ডেস্ক,৫ এপ্রিল ২০১৯:
লন্ডন: যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম রাজ্যের পার্কফিল্ড কমিউনিটি বিদ্যালয়ের অন্তত ৬০০ মুসলিম শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে সমকামিতা শেখানোর প্রতিবাদে তাদের ক্লাস বর্জন করেছে।
ক্লাস বর্জনকারী শিক্ষার্থীদের বয়স ৪ থেকে ১১ এর মধ্যে হবে এবং তাদের অবিভাবকেরা তাদেরকে নিজেদের ঘরেই উপযুক্ত শিক্ষা দিচ্ছেন, একই সাথে তারা সমকামীদের জীবন ধারার শিক্ষা দেয়ার বিরোধিতা করেন।
আর এর ফলে বিদ্যালয়টির ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থীই সেখান থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করেছে বলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে জানা গেছে।
‘The Alum Community Rock Forum’ একটি সংগঠন বার্তা সংস্থা ‘Birmingham Live’ কে জানায়, শিক্ষার্থীদের শ্রেণীকক্ষ থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে, কারণ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ‘অভিভাবকদের অধিকার ক্ষুণ্ণ করছে। একই সাথে তারা বিদ্যালয়ে আগ্রাসীভাবে সমকামিতার শিক্ষা দিচ্ছে।’
তারা আরো জানায় যে, ‘অভিভাবকদের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের আলোচনা, আবেদন, বিক্ষোভ এর সব কিছুকেই কর্তৃপক্ষ অগ্রাহ্য করেছে।’
এদিকে সম্প্রতি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন আচরণের বিরুদ্ধে এক বিক্ষোভ সভা অনুষ্ঠিত হয় যেখানে অন্তত ৩০০ অভিভাবক অংশগ্রহণ করেন।
কিছু মুসলিম বিরোধী ব্যক্তি এও বলেছেন যে, তারা প্রয়োজনে যুক্তরাজ্য ছেড়ে চলে যাক কিন্তু এরপরেও বিদ্যালয় থেকে সমকামিতার পাঠ বন্ধ করা হবে না।
বিক্ষোভে অংশ নেয়া একজন শিশুর হাতে এরকম লিখা প্ল্যাকার্ড দেখা যায় যে- ‘শিশুদের নিজেদের মত করে বেড়ে উঠতে দেয়া হোক।’
অবিভাবকেরা মূলত বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান এন্ড্রু মোফাতের উপর ক্ষেপে আছেন, কেননা তিনিই বিদ্যালয়ে সমকামিতার পাঠ দেয়ার পক্ষের প্রধান ব্যক্তি।
এর পূর্বে এন্ড্রু মোফাত অন্য একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন এবং তিনি
সেখানে সমকামীদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করে এরকম একটি পাঠদান শুরু করলে
সেখানকার খ্রিষ্টান অভিভাবকদের বিক্ষোভের কারণে তিনি চাকুরী ছেড়ে বর্তমান
কর্মস্থলে যোগদান করেন।
প্রসঙ্গত, পার্কফিল্ড কমিউনিটি বিদ্যালয়ের ৭৫০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৯৮ শতাংশই মুসলিম শিক্ষার্থী।
মারিয়াম আহমেদ নামের একজন অভিভাবক যার চার বছর বয়সী মেয়ে বিদ্যালয়টিতে অধ্যয়নরত আছে তিনি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নেয়া এই পাঠ বন্ধ করার জন্য একটি পিটিশন চালু করেন।
তিনি বলেন, ‘সেখানে যা শেখানো হচ্ছে তা সঠিক নয়। বাচ্চারা খুবই কম বয়সের। পাঠের মধ্যে অন্তত নয়টি অংশ রয়েছে কিন্তু বিদ্যালয়ে শুধুমাত্র সমকামিতার বিষয়টির উপরেই গুরত্বারোপ করা হচ্ছে যা আসলে একটি ভুল সিদ্ধান্ত।’
‘আমরা মুসলিম এজন্যই নয় বরং সেখানে খ্রিষ্টান শিক্ষার্থী রয়েছে। সমকামিতার প্রতি আমরা ক্ষুদ্ধ নই কিন্তু আমরা বিদ্যালয়ে এর পাঠ দেয়ার বিরোধী।’
বিদ্যালয়টিতে অধ্যয়নরত ছয় বছরের একজন মেয়ে শিক্ষার্থীর পিতা বলেন, তার স্ত্রী প্রয়োজনে এই দেশ ছেড়ে চলে যেতে রাজি আছে কিন্তু তার মেয়েকে সমকামিতার শিক্ষা দিতে তিনি নারাজ।
তিনি বলেন, ‘সে এধরনের পাঠে অংশ নেয়ার জন্য খুবই কম বয়সী। আমাদের কাছাকাছি বাস করা একটি পরিবার এ জন্যই ইতোমধ্যে পাকিস্তান চলে গিয়েছে।’
কিছু অভিভাবক বলেন, ইসলাম সমকামিতার অনুমোদন দেয় না। অন্যদিকে কেউ কেউ বলেন, তারা এর বিপক্ষে নন কিন্তু তারা বিদ্যালয়ে এর পাঠ দেয়ার বিপক্ষে।
এন্ড্রু মোফাত বলেন, তিনি অভিভাবকদের সাথে আলোচনা করার চেষ্টা করেছেন কিন্তু তিনি তাদের আগ্রাসী মনোভাবের কারণে পিছিয়ে এসেছেন।
তিনি বলেন, ‘এতকিছুর পরেও বিদ্যালয় থেকে আমাকে যে সমর্থন দেয়া হয়েছে তা আসলেই চমৎকার।’
বর্তমানে বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী যাদের বয়স নয় থেকে দশের মধ্যে তাদেরকে বয়ঃসন্ধি এবং বংশবৃদ্ধি সম্পর্কে ধারণা দেয়া হচ্ছে।
আর এগার বছরের শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত এবং সামাজিক সম্পর্ক, স্বাস্থ্য ও অর্থনীতি সম্পর্কিত পাঠে অংশ নেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্য সরকার বিদ্যালয় সমূহে ‘ব্যক্তিগত সম্পর্ক’ বিষয়ক পাঠ যেখানে সমকামীদের প্রতি সহমর্মিতার প্রকাশ পায় এমন ধারণা যুক্ত থাকে এধরনের পাঠ বাধ্যতামূলক করেছে।
পার্কফিল্ড কমিউনিটি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা চান শিক্ষার্থীদের মধ্যে ‘যে কাউকে গ্রহণ করার এবং স্বাগত জানানোর’ মত মনোভাব গড়ে উঠে।
এক বিবৃতিতে তারা জানায়, কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের বিক্ষোভের কারণে হতাশ কিন্তু সফল সমকামিতা শিক্ষা মূলক পাঠ বন্ধ করার কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই।