। তবে এক্ষেত্রে কিছু শর্ত নির্ধারণ করে দেয়া হতে পারে। যেমন, এই অর্থ নেয়ার প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে চিকিৎসার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বেগম ইসমাত আরা সাদেক বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা না করে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে না। সার্বিকভাবে কর্মচারীদের জন্য হিতকর সিদ্ধান্ত গ্রহণে সরকার সম্পূর্ণ আন্তরিক এবং সেক্ষেত্রে কালক্ষেপণও করা হবে না।
অন্যদিকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বর্তমানে যে যৌথ স্বাস্থ্য বীমা চালু আছে তাতে ৫০ টাকা করে চাঁদা নেয় সরকার। কর্মচারীদের বেতন দেয়ার সময় এ টাকা কেটে রাখা হয়। নতুন যৌথ স্বাস্থ্য বীমা চালুর ক্ষেত্রে চিকিৎসা ভাতা ও যৌথ বীমা কর্মসূচিকে একীভূত করা হলে কর্মচারীদের দেয় ৭০০ টাকার চিকিৎসা ভাতার সঙ্গে ৫০ টাকা বীমার চাঁদার পরিবর্তে আরও ১৫০ টাকা বাড়িয়ে ২০০ টাকা করা হতে পারে। এই দুই খাতের টাকা এক করে প্রিমিয়াম দেয়া হলে এর পরিমাণ দাঁড়াবে ৯০০ টাকা। আর ৯০০ টাকা প্রিমিয়াম দেয়া হলে একজন কর্মচারী বছরে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা সুবিধা পেতে পারেন।
বর্তমানে চাকরিরত অবস্থায় কারো মৃত্যু হলে তার উত্তরাধিকারীকে বিদ্যমান যৌথ স্বাস্থ্য বীমার খাত থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা দেয়া হয়। যৌথ বীমা ব্যবস্থার সংস্কার করা হলে এ টাকার পরিমাণ দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ বেড়ে যাবে। আর এক্ষেত্রে সরকারকে অতিরিক্ত অর্থের যোগান দিতে হবে না।
গৃহঋণ ও গাড়ির ঋণ:বর্তমানে সরকারের যুগ্ম সচিব এবং তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদের গাড়ি কেনার জন্য এককালীন ২০ লাখ টাকা ঋণ দেয়া হয়। কিন্তু সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পর্যন্ত কর্মকর্তাদের জন্য এই ঋণের পরিমাণ মোটরসাইকেলের জন্য ৩৫ হাজার টাকা এবং গাড়ির জন্য ১ লাখ ২০ টাকা।
কর্মকর্তারা বলছেন, এটি অত্যন্ত হাস্যকর ও লজ্জাকর। এই টাকা দিয়ে মোটরসাইকেল হয় না। আর ১ লাখ ২০ টাকা দিয়ে কোন কোন গাড়ির সবচেয়ে কমদামি যন্ত্রাংশ কেনা যেতে পারে।
অপরদিকে গৃহঋণ বাবদ বর্তমানে দেয়া হয় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে ছোটখাট টিনের বাড়ি তৈরিও সম্ভব নয়। এর সংস্কার জরুরি বলে মনে করেন সরকারি চাকরিজীবীরা। তবে এসব নিয়ে এক্ষণি সিদ্ধান্ত হচ্ছে না বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সূত্রে জানা গেছে।ইত্তেফাক