নিজস্ব প্রতিবেদক | ২০ এপ্রিল, ২০২১
লকডাউনের মধ্যে রাজধানীতে পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট ও নারী চিকিৎসকের বাগবিতণ্ডার ঘটনায় দুই পেশাজীবী সংগঠনের পাল্টাপাল্টি বিবৃতিতে উষ্মা প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন।
আরো খবর:
দুই নারী সঙ্গীর বিষয়ে পুলিশকে যা বললেন মামুনুল
আদালত বলেছেন, ওই ঘটনায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাল্টাপাল্টি বিবৃতি দেয়া সমীচীন হয়নি। তাদের এমন আচরণ অনাকাঙ্ক্ষিত। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে এমন আচরণ কাম্য নয়।
১৮ এপ্রিল রাজধানীর নিউ এ্যালিফেন্ট রোডের একটি চেকপোস্টে পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট ও নারী চিকিৎসকের বাগবিতণ্ডার এ অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। ফেসবুকে ইতোমধ্যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে।
চেকপোস্টে আইডি কার্ড দেখতে চাওয়া হলে চিকিৎসক আইডি প্রদর্শন করতে পারেন নি। উল্টো বাগবিতন্ডায় জড়িয়ে পরেন তিনি। নিজেকে বীর বিক্রমের কন্যাও দাবি করেন। তাকে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সাংবাদিকদের কাছে। উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা ও ম্যাজিস্ট্রেট তখন বলেন, ‘আপনাকে হয়রানি করা হচ্ছে না। আপনাকে তো খারাপ কিছু বলা হয়নি। আইডি কার্ড চাওয়া হয়েছে। আপনি এ রকম ব্যবহার করছেন কেন? আমরা তো আইনের কাজই করছি।’
এ পর্যায়ে গাড়িতে উঠে পরেন চিকিৎসক। তখন আবারও উপস্থিত ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে বাগবিতন্ডায় জড়ান তিনি। এসময় তিনি ডাক্তারদের আন্দোলনের ভয় দেখান পুলিশ সদস্যদের। সাংবাদিকদের কাছে নালিশ করেন ওই চিকিৎসক। মোবাইল ফোনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো: জাকির হোসেনকে যুক্ত করে কথা বলার জন্য ফোনটি ধরিয়ে দেন ঝগড়ারত পুলিশ সদস্যসের হাতেেই।
এসময় উপস্থিত একজন সাংবাদিককে ওই চিকিৎসক বলেন, ‘সাংবাদিক ভাই শুনেন, দেখেন ডাক্তারদের সাথে কি করতেসে এই হারামজাদা পুলিশ।’ এসময় ডাক্তার হয়রানি বন্ধ করতে হবে বলেও কয়েকবার চিৎকার করেন ওই চিকিৎসক।
এসময় পুলিশ সদস্যরা বলেন, ‘আপনি আমাদের তুই তুকারি করতে পারেন না।’
এসময় ওই নারী চিকিৎসক পুলিশের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলেন, ‘এই শোন আমি মেডিকেলে চান্স পাইছি বলেই আমি ডাক্তার, তুই চান্স পাসনাই বলেই তু্ই পুলিশ। আমি ডাক্তার, ডাক্তার, ডাক্তার।’ আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সহযোগী অধ্যাপক, যুগ্মসচিব লেভেলের ডাক্তার। আমি ডাক্তারদের নেতা।
এসময় পুলিশ সদস্যরা বলেন, ‘আমরা প্রশাসনের লোক। আমাদের আইডি কার্ডও সাথে আছে।’
জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাঈদা শওকত জেনি তার পরিচয়পত্র বাসায় রেখে এসেছেন।
ডাক্তার জেনি নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান দাবি করে পুলিশ সদস্যদের গালিগালাজ করে বলেন, করোনায় জীবন গেছে কয়জন ডাক্তারের, আর আপনারা কতজন মরছেন। আমার কাছে আবার চান মুভমেন্ট পাস।
এ সময় নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম কাইয়ুম ওই নারীকে বলেন, আপনি আমাদের ধমক দিচ্ছেন কেন? জবাবে ডাক্তার বলেন, আমি বীর বিক্রম শওকত আলীর মেয়ে। জবাবে ওসি বলেন, আমিও মুক্তিযোদ্ধার ছেলে। আপনি আমাকে শোনাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধার কথা।
একপর্যায়ে ডাক্তারের অন্য সহকর্মীরা ঘটনাস্থলে এলে বিষয়টি সমাধান হয়। প্রায় আধা ঘন্টা পরে ডাক্তার জেনি ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।