সঞ্চিতা শেলি : মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার ও ডেপুটি চিফ অব মিশন তারেক মুহাম্মদ বলেছেন, বিজিবির নায়েক আব্দুর রাজ্জাককে আমরা বিনাশর্তে ফেরত পাওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু তারা এখনও রাজ্জাককে ফেরত দেওয়ার দিনক্ষণ জানায়নি। পতাকা বৈঠকেরও কোন সময় নির্ধারণ করে দেয়নি। এই কারণে তাকে কবে ফেরত পাওয়া যাবে তা বলতে পারছি না।
মঙ্গলবার বিকেলে তার সঙ্গে মিয়ানমারে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই মন্তব্য করেন।
আব্দুর রাজ্জাকের ফেরতের ব্যাপারে অগ্রগতি কতখানি হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চেষ্টা অব্যাহত আছে। হয়তো বলার মতো এখনও কোন অগ্রগতি হয়নি। কারণ আমরা আলোচনা করছি। কিন্তু তারা কখন ফেরত দিবে সেই সময় দিচ্ছে না।
আপনারা কাদের সঙ্গে কথা বলছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলছি।
তারা কি বলছেন? তার ভাষায়, তারা বলছেন, ফেরত দিবেন। আমরা পতাকা বৈঠক করার জন্য ও ফেরতের জন্য সময় চাইছি। তবে তারা কবে দিবে সেই ব্যাপারটি এড়িয়ে যাচ্ছে।
‘শুনেছি তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাজ্জাককে ফেরত দিতে চাইছে কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিতে চাইছে না’Ñ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা ওদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এখনও কথা বলিনি। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেই অনুরোধ করা হয়েছে তাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিষয়টি যত দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিনাশর্তে ফেরত নাও দিতে পারে এমন আশঙ্কার জবাবে তিনি বলেন, সেটা তারা আনঅফিসিয়ালি বলাবলি এবং নানা শর্ত দিবে এমন আভাস দিলেও আনুষ্ঠানিক ও লিখিতভাবে কোন শর্ত দেয়নি। তারা লিখিত ভাবে আমাদেরকে বলেনি যে ৫৫৫ রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে হবে। না নিলে রাজ্জাককে দিবে না।
কিন্তু বিজিবির টেকনাফের সিইওকে বিজিপির ব্যাটিলিয়ন কমান্ডার শর্ত দিয়েছেন ৫৫৫ জনকে না নিলে তাকে ফেরত দিবেন না, এই ব্যাপারে কি করবেন?
তিনি বলেন, এটা আমরা শুনেছি। কিন্তু এই জন্য তাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দিতে হবে। সেটা তারা দিচ্ছে না। আবার পতাকা বৈঠকেরও সময় দিচ্ছে না। তবে রাজ্জাক ও ৫৫৫ জনের বিষয় দুটি ভিন্ন বিষয়। এই দুটি তারা এক করে ফেলছে, যা মোটেও এটা ঠিক না।
এই পরিস্থিতিতে আপনারা কি পদক্ষেপ নিচ্ছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাবো।
রাজ্জাককে দিনের পর দিন আটকে রাখা ও এখনও ফিরিয়ে আনতে না পারায় বিভিন্ন বাহিনীতে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে কিনা, এমন আশঙ্কার জবাবে তিনি বলেন, আমরা চাইছি যে কোন সময়ে তাকে ফিরিয়ে নিতে। বিষয়টি তাদের সিদ্ধান্তের উপরই নির্ভর করছে। এটা অন্যদেরও বুঝতে হবে।
বিজিবির মহাপরিচালক বলেছেন মিয়ানমার তাকে বিনা শর্তে ফেরত দিবে, এই রকম কোন কথা হয়েছে কি?
তিনি বলেন, আসলে বিষয়টি হলো শর্ত বিজিবির সিইওকে দিতে পারেন। কিন্তু আমাদেরকে এখানে তারা শর্ত দেয়নি। আর যতক্ষণ তারা লিখিতভাবে আমাদেরকে এটা না জানাচ্ছে ততক্ষণ আমরা ধরেই নিতে পারি যে বিনাশর্তে তাকে ফেরত পাবো। আর শর্ত দিলে তখন দেখা যাবে। মুখে তারা যে কোন কথা বললেও আমরা সেটা শুনবো না কারণ শর্ত দিলে সেটা লিখিতই দিতে হবে।
৫৫৫ জনের আদৌ কোন তালিকা আপনারা পেয়েছেন? তিনি বলেন, হ্যাঁ আমাদেরকে মিয়ানমার সরকারের তরফ থেকে একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে। সেখানে ৫৫৫ জন নয় নাম রয়েছে ৫৪৬ জনের। ওই তালিকা তারা আমাদেরকে দিয়েছেন আরো ৮/১০ দিন আগে। এই ঘটনা ঘটেছে রাজ্জাককে ধরে নেওয়ার আগে। নতুন করে কোন তালিকা দেয়নি। ওই তালিকা ইতোমধ্যে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ঢাকায় এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কাজ করবে।
তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে মিয়ানমার অনেক বেশি সময় নিয়ে ফেলছে। তারা বিষয়টি চাইলেই সমাধান করতে পারে। সেটা করছে না। কোন কারণ ছাড়াই সময় ক্ষেপণ করছে। আমরা কূটনীতিক তৎপরতা চালাচ্ছি তাকে ফেরত পাঠানোর জন্য। আশা করছি সফল হবো। তবে সময়টা ঠিক বলতে পারছি না। কারণ এটা তাদের ইচ্ছের উপর নির্ভর করছে।
তিনি এটাও জানান, রাজ্জাক তাদের হেফাজতে আছেন। বলা হয়েছে ভাল ও সুস্থ আছেন।
রাজ্জাকের আপত্তিকর ছবি তোলা ও প্রকাশ করার ব্যাপারে কি করা হয়েছে জানতে চাইলে বলেন, এই ব্যাপারে জোরালো প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। তারা এই ধরনের ছবি প্রকাশ করতে পারেন না।
আপনারা কি রাজ্জাকের ব্যাপারে ঢাকাস্থ মিয়ানমার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কোন কথা বলেছেন? তিনি বলেন, আমরা তার সঙ্গে কথা বলিনি। এই ব্যাপারে তার সঙ্গে আমরা কথা বলবো না। ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই এই ব্যাপারে কথা বলবে। আমরা মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে শনিবার এই ব্যাপারে কথা বলেছি। এরপর দুই দিন পার হলেও অবস্থার উন্নতি হয়নি। তবে এখন অপেক্ষা করা ছাড়া কিছু করার নেই।