- অনুমোদন ছাড়া স্কুল-কলেজ নয়
স্টাফ রিপোর্টার ॥ কোন রকম অনুমোদন ছাড়া স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর সুযোগ বন্ধ হচ্ছে। এ লক্ষ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুমোদন নীতিমালায় পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার এক সভায় নীতিমালা পরিবর্তনে আট সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জানা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এ পরিবর্তনের মাধ্যমে অনুমোদন নিয়ে প্রতিষ্ঠানের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে হবে। আগের মতো আর ১৩টি শর্ত পূরণ করে আবেদন জমা নেয়া হবে না। নীতিমালা পরিবর্তনের পর প্রতিষ্ঠান অনুমোদন করতে হবে আগে। পরে জমি নির্ধারণ, ভবন নির্মাণ ও অবকাঠামো তৈরি করতে হবে। জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রাপ্যতা নির্ণয় করা হবে। এছাড়াও যারা অনুমোদন ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন তাদের বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
সভায় উপস্থিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুমোদনে ১৩টি শর্তজুড়ে দেয়া হয়েছে। যা প্রতিষ্ঠান অনুমোদনের আগেই পূরণ করতে হতো। তার মধ্যে জমি ক্রয়, ভবন তৈরি, অবকাঠামো নির্ণয়, পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী ভর্তিসহ বিভিন্ন শর্ত রয়েছে। অথচ এতসব করার পরও শর্তানুযায়ী প্রাপ্যতা না থাকায় যুগের পর যুগ কেটে গেলেও সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেয়া হচ্ছে না। উদ্যোক্তারা বিপুল অর্থ ব্যয় করে স্কুল-কলেজ স্থাপন করছেন।
আবার অনেকে কোন অনুমোদন ছাড়াই কোন মতে প্রতিষ্ঠান চালু করে শিক্ষা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। পরে শিক্ষা বোর্ডে আসছেন অনুমোদনের জন্য। এসব বিষয় বিবেচনা করেই এই নিয়মের পরিবর্তন আনা হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব চৌধুরি মুফাত আহমেদকে আহ্বায়ক করে আট সদস্যের একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছে। এ কমিটিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ তিন মন্ত্রণালয়, সকল শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান, জেলা শিক্ষা অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে আলোচনা করে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব ছালমা জাহান বলেন, নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুমোদন নীতিমালা সংশোধনীর জন্য কমিটি তৈরি করা হয়েছে। এ কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আগামী অক্টোবরের মাঝামাঝি নীতিমালা পরিবর্তন করা হবে।
দীর্ঘদিন ধরে চলছে অথচ অনুমোদন দেয়া হয়নি সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে ভাল প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুমোদন দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। নামধারী স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেয়া হতে পারে বলে তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুমোদনে নানা জটিলতা রয়েছে। এ কারণে দেশের সহস্রাধিক প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম চালু থাকলেও তাদের অনুমোদন দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এসব বিষয় আমলে নিয়ে এ আইন পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান অনুমোদনের পরে জমি নির্ধারণ, ভবন নির্মাণ ও অবকাঠামো তৈরি করতে হবে। জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রাপ্যতা নির্ণয় করা হবে। জানা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুমোদন নীতি-১৯৯৭ অনুযায়ী নতুন স্কুল, মাধ্যমিক জুনিয়র স্কুল, মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ অনুমোদন ছিল সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের নিয়ন্ত্রণে।
জনসংখ্যা, প্রাপ্যতাসহ ১৩ শর্ত পূরণের মাধ্যমে নতুন প্রতিষ্ঠান অনুমোদন দেয়ার কথা থাকলেও নানা অনিয়মের মাধ্যমে যত্রতত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুমোদন দেয়ার প্রমাণ পায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিষয়টি দুদক পর্যন্ত গড়ায়। এরপর ২০১৫ সালে একটি আদেশ জারির মাধ্যমে শিক্ষা বোর্ডের সে ক্ষমতা শিথিল করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের অধীনে সে ক্ষমতা নেয়া হয়। নির্দেশে বলা হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে নতুন স্কুল-কলেজ স্থাপন, পাঠদানের অনুমতি ও স্বীকৃতি দেয়া হবে।