নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১
দেশের ভেতরে পর্যটনের প্রসারে শিক্ষাবর্ষ বদলের প্রস্তাব দিয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান পর্যটন করপোরেশন। এখন স্কুলের শিক্ষাবর্ষ শুরু হয় জানুয়ারি থেকে। শেষ হয় ডিসেম্বরে। এটি পরিবর্তন করে শিক্ষাবর্ষ জুলাই থেকে জুন নির্ধারণ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে পর্যটন করপোরেশনের পক্ষ থেকে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে সম্প্রতি এই প্রস্তাব দিয়েছে পর্যটন করপোরেশন। পাশাপাশি তারা বছরে ১৫ থেকে ২০ দিনের জন্য পর্যটন ছুটি দেওয়ারও প্রস্তাব দিয়েছে। করপোরেশন মনে করছে, শিক্ষাবর্ষ বদল ও ছুটি দেওয়া হলে অভ্যন্তরীণ পর্যটনে অল্প সময়ে ব্যাপক উন্নয়নের সম্ভাবনা রয়েছে।
অবশ্য পর্যটনের জন্য শিক্ষাবর্ষ পরিবর্তন করার প্রস্তাব বাস্তবসম্মত কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। পর্যটন করপোরেশনও বলছে, তাদের এই প্রস্তাব প্রাথমিক। যদি সংসদীয় কমিটি মনে করে এটি গ্রহণযোগ্য, তাহলে তারা সামনে অগ্রসর হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শিক্ষাবর্ষ বদলানোর কথা বলা হয়েছে করপোরেশনের আট দফা প্রস্তাবে। পর্যটন করপোরেশন সংসদীয় কমিটির চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে পর্যটন খাতকে একটি শিল্পে পরিণত করা এবং এ খাতের সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে এই আট দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করে। এতে বলা হয়, সাধারণত স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের ছুটির ওপর পরিবারের ভ্রমণের সূচি ঠিক করা হয়। দেশে নিন্নমাধ্যমিক (প্রাথমিক) ও মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে শিক্ষাবর্ষ যেমন জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর, তেমনি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে সমাপনী পরীক্ষা ও মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা নভেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে হয়ে থাকে। আর এই সময়েই দেশের পর্যটন মৌসুম। শিক্ষাবর্ষ পরিবর্তন করে জুলাই-জুন বা পর্যটনবান্ধব করা হলে পর্যটনের উন্নতিতে ভূমিকা রাখবে।
করপোরেশন মনে করে, স্কুলগুলোতে বার্ষিক ছুটির তালিকা সুবিন্যাস করে একসঙ্গে ১৫ থেকে ২০ দিনের পর্যটন ছুটি দেওয়া যেতে পারে। তারা বলছে, ২০২১ সালের ছুটির তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সাপ্তাহিক ছুটির বাইরে বিভিন্ন সরকারি আছে ৮৫ দিন। এই ৮৫ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রীয় ও বিশেষ দিনগুলো ছাড়া অন্য কম গুরুত্বপূর্ণ ছুটিগুলো একীভূত করে নিজ দেশ ভ্রমণের জন্য ১৫ থেকে ২০ দিনের পর্যটন ছুটি ঘোষণা করা যায়।
করপোরেশন এই ছুটি সারা দেশে একসঙ্গে না দিয়ে আটটি বিভাগকে দুই বা তিন ভাগে ভাগ করে দেওয়ার কথা বলছে। তারা মনে করছে, একসঙ্গে সারা দেশে এই ছুটি দেওয়া হলে পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে অবকাঠামোগত সংকটের কারণে জটিল ও খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তকে পর্যটন বিষয়ে আলাদা একটি অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত করারও প্রস্তাব করা হয়েছে করপোরেশনের পক্ষ থেকে।
পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. হান্নান মিয়া বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনেক ছুটি থাকে! পর্যটনের জন্য আলাদা ছুটি নয়, কোনো একটি ছুটিকে পর্যটন ছুটি বলা হলে ভালো হয়। তিনি বলেন, শিক্ষাবর্ষ পরিবর্তনের বিষয়টি তীরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছেন। এটি প্রাথমিক প্রস্তাব, বিবেচনার জন্য দেওয়া হয়েছে। সব প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে, এমন নয়।
সংসদীয় কমিটির সূত্র জানায়, ১ ডিসেম্বর কমিটির বৈঠকে পর্যটন করপোরেশনের প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। তবে এটি নিয়ে কমিটিতে বিস্তারিত আলোচনা হয়নি।
বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যাটন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, শিক্ষাবর্ষ পরিবর্তনের প্রস্তাবের বিষয়টি গত বৈঠকে আলোচনা হয়নি। তবে পর্যাটনকে শিল্পে পরিণত করতে কী করা যায়, তা নিয়ে একটি প্রস্তাব তৈরি করার জন্য একটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য দুই মাস সময় দেওয়া হয়েছে।
পর্যটনের জন্য শিক্ষাবর্ষ পরিবর্তন করা বা লম্বা ছুটি ঘোষণা করা কতটুকু যৌক্তিক, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও আবহাওয়ার কারণে শিক্ষাবর্ষ পরিবর্তনের পক্ষে কথা বলছেন দেশের শিক্ষাবিদেরা। গত সেপ্টেম্বরে শিক্ষাব্যবস্থা পুনরুদ্ধারে করণীয় শীর্ষক একটি লেখায় স্থায়ীভাবে সেপ্টেম্বর-জুন “স্কুল ক্যালেন্ডার’ চালুর প্রস্তাব দিয়েছেন দেশের ১০ জন শিক্ষাবিদ ও গবেষক।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান বলেন, পর্যটনের জন্য শিক্ষাবর্ষ পরিবর্তন করা ঠিক হবে না। অল্প সময়ের জন্য ছুটি দেওয়া যেতে পারে। তবে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা এবং আবহাওয়ার কথা বিবেচনা করে শিক্ষাবর্ষ পরিবর্তন করা দরকার।