নিজস্ব প্রতিবেদক,২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ঃ
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় ম্যাচে লিটন দাসের আশঙ্কাই সত্যি হলো! দ্বিতীয় ম্যাচে লিটনের দারুণ এক সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের সিরিজ নিশ্চিত হয়েছিল। অমন সেঞ্চুরির দিনে লিটনের উপলব্দি ছিল, দলের কাছে তার উইকেটের মূল্য আছে, ‘ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে মারতে পারতাম। কিন্তু খুব ঝুঁকিপূর্ণ হতো সেটা। আমার উইকেট যাওয়া মানে তো দলের ওপর চাপ পড়া। বুঝতে পেরেছি আমার উইকেটের একটা মূল্য আছে।’
সত্যিই মূল্য আছে লিটনের উইকেটের! নয়তো তৃতীয় ম্যাচে লিটন আউট হতেই কেন হুড়মুড় করে ভেঙে পড়বে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ। ৮৬ রানের ইনিংস খেলা লিটন মাঠের চারদিকে দুর্দান্ত সব গ্রাউন্ডস শটে রানের চাকা বাড়াচ্ছিলেন। কিন্তু ৩৬তম ওভারের শেষ বলে লং অনে উড়িয়ে মারতে গিয়ে গুলবাদিনের তালুবন্দি হন।
লিটন আউট হতেই যেন স্বপ্ন নিভে গেলো বাংলাদেশের! আগের ম্যাচে উইকেটের মূল্য চুকাতে পারলেও তৃতীয় ম্যাচে পারেননি লিটন! দলীয় ১৫৩ রানে তার আউট হওয়ার পর বাংলাদেশ বাকি ৫ উইকেট হারায় ৩৯ রানে। ১৯২ রানের মধ্যে লিটনের একার রানই ৮৬। বাকি ব্যাটারদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য রান আসে সাকিব (৩০) ও মাহমুদউল্লাহ (২৯) ব্যাট থেকে। অধিনায়ক তামিম আগের দুই ম্যাচের মতো শেষ ম্যাচেও ফজলে হক ফারুকীর শিকার। আফগানিস্তানের বোলারদের সামনে খেই হারানো বাংলাদেশে ৪৬.৫ ওভারে ১৯২ রান করতে পারে।
ব্যাটিং উইকেটে সহজ এই লক্ষ্যে খেলতে নেমে আফগানিস্তানের দুই ওপেনার শুরু থেকে চড়াও হয়। বাংলাদেশের কোনও বোলার সফরকারী ব্যাটারদের আটকে রাখতে পারেননি। বোলারদের পাশাপাশি ফিল্ডারদের পিচ্ছিল হাতও ‘গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা’ রেখেছে আফগানদের রান উৎসবে মাততে। দলীয় ৭৯ রানে রিয়াজ আহমেদ আউট হলে উদ্বোধনী জুটি ভাঙে সফরকারীদের। এরপর রহমতউল্লাহ গুলবাজ ও রহমত শাহ মিলে ১০০ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশের কাছ থেকে ম্যাচটি ছিনিয়ে নেন। রহমত শাহ ৬৭ বলে ৪৭ রান করে আউট হন। গুরবাজ পান সেঞ্চুরির দেখা। ১১০ বলে ৭ চার ও ৪ ছক্কায় ১০৬ রানে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে কোনও আফগানিস্তান ব্যাটারের এটাই প্রথম সেঞ্চুরি।
টানা দুই ম্যাচ জেতা বাংলাদেশের সামনে সুযোগ ছিল আফগানিস্তানকে আরও একবার হারিয়ে প্রথমবারের মতো র্যাঙ্কিংয়ের ছয় নম্বরে ওঠার। কিন্তু পারেনি তামিম ইকবালের দল। উল্টো দুই ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের আগে আফগানদের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করে ছন্দ হারালো লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। অন্যদিকে ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং তিন বিভাগে দুর্দান্ত পারফর্ম করে ৫৯ বল আগে ৭ উইকেটের জয়ে স্বাগতিকদের কঠিন বার্তা দিয়ে রাখলো আফগানিস্তান!
এমনিতেই কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে দারুণ দল আফগানিস্তান। মিরপুরের দুই ম্যাচে তাই বড় চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের সামনে। টি-টোয়েন্টিতে দুই দল এখন অব্দি সাতবার মুখোমুখি হয়েছে। এরমধ্যে চারবারই জিতেছে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ জিতেছে দুটিতে। বাকি একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি পারফরম্যান্স ভীষণ হতাশাজনক। সংযুক্ত আরব আমিরাতের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হতাশাজনক পারফরম্যান্স করেছে। আইসিসির সহযোগী সদস্য স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে হেরেছে। কোনোরকমে সুপার টুয়েলভে উঠলেও ম্যাচ জিততে পারেনি মাহমুদউল্লাহর দল।
বিশ্বকাপ থেকে ফিরে পাকিস্তানের বিপক্ষেও একই পরিণতি বাংলাদেশের। মাহমুদউল্লাহদের সামনে এবার আফগানিস্তান, যারা র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে এক ধাপ ওপরে। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে কঠিন বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়া বাংলাদেশ দল ছোট সংস্করণে কেমন করে, সেটিই দেখার!