শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাচ্ছে কিন্তু শিখছে না

ডেস্ক রিপোর্ট,২৯ সেপ্টেম্বর: কেনিয়া, তানজানিয়া এবং উগান্ডায় ক্লাস থ্রি পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের বলা হয়েছিল একটি সাধারণ বাক্য ‘দ্যা নেম অব দ্যা ডগ ইজ পাপ্পি’ এটি পড়ার জন্য। তিন-চতুর্থাংশ শিক্ষার্থী এই বাক্যের মানেই বোঝেনি। ৪৬ থেকে ১৭ বিয়োগ করলে কত হবে ভারতের গ্রামীণ স্কুলে পড়ুয়া পঞ্চম শ্রেণির অর্ধেক শিক্ষার্থী এটি সমাধান করতে পারেনি। বিশ্বে এমন লাখ লাখ শিশু রয়েছে যারা শুধু স্কুলে ভর্তি হচ্ছে, কিন্তু কিছুই শিখছে না। তারা সাধারণ জ্ঞানটুকুও অর্জন করছে না। শিক্ষার মান নিয়ে মঙ্গলবার প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।

প্রতিবছরের মতো এবারও বিশ্ব উন্নয়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। এবারের প্রতিপাদ্য করা হয়েছে ‘ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট ২০১৮-লার্নিং টু রিয়ালাইজ এডুকেশনস প্রমিজ’। এবারের প্রতিবেদনে শিক্ষার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্বে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে প্রতি একশ জনের ৯০ জন প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করছে। তাদের মধ্যে ৬১ জন নিম্ন মাধ্যমিক পার হতে পারছে। মাত্র ৩৫ জন উচ্চ মাধ্যমিকের গন্ডি পার হতে পারছে। এর মধ্যে অনেকেই ভবিষ্যত্ উচ্চ শিক্ষা এবং কারিগরি শিক্ষা পাচ্ছে না। কিন্তু বিষয়টি সংখ্যার নয়, বিষয়টি হচ্ছে মানের। প্রাথমিক পর্যায়ের ৬০ ভাগ শিক্ষার্থীর গণিত ও পড়ার ক্ষেত্রে ন্যূনতম জ্ঞানটুকুও নেই। তবে শিক্ষার সঙ্গে শিশুদের সঠিকভাবে বেড়ে উঠাও গুরুত্বের। বিশ্বে পাঁচ বছরের নিচে প্রতি তিনটি শিশুর একটি অপুষ্টির শিকার। এ ধরনের সমস্যা তাদের বুদ্ধি বিকাশের অন্তরায়।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বিষয়ে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এদেশে ১১ ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা বিদ্যমান। কিন্ডারগার্টেন, মাদ্রাসা, এবতেদায়ীসহ বিভিন্ন এনজিওগুলো তাদের পৃথক কারিকুলাম অনুযায়ী বিভিন্ন স্কুল পরিচালনা করছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত অনেক দেশেই স্কুলে ভর্তির বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। তবে শিক্ষার্থীরা স্কুলে কী শিখছে তার মূল্যায়ন করা হয় না। এসব দেশের স্বাক্ষরতার হার উন্নত দেশগুলোর মতো। তবে শিক্ষার্থীদের বড় অংশই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ঝরে পড়ে। ২০১০ সালের তথ্য দিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষা খাতে সরকারি ব্যয়ের ২৭ শতাংশ পায় দরিদ্রতম পরিবারের সন্তানরা। ধনীদের ক্ষেত্রে এ হার ১৩ শতাংশ। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে দেখা যায়, মাত্র ২ শতাংশ দরিদ্রতম পরিবারের সন্তানরা সরকারি ব্যয়ের উপকারভোগী হচ্ছে, যেখানে ধনী পরিবারের সন্তান সংখ্যা ৫৫ শতাংশ।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্বে প্রচুর শিক্ষার্থী স্কুলে যাচ্ছে, কিন্তু তারা কিছু শিখতে পারছে না। শিখতে না পারায় স্কুলে যাওয়াটা তাদের ভবিষ্যতের জন্য সুফল বয়ে আনছে না। বেকার থাকছে অথবা কম মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। বিশ্বব্যাংক শিক্ষা খাতের এ সংকট নিয়ে দেশগুলোকে সতর্ক করে বলেছে, এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে সবার জন্য শেখাকে জাতীয় অগ্রাধিকার ঘোষণা করতে হবে। ইত্তেফাক

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।