নিজস্ব প্রতিবেদক,৯ এপ্রিল: মাঠপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের সার্বক্ষণিক কর্মস্থলে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে তাঁদের পরিবারকেও সঙ্গে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন বলে এক ব্রিফিংয়ে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) নির্বাহী কমিটি বাংলাদেশ রেলওয়ের আখাউড়া-সিলেট মিটার গেজ রেলপথকে ডুয়েল গেজে পরিবর্তন করার লক্ষ্যে ১৬ হাজার ১০৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে।
বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ব্রিফিংয়ে জানান, একনেক বৈঠকে ১৮ হাজার ১৯১ কোটি ৩৮ লাখ টাকার মোট ৭টি নতুন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনুমোদনকৃত প্রকল্প ব্যয়ের ৬ হাজার ৬২২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে এবং অবশিষ্ট ১১ হাজার ৫৬৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা বিদেশি সাহায্য হিসেবে জোগান দেওয়া হবে বলে তিনি জানান। অনুমোদিত সাতটি প্রকল্পই নতুন প্রকল্প।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আখাউড়া-সিলেট অঞ্চলের রেলপথকে ডুয়েল গেজে রূপান্তরিত করার প্রকল্প ২০২৫ সালের জুন মাসের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে। এ প্রকল্পে সহায়তা হিসেবে জি টু জি–এর আওতায় ১০ হাজার ৬৫৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা চীন থেকে নেওয়া হবে। প্রকল্পের আওতায় বিদ্যমান ২২৫ কিলোমিটার আখাউড়া-সিলেট অঞ্চলের মিটার গেজ রেলপথ ২৩৯ দশমিক ১৪ কিলোমিটার ডুয়েল গেজে রূপান্তরিত করা হবে। পাশাপাশি, অপর প্রধান প্রকল্পের আওতায় ৪৯টি বড়, ২৩৭টি ছোট রেলসেতু, ২২টি স্টেশনের সিগন্যালিং ব্যবস্থা, ১৬ হাজার ৬৯০ বর্গমিটার আবাসিক ভবন নির্মাণ, ব্যারাক ও ডরমিটরি এবং ২০০ দশমিক ৩০ একর ভূমি অধিগ্রহণ রয়েছে। তিনি বলেন, আখাউড়া-সিলেট অঞ্চলের রেলপথটি অর্থনৈতিক বিবেচনায়, পর্যটন, আন্ত এবং আঞ্চলিক যোগাযোগের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার ৪৭.২৪ শতাংশ। এ সময়ে ৮৩,৪৩২ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এর আগের বছরে এই একই সময়ে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ৪৫.৬৫ শতাংশ। এ সময়ে ৭১,৯৪০ কোটি টাকা ব্যয় হয়।
মন্ত্রী বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা যাতে তাঁদের কাজে পূর্ণ মনোনিবেশ দিতে পারেন, এ জন্য মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা তাঁদের নিজ নিজ এলাকায় পরিবার–পরিজন নিয়ে বসবাস করেন, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন।
বৈঠকে পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান স্থাপনের আগে পর্যাপ্ত উন্মুক্ত স্থান, বারান্দা এবং ভেন্টেলিটার সিস্টেম, ফায়ার ইস্টিংগুইশিং সিস্টেম রাখা এবং পুকুর ও জলাধার রাখার বিষয়েও নির্দেশনা দেন। তবে এ ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রী নদীর নাব্যতা বজায় রাখতে নদীর ড্রেজিং অব্যাহত রাখার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
একনেক সভায় দেশে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ৯১৯.৮৫ কোটি টাকার ভারতীয় অর্থনৈতিক জোনের অনুমোদন দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) অধীন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন কর্তৃপক্ষ (বেপজা) ২০২১ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এটি বাস্তবায়নে ভারতের তৃতীয় ক্রেডিট লাইন থেকে ৯১৯.৮৫ কোটি টাকা পাওয়া যাবে। এই প্রকল্পটির প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে, বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে ভারতীয় ডেভেলপার কোম্পানিগুলোকে আকৃষ্ট করাসহ সে দেশের বিনিয়োগকারীদের সুবিধা প্রদানে ভারতীয় অর্থনৈতিক জোনে অবকাঠামো উন্নয়ন করা।
পাশাপাশি ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের জীবনমান উন্নয়নে সেখানে তাদের শিল্প ইউনিট স্থাপনে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা।
প্রধান প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে, প্রায় ১৫২ লাখ কিউবিক মিটার ভূমি উন্নয়ন, পানি সরবরাহ ও ড্রেজিং নিশ্চিত করতে ফেনী নদী থেকে ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন স্থাপন, ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ সড়ক স্থাপন, একটি পাম্প স্টেশন স্থাপন, একটি জলাধার, ইন্টারনাল লিংকেজ, বহির্ডেন লাইন নির্মাণ, ৫ হাজার মিটার সীমানা দেয়াল নির্মাণ, ১৬৮০ বর্গমিটার প্রশাসনিক ভবন, ২০৬০৩ বর্গফিট নিরাপত্তা শেড ও অপটিকেল ফাইবার স্থাপন।
অন্য প্রকল্পসমূহ হচ্ছে, ২৪৪.৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্প, মাগুরা-শ্রীপুর মহাসড়ক সম্প্রসারণ, ১৩৯.৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের নতুন অফিস ভবন নির্মাণ এবং ৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বিসিএসআইআরের ঢাকা ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর শুঁটকি মাছ প্রক্রিয়াকরণ এবং ইনডোর কৃষি গবেষণাকেন্দ্র স্থাপন।