সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাব স্কাউটিং চালু করা হবে

ডেস্ক :

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাব স্কাউটিং চালুর উদ্যোগ নেবে।

রোববার সকালে বাংলাদেশ স্কাউটস’র ষষ্ঠ জাতীয় কমডেকার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। চাঁদপুর জেলার হাইমচরের চরভাঙ্গায় স্কাউটস এবং রোভার স্কাউটসদের ‘কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট ক্যাম্প-কমডেকা’ (সমাজ উন্নয়ন ক্যাম্প ) অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার প্রত্যেক স্কুলে কাব স্কাউটিং চালুর জন্য শিগগিরই একনেকে একটি প্রকল্প অনুমোদন দিতে যাচ্ছে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে দুটি করে কাব স্কাউট, স্কাউট ও রোভার স্কাউট ইউনিট চালু করতে এবং সহশিক্ষা এবং মেয়েদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি করে গার্ল ইন স্কাউট ইউনিট খুলতে আমি নির্দেশ দিয়েছি এবং এর জন্য যা যা করা দরকার সবধরনের সহযোগিতা আমরা দেব।’

তিনি বলেন, প্রতিটি জেলায় স্কাউটিং কার্যক্রম সম্প্রসারণ, উন্নয়ন ও মনিটরিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সকল প্রকার অবকাঠামোগত সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে। এটির জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগসমূহকে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্কাউট কার্যক্রমের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে সব ধরনের সুবিধা আমি দিয়ে যাব, আমি ওয়াদা করছি।’

প্রধানমন্ত্রী এ সময় জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জন্য ৯৫ একর জমি বরাদ্দ এবং প্রত্যেক জেলায় স্কাউট ভবন নির্মাণ এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণে তার সরকারের জমি বরাদ্দের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন এবং তার সরকারের অধীনে স্কাউট শতাব্দি ভবন নির্মাণ ও স্কাউটিং সম্প্রসারণের জন্য ১২২ কোটি টাকার প্রকল্প চলমান রয়েছে।

যেকোনো দুর্যোগ-দুর্ঘটনায় দুর্গতদের পাশে স্কাউটদের উপস্থিতি আমাকে মুগ্ধ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বহির্বিশ্বে বিভিন্ন সেবামূলক কর্মকাণ্ড ও ক্যাম্পে আমাদের স্কাউটদের সফল অংশগ্রহণ দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে।

তিনি বলেন, ২০১৭ সালে স্কাউট সদস্য সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ বিশ্ব স্কাউট কনফারেন্স-এ ‘গ্রোথ অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করেছে। এজন্য তিনি স্কাউট নেতা ও সকল পর্যায়ের স্কাউট সদস্যদের অভিনন্দন জানান।

দেশ আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে এখন অনেক এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং মাদক থেকে যুব সমাজকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে আমরা একটি সৃষ্টিশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাই-সেজন্য সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ এবং মাদক সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করে সমাজ থেকে তা দূর করতে হবে। আর এটা করতে হলে জনসচেতনতা দরকার-বাবা, মা, ভাইবোন, শিক্ষক, মসজীদের ইমাম, ধর্মগুরু সকলকেই এ বিষয়ে বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে। সেই সাথে দেশের সার্বিক উন্নয়নেও সবাইকে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। কারণ আমরা বাংলাদেশকে ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ হিসেবে গড়তে চাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলার লক্ষ্য বাস্তবায়নেই তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

আজকের শিশু-কিশোররাই আগামীতে দেশের কর্ণধার হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজেই তোমাদের নিজেদেরকেও সেভাবে প্রস্তুত করতে হবে। যাতে স্বাধীনতার আদর্শ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে তারা পরিচালিত করতে পারে। তোমাদেরকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে যোগ্যভাবে গড়ে উঠতে হবে। তোমরা প্রশিক্ষণ পাচ্ছ দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কাজেই যখন জীবনে তোমরা প্রতিষ্ঠিত হবে তখনও এটি ভুলে যাবে না। তখনও যেন এই মানসিকতাটা থাকে। জীব ও মানুষ সকলের প্রতি মমত্ববোধটা থাকতে হবে আর দেশকে ভালো বাসতে হবে। দেশকে গড়ে তোলার জন্য মানসিকতা নিয়ে সবসময় কাজ করতে হবে। কারণ এই দেশটা আমাদের, আমরাই এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব এবং উন্নত করে গড়ে তুলবো।

তিনি রোভারদের সেবাধর্মী কার্যক্রম আরো বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে বলেন, স্কাউটিং এর সুফল সকল পর্যায়ে পৌঁছতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক ও কমিউনিটি পর্যায়ভিত্তিক স্কাউটিং আরো সম্প্রসারণ করতে হবে।

তিনি বলেন, প্রতিটি মানুষ যেন তার মৌলিক চাহিদাগুলো নিশ্চিত করতে পারে তার বাস্তবায়নই আমাদের লক্ষ্য।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের আজকের যে অর্জন সেগুলো ভবিষ্যতে ধরে রাখার দায়িত্ব আজকের ছোট্ট শিশু-কিশোরদের। কাজেই আমি বিশ্বাস করি আমার প্রিয় রোভার এবং স্কাউটসরা সেভাবেই নিজেদের গড়ে তুলবে।

প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, সরকার এই হাইমচরে একটি আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র এবং একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলারও উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

বাংলাদেশ স্কাউটস’র সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। বাংলাদেশ স্কাউটস’র জাতীয় কমিশনার মোজাম্মেল হক খান এবং জাতীয় কমিশনার (স্পেশাল ইভেন্ট) মো. মোজাম্মেল হাসেন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

বাংলাদেশ স্কাউটস’র ষষ্ঠ জাতীয় কমডেকায় অংশগ্রহণকারী স্কাউট এবং রোভার স্কাউটরা মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ প্রদর্শন করে প্রধানমন্ত্রীকে সালাম জানায়। প্রধানমন্ত্রী সালাম গ্রহণ করেন এবং কুচকাওয়াজ উপভোগ করেন।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা এবং স্কাউট প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে কমডেকা পতাকা অবমুক্ত করার মাধ্যমে পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে বাংলাদেশ স্কাউটস’র ষষ্ঠ জাতীয় কমডেকার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এ উপলক্ষে তিনি একটি স্মারক ডাক টিকিটও অবমুক্ত করেন।

ভারত, নেপাল এবং আমেরিকা থেকে আগত একজন স্কাউটসহ স্কাউট এবং রোভার স্কাউটদের সম্মেলন কমডেকায় সাড়ে সাত হাজার স্কাউট সদস্য অংশগ্রহণ করছেন।

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।