শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে শিক্ষক নেটওয়ার্কের ১১ প্রস্তাব

Image

ঢাবি প্রতিনিধি,২৪ আগস্ট ২০২১
সেপ্টেম্বরের শুরু থেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম কিভাবে চালু করা যায় সে সম্পর্কিত ১১টি প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। সেইসঙ্গে সেপ্টেম্বরের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে না দিলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে উন্মুক্ত স্থানে প্রতীকী ক্লাস নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমন্বয়ে গঠিত এ প্লাটফর্মটি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো উন্নত করে শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে আবাসিক হলগুলো খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের হলে ওঠানোর পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে সকল শিক্ষার্থীদের টিকা নিশ্চিত করার দাবি জানান তারা।

মঙ্গলবার জুম অ্যাপের মাধ্যমে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে এসব প্রস্তাবনা তুলে ধরেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। সংবাদ সম্মেলনের সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরীন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাইদুল ইসলাম। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার বিষয়ে আলোচনা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক অধ্যাপক ড. আনু মোহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কামরুল হাসান মামুন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (গোপালগঞ্জ) শিক্ষক আরাফাত রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাজী মারুফুল ইসলাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাসির উদ্দিন।

বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার দাবিতে শিক্ষক নেটওয়ার্কের প্রস্তাবগুলো হলো:

১। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ধাপে ধাপে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। সেটি না করলে প্রতীকী প্রতিবাদ কর্মসূচি হিসেবে শিক্ষকরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতীকী ক্লাস নেয়া শুরু করবেন।

২। পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খুলে দিতে হবে। আবাসিক হলে প্রথমে শুধু অনার্স এবং মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের অনুমতি থাকবে। আবাসিক হলে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত না করে কোনভাবে এইসব পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরু করা যাবে না। এসব ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষা কার্যক্রম শেষ হয়ে গেলে পরবর্তী ব্যাচগুলোর ধাপে ধাপে পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে।

৩। আবাসিক হলগুলোতে গণরুম তুলে দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। সেইসঙ্গে আবাসিক হল ব্যবস্থাপনা পরিপূর্ণভাবে শিক্ষকদের মাধ্যমে পরিচালিত হতে হবে, ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের মাধ্যমে নয়।

৪। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টেস্ট এবং টিকাদানের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে হলে প্রবেশ করা শিক্ষার্থীরা কোভিড টেস্ট এবং টিকাগ্রহণে অগ্রাধিকার পায়। ক্যাম্পাসে ব্যবস্থা করা গেলে সবচাইতে ভালো হয়, তাতে শিক্ষার্থীরা ভিড় এড়িয়ে টিকা নিতে পারবে।

৫। ক্যাম্পাসগুলোতে অবস্থিত মেডিকেল সেন্টারগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি, আইসোলেশনের ব্যবস্থা, অসুস্থ হলে শিক্ষার্থীদের দেখাশোনার ব্যবস্থা উন্নত করার কোনো বিকল্প নাই। এ বিষয়ে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে।

৬। পরীক্ষার কার্যক্রম শেষ হয়ে যাওয়ার পর শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে নিয়মিত পাঠদানের কার্যক্রম শুরু করতে হবে। তবে এখানেও করোনা পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে ৫০% অনলাইন এবং ৫০% অফ লাইন ক্লাস চালু করা যেতে পারে। ৫০% অফলাইন ক্লাসের মধ্যে ব্যবহারিক ক্লাস এবং অন্যান্য কার্যক্রম যেগুলো অনলাইনে করা কঠিন, সেসব থাকতে পারে।

৭। অনলাইন ক্লাসেও হাইব্রিড পদ্ধতি চালু করা যেতে পারে। যেসব শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে আসতে পারবে, তারা সশরীর অনসাইট ক্লাস করবে। যারা পারবে না তারা অনলাইন ক্লাসে অংশ নেবে। যে ক্লাসে এসেছিলো সে অসুস্থ হলে সে অনলাইনে চলে যাবে। পরিস্থিতি বেশি খারাপ হলে আবার পুরো অনলাইনে যাওয়া যেতে পারে।

৮। শিক্ষকদের অনলাইন টিচিং লার্নিং ম্যানেজমেন্টের সিস্টেম তৈরি করার জন্য প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা কমিটি গঠন করে এর কাজ শুরু করতে হবে এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

৯। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

১০। অনলাইনে সুষ্ঠুভাবে পড়াশোনা চালিয়ে নেয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের জন্য স্বল্পমূল্যে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সার্ভিসের বিশেষ প্যাকেজ ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

১১। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করে তাদের শিক্ষায় ফিরিয়ে আনার সেফটি নেটের ব্যবস্থা করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ বলেন, সেপ্টম্বরের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধাপে ধাপে খুলে দেয়া হোক। আমরা বলছি না, সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একযোগে খুলতে হবে। আমাদের দাবি হলো, সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে শক্তিশালী করে খুলে দেয়া হোক। যেখানে টিকা, টেস্ট এবং আইসিউর ব্যবস্থা থাকবে।

তিনি আরো বলেন, হলগুলোতে গণরুমের ব্যবস্থা বাদ দিয়ে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করে ধাপে ধাপে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া হোক। সরকার যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে আরো গড়িমসি করে তাহলে আমরা প্রতিবাদ হিসেবে উন্মুক্ত স্থানে প্রতীকী ক্লাস নেবো। ইতোমধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ ক্লাস নিয়েছেন। আমরাও নেবো। প্রতীকী ক্লাস নেয়ার আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।