রোজ একটি ইংরেজি শব্দ শেখার উদ্যোগ থেমে গেল

Image

ডেস্ক,১০ জুন ২০২৩: দেশজুড়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিশুশিক্ষার্থীদের প্রতিদিন একটি করে শব্দ শেখানো শুরু হয়। ‘ওয়ান ডে ওয়ান ওয়ার্ড’ নামের উদ্যোগটি শুরু হয়ে দুই বছর চলে।

তখন এর ইতিবাচক প্রভাব দেখা গিয়েছিল শিক্ষার্থীদের মধ্যে। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বন্ধ হয়ে যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এরপর থেমে যায় কর্মসূচিটি।

আরো পড়ুন: একজন শিক্ষক দিয়ে চলছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

মাগুরা প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (পিটিআই) সহকারী তত্ত্বাবধায়ক আবদুল হালিম বিশ্বাস বলেন, এ কর্মসূচির ফলে শিশুরা প্রতিদিন অন্তত একটি করে শব্দ ও এর অর্থ জানত। এতে তাদের শব্দভান্ডার, উচ্চারণ ও বানানজ্ঞান সমৃদ্ধ হতো। ফলে শিশুদের পঠন দক্ষতাও বাড়ছিল। এটি একটা ভালো উদ্যোগ ছিল।

মাগুরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উদ্যোগটি নিয়েছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন। ২০১৯ সালের শুরুতে দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মসূচিটি চালু হয়েছিল।

এরও এক বছর আগে পাইলট প্রকল্প হিসেবে এটি মাগুরার চার উপজেলায় চালু করা হয়েছিল। ওই কর্মসূচির আওতায়, প্রতিদিন প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের একটি করে বাংলা ও ইংরেজি শব্দ শেখানো হতো। প্রথম শ্রেণিতে পাঠ্যবইয়ের শব্দগুলোর উচ্চারণ, বানান ও বাংলা অর্থের ওপর জোর দেওয়া হতো। দ্বিতীয় শ্রেণিতে এসে এর সঙ্গে যোগ হয় লেখার বিষয়টি। তৃতীয় শ্রেণিতে প্রতিটি শব্দ দিয়ে একটি করে বাক্য তৈরি শেখাতেন শিক্ষকেরা।

চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ের শব্দের শুদ্ধ উচ্চারণ, বানান ও বাংলা অর্থের পাশাপাশি এসব শব্দ দিয়ে দুই বা ততোধিক বাক্য তৈরি করতে হতো। সপ্তাহ শেষে নেওয়া হতো মূল্যায়ন পরীক্ষা। সপ্তাহের কোন দিন কোন ক্লাসে কোন শব্দ পড়ানো হয়, সেটার তথ্য আলাদা খাতায় লিপিবদ্ধ করতেন শিক্ষকেরা। বিষয়টি বিদ্যালয় থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে মন্ত্রণালয় পর্যন্ত তদারকি ও জবাবদিহি করা হতো।

২০২০ সালের নভেম্বরে সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যান আকরাম–আল–হোসেন। বর্তমানে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন সাবেক এই সচিব। সম্প্রতি কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি  বলেন, ‘মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে প্রাথমিকের ভিত্তি শক্ত হওয়া জরুরি। এই ভাবনা থেকে “ওয়ান ডে ওয়ান ওয়ার্ড” কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছিল। প্রাথমিকে পাঁচ বছরে ১ হাজার ১৫৫ দিন পাওয়া যায়। এ সময়ে তাদের যদি ভালোভাবে তৈরি করা যায়, তাহলে একজন শিক্ষার্থী কমপক্ষে এক হাজার শব্দের ভান্ডার নিয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে উঠবে। আমরা এটা তদারকির জন্য ওই সময়ে একেকজন সচিব বা জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের নিজ নিজ জেলায় মেন্টর হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। তবে অবসরে যাওয়ার পর এখন কর্মসূচিটির কী অবস্থা জানি না।’

সম্প্রতি মাগুরার চার উপজেলার এক ডজনের বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কর্মসূচিটি চলার সময় শিশুদের মধ্যে ইংরেজিভীতি দূর হয়েছিল। তবে করোনার পর এ কর্মসূচি নিয়ে তাঁদের কাছে নতুন কোনো নির্দেশনা আসেনি। কোনো কোনো শিক্ষক এখনো নিজের উদ্যোগে কর্মসূচিটি চালিয়ে যাচ্ছেন।

শালিখা উপজেলার আড়পাড়া সরকারি আইডিয়াল হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র বি এম তানবীন। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে সে যখন
আড়পাড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত, তখন তাদের স্কুলে ‘ওয়ান ডে ওয়ান ওয়ার্ড’ কর্মসূচি চালু ছিল। জানতে চাইলে এই শিক্ষার্থী  বলে, ‘আমাদের প্রতিদিন একটি করে শব্দের অর্থ ও সেই শব্দ দিয়ে বাক্য তৈরি করা শেখাতেন স্যাররা। যার কারণে আমাদের বাক্য তৈরি করতে সহজ হয়। রচনা লিখতে গেলে নতুন শব্দ দিয়ে বাক্য তৈরি করতে পারি। ইংরেজির ভয় কমেছে। আমার মনে হয় এটা চালু থাকা উচিত।’

মাগুরা সদর উপজেলার হাজিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার রায়  বলেন, ‘আগের মতো চলছে না কর্মসূচিটি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এখন আর এ বিষয়ে জোর দিচ্ছে না। এরপরও নিজেদের মতো করে চালাচ্ছি।’

সুত্র: প্রথম আলো

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।