এস দাস,২৮ এপ্রিল:বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগে সর্বোচ্চ বয়স নির্ধারণের চিন্তা-ভাবনা চলছে। প্রস্তাবিত এমপিও নীতিমালায় এটি সংযুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ চলছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বর্তমানে এ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের অবসরের বয়স ৬০ বছর। কিন্তু নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়স নির্ধারিত না থাকায় চাইলে ৫৯ বছর বয়সেও কেউ নিয়োগ পেতে পারেন। অপরদিকে সরকারি চাকরি তথা সরকারি কলেজ, হাইস্কুল ও প্রাইমারি স্কুলে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর। এসব বিষয় বিবেচনা করে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের সর্বোচ্চ বয়স ৩৫ করার চিন্তা-ভাবনা চলছে। সূত্র জানায়, এটি চূড়ান্ত হবে এমপিও নীতিমালা চূড়ান্তকরণ কমিটির বৈঠকে।
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (মাধ্যমিক) রুহী রহমান শিক্ষাবার্তাকে বলেন, ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের এমপিও নীতিমালা আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী করার কাজ চলছে। তাতেই শিক্ষকের নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়স নির্ধারণের চিন্তা-ভাবনা আছে।’
বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়সসীমা নির্ধারণের উদ্যোগে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সরকারি কর্মকমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. সা’দত হুসাইন বলেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়সসীমাকে আমি সমর্থন করি না। তবে সরকার চাইলে এ সেক্টরের নিয়োগে দুটি ক্ষেত্রে বয়সসীমা আরোপ করতে পারে।
এক. এমপিও দেয়ার বয়সসীমা, দুই. নিবন্ধন পরীক্ষা দেয়ার বয়সসীমা। তিনি বলেন, যদি বয়সসীমা নির্ধারণ করা যায়, তাহলে ওই বয়সের মধ্যে যে কেউ পরীক্ষা দিয়ে সনদ নিয়ে রাখবে। এরপর যে কোনো বয়সে তিনি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন। এক্ষেত্রে এমপিও দেয়ার বয়সসীমার মধ্যে যদি কেউ যোগ না দেন, তাহলে তিনি তা (এমপিও) পাবেন না। এ নিয়োগ হবে চুক্তিভিত্তিক।প্রতিষ্ঠান তার বেতন বহন করবে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যদি নিবন্ধন সনদের মেয়াদ উল্লেখ থাকে, তবে তা প্রয়োজনে শিথিল করা যেতে পারে। তবে নিয়োগের বয়সসীমাকে স্বাগত জানিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) সাবেক একজন মহাপরিচালক এবং একজন শিক্ষক নেতা। মাউশির সাবেক মহাপরিচালক এবং বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক নোমান-উর-রশীদ শিক্ষাবার্তাকে বলেন, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে বয়স নির্ধারণের উদ্যোগ ভালো। কেননা পাসের পর অন্য কাজে সময় দিলে তার লেখাপড়া ও সিলেবাস আয়ত্তে নাও থাকতে পারে। তিনি বলেন, বয়সসীমা ৩৫ করা হলে সমস্যা নেই। এক্ষেত্রে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের বয়সের সঙ্গে তুলনা যৌক্তিক নয়।
সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত এমপিও নীতিমালায় আরও বেশকিছু নতুনত্ব আসছে। এর মধ্যে আছে, এমপিও পেতে হলে পাবলিক পরীক্ষায় স্কুলের পাসের হার ৭০ শতাংশ এবং কলেজের জন্য পাসের হার ৬০ শতাংশ হতে হবে। মাধ্যমিক স্তরের (ষষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণী) স্কুলে এমপিওভুক্তির জন্য শহর এলাকায় ৬০ জন ও মফস্বল এলাকায় ৪০ জন পরীক্ষার্থী (পাবলিক পরীক্ষায়) থাকতে হবে। বর্তমানে এ সংখ্যা যথাক্রমে ৫০ ও ৩০ জন। পাসের হার বর্তমানে ৫০ শতাংশ থাকতে হয়। মাদ্রাসার দাখিল ও আলিম স্তরে এমপিওভুক্তির জন্য পাসের হার ৭০ শতাংশ লাগবে। পরীক্ষার্থী থাকতে হবে শহর এলাকায় ৪০ জন ও মফস্বলে ৩০। বর্তমানে আরও ১০ জন কম আছে।
স্নাতক (পাস) স্তরের কলেজ এমপিওভুক্তির জন্য শিক্ষার্থী থাকতে হবে শহর এলাকায় ৫০ জন ও মফস্বল এলাকায় ৩৬ জন। বর্তমানে থাকতে হয় যথাক্রমে ৪০ জন ও ২৬ জন। পাসের হার লাগবে কমপক্ষে ৬০ শতাংশ। বর্তমানে এটি আছে ৫০ শতাংশ। ফাজিল (পাস) মাদ্রাসা ও কামিল মাদ্রাসায় পাসের হার হতে হবে ৬০ শতাংশ। বর্তমানে পাসের হার লাগে ৫০ শতাংশ।
তবে দেশব্যাপী শত শত কলেজে বিভিন্ন বিষয়ে অনার্স প্রোগ্রাম চালু থাকলেও প্রস্তাবিত নীতিমালায় এসব কলেজের শিক্ষকদের এমপিও দেয়ার বিষয়টি এখনও অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
এদিকে নীতিমালার প্রথম খসড়ায় প্রায় দেড় লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর পদ বাড়ানোর প্রস্তাব ছিল। কিন্তু চূড়ান্ত খসড়ায় এ সংখ্যা কমছে। নাম প্রকাশ না করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যমান নীতিমালায় মাধ্যমিক ও নিুমাধ্যমিক স্কুল-মাদ্রাসায় বাংলা, ইংরেজি ও সমাজের জন্য একজন শিক্ষক ছিলেন। প্রথম খসড়ায় সেটি ৩ জন করা হয়েছিল। কিন্তু চূড়ান্ত খসড়ায় ২ জন করা হয়েছে। বিজ্ঞানেও একজন করে শিক্ষক বাড়ানোর প্রস্তাব বাদ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে বিজ্ঞানের বিষয়ে ১ জন শিক্ষক নিয়োগ করা যায়। প্রথম খসড়ায় ২ জন করার প্রস্তাব ছিল।
নাম প্রকাশ না করে এক শিক্ষক নেতা বলেন, তাদের প্রস্তাব ছিল- পদার্থ, রসায়ন, জীববিদ্যা প্রত্যেক বিষয়ের জন্য একজন করে নিয়োগের। সেখানে না বাড়িয়ে কমানোর উদ্যোগ সঠিক নয়। কেননা পদার্থ-রসায়নের মতো ভৌত বিজ্ঞানের শিক্ষকের পক্ষে জীববিজ্ঞান পড়ানো সম্ভব হতে পারে। তবে তা হবে হাতুড়ে ডাক্তারের মতো।
তবে চারুকলা, কম্পিউটার শিক্ষা এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে একজন করে শিক্ষক বাড়ছে। সরকার বাধ্যতামূলক করায় এই তিনটি বিষয়ে খোলার জন্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতিও লাগবে না। এ ব্যাপারে গত সপ্তাহে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।
দেশে বর্তমানে প্রায় ১ লাখ নিবন্ধিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ৪০ হাজার প্রতিষ্ঠান মাধ্যমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের। এই ৪০ হাজারের মধ্যে ৩৮ হাজারই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের যার মধ্যে প্রায় ২৮ হাজার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীকে তাদের বেতন-ভাতা বা এমপিও দেয় সরকার। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মোট বাজেটের ৬৪ ভাগেরও বেশি অর্থ চলে যায় এ খাতে।