মহান স্বাধীনতা দিবস আজ

এস কে দাস ॥ “অবি1427325722_1নাশী আগুনে পোড়ে হায়রে শোকার্ত স্বদেশ/ দুখিনী মায়ের অশ্রু জমা হয় নিভৃত পাঁজরে/ যে যাবে যুদ্ধে এখনি সে উঠুক উঠুক ঝলসে/যে যাবে যুদ্ধে সবকিছু ভাঙুক ভাঙুক সে..”। ….“পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত/ঘোষণার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে/নতুন নিশান উড়িয়ে/দামামা বাজিয়ে দিগি¦দিক/এই বাংলায় তোমাকে আসতেই হবে হে স্বাধীনতা।”

সত্যিই এসেছে মহার্ঘ্য স্বাধীনতা। কিন্তু বাঙালী জাতিকে এ জন্য দিতে হয়েছে চরম মূল্যে। ভয়াল ‘কালরাত্রি’র পোড়া কাঠ, লাশ আর জননীর কান্না নিয়ে রক্তে রাঙ্গা নতুন সূর্য উঠেছিল ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ। ভয়াল কালরাতের ধ্বংসস্তূপ আর লাশের ভেতরে দিয়ে রক্ত রাঙ্গা সেই নতুন সূর্য। ভীতবিহ্বল মানুষ দেখল লাশপোড়া ভোর। সারি সারি স্বজনের মৃতদেহ। আকাশে কুন্ডলী পাকিয়ে উঠছে ধোঁয়া। পুড়ছে স্বাধীন বাংলার মানচিত্র আঁকা লাল-সবুজ পতাকা। জ্বলছে শাড়ি, খুকুর ফ্রক। চোখে জল। বুকে আগুন। জ্বলে উঠল মুক্তিকামী মানুষের চোখ, গড়ল প্রতিরোধ। মৃত্যুভয় তুচ্ছ করে ‘জয় বাংলা’ তীব্র স্লোগান তুলে ট্যাঙ্কের সামনে এগিয়ে দিল সাহসী বুক।
আজ ২৬ মার্চ। বাঙালীর শৃৃঙ্খলমুক্তির দিন। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে ১৯৭১ সালের এই দিনে বিশ্বের বুকে স্বাধীন অস্তিত্ব ঘোষণা করেছিল বীর বাঙালী। দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ হিসেবে স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল এ ব-দ্বীপের মানুষ। দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিন হয় মহার্ঘ স্বাধীনতা। রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের সূচনার সেই গৌরব ও অহঙ্কারের দিন আজ। আজ থেকে ঠিক ৪৪ বছর আগের ঠিক এমনি এক ভোররাতে পাকিস্তানী হিংস্র শ্বাপদের গণহত্যার বিরুদ্ধে বাঙালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। শত্রুসেনাদের বিতাড়িত করতে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করার বঙ্গবন্ধুর ডাকে জীবনপণ সশস্ত্র লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বীর বাঙালী। ঘোরতর ওই অমানিশা ভেদ করেই দেশের আকাশে উদিত হয় স্বাধীনতার চিরভাস্বর সূর্য। বাঙালীর অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই শুরু হয়েছিল একাত্তরের আজকের এই দিনে। দীর্ঘ ন’মাস এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠতম অর্জন- মহান স্বাধীনতা।
আজ  রক্ত, অশ্রুস্নাত বিক্ষুব্ধ বিদ্রোহের দিন ২৬ মার্চ। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত মহার্ঘ স্বাধীনতার বার্ষিকী। এ ভূ-ভাগের সবচেয়ে বড় অর্জন, বাঙালীর সহস্র বছরের জীবন কাঁপানো ইতিহাস- মহান স্বাধীনতা। অসংখ্য শহীদের রক্তে ভেজা, জাতির বীরসেনানিদের রক্তস্নাত মুক্তিযুদ্ধের সূচনা দিন। বাঙালীর স্বাধীনতার ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিন। এ ভূ-ভাগের সবচেয়ে বড় অর্জন, বাঙালীর সহস্র বছরের জীবন কাঁপানো ইতিহাস- মহান স্বাধীনতা।
অত্যাচার-নিপীড়নে জর্জরিত বাঙালী জাতির সামনে আলোকময় ভবিষ্যতের দুয়ার খুলেছিল এই দিন। গৌরব ও স্বজন হারানোর বেদনার এই দিনে বীর বাঙালী সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা করেছিল। তাই আজ গৌরব ও অহঙ্কারের দিন। প্রিয় স্বাধীন মাতৃভূমিকে হিংস্র মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রগতি, কল্যাণ ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেয়ার, কষ্টার্জিত স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সংহত করার নতুন শপথে বলিয়ান হওয়ার দিন আজ। মুক্তিযুদ্ধের প্রখর চেতনায় প্রগতিবিরোধী শক্তিকে প্রতিহত করার অঙ্গীকারে প্রাণিত হবে কৃতজ্ঞ বীর বাঙালী।
এবার সত্যিই এক ভিন্ন আবহে, প্রেক্ষাপটে জাতির সামনে এসেছে স্বাধীনতা দিবস। ৪৪ বছর আগে যে পরাজিত শত্রুদের বাঙালী জাতি যুদ্ধ করে পরাজিত করেছিল, তাদেরই দোসর-কুলাঙ্গার জামায়াত-শিবির বিএনপির কাঁধে ভর করে আবারও দেশের মানুষের ওপর মরণ ছোবল দিচ্ছে। হরতাল-অবরোধের নামে এই অপশক্তিটি পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছে দেশের প্রায় দেড় শতাধিক নিরীহ-নিরপরাধ মানুষকে। দেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, প্রগতি ও কষ্টার্জিত গণতন্ত্রকে নস্যাত করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত স্বাধীনতাবিরোধী এসব শত্রু।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু যেমন বলেছিলেন- ‘বাঙালী জাতিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না।’ বীর বাঙালীকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারে না, তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। একাত্তরের পরাজিত শক্তির দোসর এবং তাদের মদদদাতা বিএনপি-জামায়াত জোটের বিরুদ্ধে একাত্তরের মতোই গর্জে উঠেছে। জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মুখে গর্তে মুখ লুকিয়েছে এই অশক্তিটি। তবে কাপুরুষের মতো পেট্রোলবোমা ছুড়ে মানুষ হত্যা অব্যাহত রেখেছে। তাই এবারের স্বাধীনতা দিবসে নতুন শপথে বলিয়ান হবে রাষ্ট্রবিরোধী গণতন্ত্রের শত্রুদের ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করে আবারও পরাজিত করার। যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় সারাদেশে হিংস্র তা-ব পরিচালনাকারী জামায়াত-শিবিরের বিষ দাঁত ভেঙ্গে দিতে একাত্তরের মতোই জেগে উঠবে দেশের নতুন প্রজন্মরা।
বিএনপির মদদে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিদের চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র রূখতে বসে নেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কোটি কোটি মানুষ। তারাও রাজপথে নেমে এসেছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ ও রায় কার্যকর করে দেশকে কলঙ্কমুক্ত করার দুর্বার দাবি নিয়ে। তাই বাঙালী জাতি নতুন উদ্দীপনায়, মুক্তিযুদ্ধের প্রখর চেতনায় প্রগতিবিরোধী শক্তি জঙ্গীবাদ, মৌলবাদ ও যুদ্ধাপরাধীদের প্রতিহত ও বিচার নিশ্চিত করার অঙ্গীকারে প্রাণিত। চারদিকে নাশকতা ও সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার দেশের মানুষ।

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।