রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের যাদুকরী রহস্য

begum-rokeya-university-550x316রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ কে এম নূর-উন-নবী একাই দায়িত্ব পালন করছেন ১৫টি পদে। উপাচার্য ছাড়াও তিনি রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ, তিনটি অনুষদের ডিন, আটটি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও কয়েকটি দপ্তরের পরিচালকসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে।

একজন একাই এতগুলো পদ দখল করে নেয়ায় প্রশাসনিক ও শিক্ষা কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে জটিলতা। সমস্যা হচ্ছে এসবের পরিচালনায়। যোগ্য শিক্ষক থাকলেও দায়িত্ব পাচ্ছেন না তাঁরা। তবে উপাচার্য বলছেন, যোগ্য ব্যক্তি না থাকায় দায়িত্ব দিতে পারছেন না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সংকটের মধ্যে শিক্ষকসংকট প্রকট। শিক্ষকের সংখ্যা ১৩২ জন আর কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় পৌনে ৫০০। স্নাতকে সেশনজট না থাকলেও স্নাতকোত্তরে জট আছে প্রায় আড়াই বছরের। এ ছাড়া আছে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর দাবিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এসব জানা গেছে।

২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী প্রায় সাড়ে আট হাজার। ২১টি বিভাগে শিক্ষক আছেন ১৩২ জন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন শিক্ষাছুটিতে। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাবিউর রহমান প্রধান বলেন, শিক্ষক সংকটের কারণে একজন শিক্ষককে সপ্তাহে ১২ থেকে ১৪টি পর্যন্ত ক্লাস নিতে হয়। ক্লাস নিতে হিমশিম খাচ্ছেন শিক্ষকরা।

উপাচার্য এ কে এম নূর-উন-নবীও বলেন, একেকটি বিভাগে কমপক্ষে ১৫ জন শিক্ষক থাকা প্রয়োজন, কিন্তু আছেন কয়েকজন। তবে তিনি চেষ্টা করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সূত্র বলছে, কোষাধ্যক্ষের পদটি ২০১৩ সালের আগস্টে শূন্য হওয়ার পর উপাচার্য এই দায়িত্ব পালন করছেন। উপাচার্য বলেন, এই পদে যোগ্য একজনকে খোঁজা হচ্ছে।

গত বছরের এপ্রিল থেকে উপাচার্য আটটি বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। বিভাগগুলো হলো পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা শিক্ষা, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং লোকপ্রশাসন বিভাগ। প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা বলেন, আন্দোলনের জের ধরে গত এপ্রিলে ১৪ জন শিক্ষক প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করলে উপাচার্য পদগুলোর দায়িত্ব নেন। নিয়মানুযায়ী বিভাগীয় প্রধান হতে হলে কমপক্ষে সহকারী অধ্যাপক হতে হয়। দুজন শিক্ষক বলেন, লোকপ্রশাসন ছাড়া বাকি সাত বিভাগেই পদত্যাগী শিক্ষক ছাড়াও বিভাগীয় প্রধান হওয়ার মতো সহকারী অধ্যাপক রয়েছেন।

জীব ও ভূবিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞান অনুষদের ডিনের দায়িত্বও পালন করছেন উপাচার্য। নিয়মানুযায়ী কমপক্ষে সহযোগী অধ্যাপক ছাড়া ডিন হওয়া যায় না। সামাজিক বিজ্ঞান ও বিজ্ঞান অনুষদে অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক রয়েছেন। প্রশাসনের একটি সূত্র বলছে, শিক্ষকদের একাংশ মাঝেমধ্যে আন্দোলন করেন। প্রশাসনিক দায়িত্ব দিলে সমস্যা হতে পারে এই আশঙ্কায় দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে না।

ড.ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালকের দায়িত্বেও আছেন উপাচার্য। অভিযোগ আছে, ইনস্টিটিউটটি প্রথমবারের মতো ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে ২৩ জন গবেষক এমফিল ও পিএইচডি কোর্সে ভর্তি হলেও এখনো শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়নি। এ ছাড়া উপাচার্য হিসাব দপ্তরের পরিচালক, বহিরাঙ্গণ বিভাগের পরিচালক, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক এবং পরিবহন দপ্তরের প্রশাসকের দায়িত্বে আছেন। শূন্য থাকা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের পদও কার্যত তিনিই চালাচ্ছেন।

এসব বিষয়ে উপাচার্য এ কে এম নূর-উন-নবী বলেন, আন্দোলনের কারণে কিছু প্রশাসনিক পদ থেকে শিক্ষকরা পদত্যাগ করলে এসব পদে সরকারের সিদ্ধান্তে তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন। কিছু পদে আইনানুযায়ী যোগ্য শিক্ষক না থাকায় দায়িত্ব নিতে হয়েছে। আর কিছু পদে মেয়াদ শেষে নিয়োগ না হওয়ায় দায়িত্ব নিয়েছেন। বিভাগীয় প্রধানদের পদে শিগগিরই বিভাগের শিক্ষকদের দায়িত্ব দেওয়া হবে।

সাবেক উপাচার্যের আমলে নিয়োগ পাওয়া অতিরিক্ত ‘অদক্ষ’ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে সমস্যায় আছে বর্তমান প্রশাসন। ‘আন্দোলনের কারণে’ ওই আমলে অননুমোদিত পদে নিয়োগপ্রাপ্ত ৩৩৮ জনকে স্থায়ী নিয়োগ দিতে হয়েছে বর্তমান প্রশাসনকে। আরও ৭১ জনকে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। উপাচার্য বলেন, অনেকের যোগ্যতায় ঘাটতি থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বৃদ্ধি পাওয়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রয়োজনও রয়েছে। তিনি বলেন, তিনি উপাচার্যের দায়িত্ব নেওয়ার আগের অনিয়মের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টি খাদের কিনারে পড়েছিল, তিনি তুলে এনেছেন।

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।