নিজস্ব প্রতিবেদক,২৮ ফেব্রয়ারী : হঠাৎ করে কোনো গবেষেণা কিংবা শিক্ষাবিদদের পরামর্শ ছাড়াই প্রশ্নপত্র ফাঁসরোধের অজুহাতে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার (পিইসি) প্রশ্নপত্র থেকে এমসিকিউ বা বহু নির্বাচনী অংশ বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামী নভেম্বরের মাঝামাঝিতে চলতি বছরের প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সেই হিসেবে পিইসি শুরুর মাত্র ৯ মাস আগে পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কারের কথা বলছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির মাসিক সমন্বয় সভায় পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ এই সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়। ওই সভার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্নপত্র থেকে এমসিকিউ বাদ দিয়ে রচনামূলক কি কি প্রশ্ন যুক্ত করা যায় সে বিষয়েও কাজ শুরু হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের সভাপতিত্বে আয়োজিত ওই সভায় মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরসহ প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অথচ গত ১৮ ফেব্রুয়ারি চলতি বছরের জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি থেকে (নেপ) চলতি বছরের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার এমসিকিউসহ প্রশ্নপত্রের কাঠামো ও নম্বর বিভাজের রূপরেখা সারা দেশের স্কুলগুলোতে পাঠানো হয়েছে। এই আদেশ জারির মাত্র ৮ দিন পর পরীক্ষার প্রশ্নপত্র থেকে এমসিকিউ পদ্ধতিই বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়। এমন খবরে শিক্ষকসহ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিভ্রান্তিতে পড়েছেন। তারা এখনো বুঝে উঠতে পারছেন না, ৯ মাস পরে ঠিক কোন পদ্ধতিতে চলতি বছরের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার ওই সভায় বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় এমসিকিউ বা বহু নির্বাচনী প্রশ্ন তুলে দেয়া সমীচীন হবে এবং এ লক্ষ্যে জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি নির্দেশ দেন। এছাড়া প্রশ্নপত্র ছাপানোর ক্ষেত্রে বিজি প্রেসের বিকল্প আরেকটি প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের বিষয়ে তিনি গুরুত্বরোপ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, চলতি ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি বৈঠকে পাবলিক পরীক্ষা থেকে এমসিকিউ বাদ দেয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। সেই মোতাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পিইসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র থেকে এমসিকিউ অংশ বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র থেকে এমসিকিউ অংশ বাদ দেয়া হবে কিনা এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এছাড়া গত ১৯ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন সাংবাদিকের প্রশ্নফাঁস সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, পরীক্ষা শুরুর ২০ মিনিট আগে প্রশ্ন দেয়, এটা তো জানা কথা। এখন সবার হাতে ফোন, কেউ ছবি তুলে দিতে পারে। কিন্তু আমার এই প্রশ্নের উত্তরটা দেন, কেউ কি এটা দেখে উত্তর পড়ে লিখে দিতে পারবে? এত ট্যালেন্টেড কে আছে? তাহলে বলেন, টিক মার্কটা (এমসিকিউ) বন্ধ করে দেব? আপনারা লেখেন আমরা বন্ধ করে দেব। মূলত প্রধানমন্ত্রীর এই কথাকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্দেশনা হিসেবে নিয়ে প্রশ্নপত্র থেকে এমসিকিউ অংশ বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রশ্নপত্র ফাঁসরোধে এমসিকিউ অংশ তুলে দেয়ার বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা। শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. কায়কোবাদ এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করতে না পেরে এমসিকিউ পদ্ধতি উঠিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত যৌক্তিক হয়নি। সারা পৃথিবী যেখানে এমসিকিউ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয় সেখানে আমরা এটা পারছি না। কেন পারছি না? আমরা কি খারাপ জাতি? তিনি পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, এমসিকিউ বাতিলের মতো পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কারের দিকে গেলেও এটি নিয়ে কোনো গবেষণা কি করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়? তার মতে, পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কার করতে হলে অনেক চিন্তাভাবনার প্রয়োজন। একটা বিষয়ে সমস্যা হলো, আর আমরা কোনো গবেষণা না করেই বাতিল করে দিলাম- এমন অস্থিরতা দিয়ে পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কার করা যায় না। পরীক্ষা পদ্ধতি বদলাতে প্রয়োজন স্থিতিশীলতা।