নিজস্ব প্রতিবেদক।। দেশে ভর্তির কার্যক্রম আরো স্বচ্ছ ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে বেসরকারি স্কুল, স্কুল অ্যান্ড কলেজে মাধ্যমিক, নিম্ন মাধ্যমিক ও সংযুক্ত প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিমালা প্রকাশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
পূববর্তী বছরের মতো লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী নির্বাচন ও ভর্তি প্রক্রিয়া চলবে। শিক্ষাবর্ষ হবে ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতি শ্রেণি শাখায় শিক্ষার্থী সংখ্যা হবে ৫৫ জন।
আরো পড়ুন: স্কুলে ভর্তিতে এবার বীর মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পরিবর্তন
সোমবার (২৮ অক্টোবর) মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের স্বাক্ষরিত এ নীতিমালায় বলা হয়েছে, যেসব শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে এ সংক্রান্ত বিষয়ে নীতিমালায় বলা হয়, সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের এন্ট্রি শ্রেণিতে এবং আসন শূন্য থাকা সাপেক্ষে সাধারণভাবে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করানো যাবে। নতুন শিক্ষাবর্ষ (২০২৫) ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত হবে। অন্যদিকে, প্রতি শ্রেণি শাখায় শিক্ষার্থী সংখ্যা হবে ৫৫ জন।
নীতিমালায় বলা হয়, রাজধানীর এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে ৫ হাজার টাকার অতিরিক্ত টাকা আদায় করতে পারবে না। আংশিক এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন এবং এমপিওবহির্ভূত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দেয়ার জন্য শিক্ষার্থী ভর্তির সময় মাসিক বেতন, সেশন চার্জ ও উন্নয়ন ফি-সহ বাংলা মাধ্যমে ৮ হাজার টাকা ভর্তি ফি নিতে পারবে। ইংরেজি ভার্সনে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা ভর্তি ফি গ্রহণ করা যাবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উন্নয়ন ফি বাবদ ৩ হাজার টাকার বেশি আদায় করতে পারবে না।
সেশন চার্জসহ ভর্তি ফি সর্বসাকুল্যে মফস্বল এলাকায় ৫০০ টাকা, পৌর (উপজেলা) এলাকায় ১ হাজার, পৌর (জেলা সদর) এলাকায় ২ হাজার, ঢাকা ছাড়া অন্যান্য মেট্রোপলিটন এলাকায় ৩ হাজার টাকার বেশি নেয়া যাবে না।
একই প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর এক ক্লাস থেকে পরবর্তী ক্লাসে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রতি বছর সেশন চার্জ নেয়া যাবে। তবে পুনঃভর্তির ফি নেয়া যাবে না।
নীতিমালায় আরো বলা হয়, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্ট তহবিলের জন্য ভর্তিকালীন সময়ে শিক্ষার্থী প্রতি ১০০ টাকা গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট হিসাব খাতে জমা দিতে হবে। ৭০ টাকা অবসর এবং ৩০ টাকা কল্যাণ তহবিলের সংশ্লিষ্ট হিসাব খাতে জমা দিতে হবে।
শিক্ষার্থীর বয়স নিয়ে নীতিমালায় বলা হয়, জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ অনুযায়ী ৬+ শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে। তবে শিক্ষাবর্ষের ১ জানুয়ারি তারিখে শিক্ষার্থীর সর্বনিম্ন বয়স ৫ বছর এবং ৩১ ডিসেম্বর তারিখে সর্বোচ্চ ৭ বছর পর্যন্ত হবে। (যেমন : ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিকালে কোনো শিক্ষার্থীর বয়সসীমা সর্বনিম্ন ৫ বছর হবে অর্থাৎ সর্বনিম্ন জন্ম তারিখ হবে ১ জানুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত এবং সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৭ বছর পর্যন্ত অর্থাৎ জন্মতারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত)।
পরবর্তী শ্রেণিগুলোতে বয়স নির্ধারণের বিষয়টি প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে প্রযোজ্য হবে। শিক্ষার্থীর বয়স নির্ধারণের জন্য ভর্তির আবেদন ফরমের সাথে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের বয়স নির্ধারণে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের অতিরিক্ত সুবিধা দেয়া যাবে।
ভর্তি প্রক্রিয়ার ধাপসমূহের তারিখ ও সময় নির্ধারণ, কেন্দ্রীয়ভাবে ডিজিটাল লটারি অনুষ্ঠানের তারিখ ও সময় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ নির্ধারণ করবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর কেন্দ্রীয়ভাবে ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করবে।
ঢাকা মহানগরীর স্কুলগুলোতে ভর্তির ক্ষেত্রে স্কুল সংলগ্ন ক্যাচমেন্ট এরিয়ার শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করতে হবে।
ভর্তি প্রক্রিয়ার ব্যয় নির্বাহ নিয়ে নীতিমালায় বলা হয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে ভর্তি ফি থেকে ৮৫ শতাংশ স্কুল, ১০ শতাংশ ভর্তি কমিটি, ৩ শতাংশ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর এবং ২ শতাংশ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ ভর্তি সংক্রান্ত যাবতীয় কাজে ব্যয় হবে।
ভর্তি কমিটি বিষয়ে নীতিমালায় বলা হয়েছে, বেসরকারি স্কুল, স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম যথাযথভাবে সম্পন্ন হচ্ছে কি না তা ঢাকা মহানগরী ভর্তি কমিটি, জেলা পর্যায়ে ভর্তি কমিটি, উপজেলা পর্যায়ে ভর্তি কমিটি তদারকি করবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ভর্তি নীতিমালায় বলেছে, এ নির্দেশনায় কোনোরূপ ব্যত্যয় ঘটানো হলে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে পাঠদানের অনুমতি বা একাডেমিক স্বীকৃতি বাতিলসহ প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি বাতিল করা হবে। এ নীতিমালা প্রয়োগকালীন কোনো অস্পষ্টতা বা অসুবিধা দেখা গেলে তা দূর করতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক নিষ্পত্তি করতে হবে।