শিক্ষার্থী ভর্তি না হলে আসন বাতিলের সিদ্ধান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক,৪ মার্চ:
রাজধানীতে শিক্ষার্থী ভর্তি না হওয়া কলেজগুলোর বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেয়া হবে। যেসব কলেজে অনুমোদিত আসনে ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে না সেসব কলেজের ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ আসন বাতিল করা হবে। পরবর্তী বছরও অনুমোদিত আসনের ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী ভর্তি না হলে সেসব কলেজের একাদশ শ্রেণির শতভাগ আসন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড।

এছাড়া অনুমোদনহীন অতিরিক্ত শ্রেণি শাখার অনুমোদিত আসন বাতিল হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড থেকে এমন তথ্য জানা গেছে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, অনলাইনে কলেজে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কত শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে বা কোথায় কী পরিমাণে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হবে তা সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তি হতে না চাইলেও নানাভাবে প্রতারণার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করানোর অভিযোগও রয়েছে। বিগত বছরে এমন বেশ কয়েকটি কলেজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড।

সূত্র জানায়, ঢাকা বোর্ডের অধীন প্রায় এক হাজার ৫২টি সরকারি-বেসরকরি কলেজ রয়েছে। এর মধ্যে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে দুই শতাধিক কলেজের বিভিন্ন বিভাগে ৫০ থেকে ১০০টি আসনের অনুমোদন দেয়া হলেও সেখানে এক থেকে ১০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে রাজধানী ঢাকার বাড্ডা আলাতুন্নেসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ৫০টি আসনের মধ্যে চারজন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। যাত্রাবাড়ী শহীদ জিয়া গালর্স কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ৫০টি আসনে আটজন, পাশেই রং মেলা আকবর মোল্লা কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ৫০টি আসনে দুজন, ধানমন্ডির প্রেসিডেন্সি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ৫০টি আসনে দুজন, কাজী আব্দুল আওয়াল কলেজের ৫০টি আসনে দুজন, নয়া পল্টন লাইন উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫০টি আসনে দুজন, ভাকুপ্তা ইউনিয়ন কলেজের ১০০টি আসনে একজন শিক্ষার্থী একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছেন।

ঢাকা বোর্ডের অধীন ঢাকা মহানগর ও জেলাপর্যায়ে এমন দুই শতাধিক কলেজে ৫০ থেকে ১০০টি অনুমোদিত আসন থাকলেও সেখানে এক থেকে ১০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তি না হওয়ায় অনুমোদিত আসন সংখ্যা কমিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড।

অন্যদিকে, রাজধানীর অনেক নামিদামি কলেজ শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই অতিরিক্ত শ্রেণি শাখা চালু করে বোর্ড থেকে শিক্ষার্থী ভর্তিতে অতিরিক্ত আসনের অনুমোদন নেয়। অনুমোদন ছাড়া এসব প্রতিষ্ঠানের অতিরিক্ত আসনের অনুমোদন বাতিলেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক জাগো বলেন, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসনের অনুমোদন নেয়া হয়েছে অথচ সেখানে শিক্ষার্থী ভর্তি হবে না সেখানে আসন অর্ধেক কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। যেখানে শিক্ষার্থী ভর্তি হতে চায় না সেসব কলেজে আসন কমিয়ে দেয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা কাউকে ছাড় দেব না। যেসব প্রতিষ্ঠানে এক থেকে ১০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে তাদের অনুমোদিত আসনের ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ কমিয়ে দেয়া হবে। এরপরও যদি সেখানে ভর্তি না হয় তবে আগামীতে একাদশ শ্রেণির ভর্তির অনুমোদন বাতিল করা হবে।

চেয়ারম্যান বলেন, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুমোদন ছাড়াই অতিরিক্ত শ্রেণি শাখা চালু করে শিক্ষা বোর্ড থেকে ভর্তির অনুমোদন নিয়েছে। সেসব অনুমোদনও বাতিল করা হবে। অনুমোদন ছাড়া শ্রেণি শাখায় শিক্ষার্থী ভর্তি করার সুযোগ দেয়া হবে না। অনুমোদন পেলে সেখানে ভর্তির জন্য আসন অনুমোদন দেয়া হবে।

এদিকে আগামী ১০ মে থেকে শুরু হতে যাচ্ছে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের অনলাইনে একাদশ শ্রেণির ভর্তি কার্যক্রম। ২৫ জুন পর্যন্ত চলবে এ কার্যক্রম। ১ জুলাই থেকে একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হবে। এতে প্রথম ধাপের ভর্তি আবেদন আগামী ১০ থেকে ২০ মে পর্যন্ত গ্রহণ করা হবে। ২৭ থেকে ৩১ জুন যাচাই-বাছাই, আপত্তি ও নিষ্পত্তি কার্যক্রম চলবে। ৮ জুন প্রথম ধাপের ফল প্রকাশ করা হবে। তবে পুনঃনিরীক্ষায় এসএসসি পরীক্ষার ফল পরিবর্তনকারীরা ১ থেকে ৩ জুন পর্যন্ত আবেদন করার সুযোগ পাবেন।

দ্বিতীয় ধাপের আবেদন ১৭ জুন শুরু হয়ে চলবে ২০ জুন পর্যন্ত। একই দিন রাত ৮টার পর এ ধাপের ফল প্রকাশ করা হবে। তৃতীয় ধাপের আবেদন ২৩ জুন শুরু হয়ে চলবে ২৫ জুন পর্যন্ত। ২৫ জুন রাত ৮টার পর এ ধাপের ফল প্রকাশ করা হবে। এছাড়া একাদশ শ্রেণির ভর্তির নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। বর্তমানে এ নীতিমালা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। চলতি সপ্তাহে এ নীতিমালার অনুমোদন দেয়া হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে।

নতুন নীতিমালায় কোটা বাতিল, রেজিস্ট্রেশন ফি বৃদ্ধি, এসএমএস আবেদন বাতিলসহ গুরুত্বপূর্ণ চারটি পরিবর্তন আনা হয়েছে।

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।