প্রস্তাবিত অষ্টম বেতন কাঠামো সংশোধন করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মর্যাদা না বাড়ালে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠগুলো ‘অস্থির হয়ে পড়বে’ বলে শিক্ষামন্ত্রীকে হুঁশিয়ার করেছেন উপাচার্যরা।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা বুধবার সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের দাবি বাস্তবায়নে প্রয়োজনে আন্দোলনে নামারও হুমকি দিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের ‘শান্ত’ থাকার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী উপাচার্যদের বলেছেন, বিষয়টি তিনি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছেন। আর নতুন বেতন কাঠামো চূড়ান্তও হয়নি।
সপ্তম বেতন স্কেলে সচিব, সিলেকশন গ্রেডের অধ্যাপক ও মেজর জেনারেল পদের ব্যক্তিদের ‘এক নম্বর’ গ্রেডে রাখা হলেও প্রস্তাবিত বেতন স্কেলে সিলেকশন গ্রেডের অধ্যাপক ও অধ্যাপকদের বেতন আগের তুলনায় তিন থেকে চার ধাপ নেমে গেছে।
এ নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট পালন করে কমিশনের প্রস্তাব সংশোধন এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।
বেতন ও চাকরি কমিশনের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে গত ১৩ মে সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার এবং সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২৫০ টাকা মূল বেতন ধরে কাঠামো সুপারিশ করেছে সচিব কমিটি। গত ১ জুলাই থেকে নতুন বেতন স্কেল কার্যকর হবে বলা হলেও এখনও তা চূড়ান্ত হয়নি।
সভার শুরুতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আলাউদ্দিন মন্ত্রীর কাছে বেতন কাঠামো পুনর্বিবেচনার বিষয়ে তাদের যুক্তি তুলে ধরে স্মারকলিপি দেন। এরপর উপাচার্যদের মতমত শোনেন শিক্ষামন্ত্রী।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য মুহম্মদ মিজানউদ্দিন বলেন, “প্রস্তাবিত বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উত্তাল হবে। অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয় তা বিবেচনা করে আগেই ব্যবস্থা নিতে হবে।”
প্রস্তবিত অষ্টম বেতন কাঠামো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের নিয়ে ‘ষড়যন্ত্র’ কি না- এ প্রশ্ন রেখে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য এ কে এম নূর-উন-নবী বলেন, “বেতন বৈষম্য এনে শিক্ষকদের অবদমিত করা হচ্ছে, শিক্ষকদের তুচ্ছ করতে এটা করা হচ্ছে।”
প্রস্তাবিত বেতন কাঠামোতে শিক্ষকদের বেতন নিয়ে ‘চতুরতা’ করা হয়েছে বলে মনে করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফায়েকউজ্জামান।
তিনি বলেন, “এটা শিক্ষকদের নিচে নামানোর একটা প্রয়াশ। এ বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন হলে বিশ্ববিদ্যালয় উত্তাল হবে। এটা দমানো কঠিন হবে।”
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আব্দুস সাত্তার বলেন, “নিয়োগের সময়ও উপাচার্যদের কোনো সুবিধার কথা সুনির্দিষ্ট করা থাকে না। সব কিছু চেয়ে নিতে হয়, আমাদের অসম্মান করা হচ্ছে।”
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম অহিদুজ্জামান প্রশ্ন করেন, প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতন কাঠামো চাইলে বাধা কোথায়?
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলাম এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহীত উল আলম উপাচার্যদের পদমর্যাদা বাড়ানোর দাবি জানান।
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে নিজেদের আসন জটিলতায় পড়ায় বিষয়টিও মন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন তারা।
উপাচার্যরা সভায় যেসব দাবি তোলেন তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আশা প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. আলাউদ্দিন বলেন, “তাদের (আমলা) বেতন বেড়ে যাবে এটা হতে পারবে না। এটা আমরা মেনেও নেব না। পৃথিবীর কোথাও সুবিধা কমানোর ইতিহাস নেই।”
দীর্ঘক্ষণ ধরে সবার বক্তব্য শুনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “শিক্ষকদের সম্মান, মর্যাদা বৃদ্ধির বিষয়টি আমার একার ব্যাপার নয়, এটা পুরো শিক্ষা পরিবারের দাবি।”
নতুন বেতন কঠামো এখনও ‘চূড়ান্ত হয়নি’ উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, তাই রাস্তায় নেমে শিক্ষকদের ‘কষ্ট করার’ দরকার নেই।
“আমি চিঠি দিয়ে আপনাদের দাবিগুলো রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন সচিবসহ সংশ্লিষ্টদেরও ডিও লেটার দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এগুলো বিবেচনা করা হবে।
বাংলাদেশে বর্তমানে ৩৮টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।