ভেঙে দেওয়া হচ্ছে স্কুল-কলেজের দুর্নীতি ধরার প্রতিষ্ঠান

‌ডেস্ক,১৪ জানুয়ারী ২৩:

দেশের মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার দুর্নীতি ধরার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ) ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। এর পরিবর্তে গঠন করা হবে দুটি আলাদা সংস্থা। একটির নাম দেওয়া হবে ‘অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা অধিদপ্তর’, আরেকটি ‘প্রধান শিক্ষা পরিদর্শকের কার্যালয়’।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং সরকারের যৌথ অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্প সেসিপের (মাধ্যমিক শিক্ষা খাত বিনিয়োগ কর্মসূচি) পরামর্শে এই পদক্ষেপ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই ভাঙাভাঙির খাতে প্রায় দেড়শ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এই কাজ শেষ করার লক্ষ্যেমাত্রা নির্ধারিত আছে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ডিআইএ বর্তমানে ভয়ানক জনবল সংকটে ভুগছে। বিগত ৩৮ বছরের কখনোই অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী জনবল নিয়োগ হয়নি। ফলে সংস্থাটির পরিদর্শন এবং নিরীক্ষা এই দুটি কাজের ‘ম্যানডেট’ (আইনি এখতিয়ার) থাকলেও তা যথাযথভাবে করতে পারেনি।

অন্যদিকে প্রতিষ্ঠাকালে দেশে সাড়ে ৭ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল। বর্তমানে এর সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। কিন্তু কাঠামোতে জনবলও বাড়ানো হয়নি। সবমিলে সংস্থাটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতি ধরা বা পাহারার কাজটি কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে করতে পারেনি। বছরে গড়ে দেড় হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে থাকে প্রতিষ্ঠানটির টিম। ফলে অনিয়ম আর দুর্নীতি সেই হারে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) সাবেক মহাপরিচালক ও সেসিপের সাবেক প্রোগ্রাম পরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ গোলাম ফারুক বলেন, সেসিপের প্রস্তাব ডিআইএকে কার্যকর করা ও পুনর্গঠন করার কথা বলা আছে। এখন যদি দুই ভাগে করলে এর কর্মক্ষমতা বাড়ে, তবে সেটা করা যেতে পারে। কিন্তু ব্যয়ের দিকটি সামনে রেখে পরিকল্পনা করা দরকার। এ ক্ষেত্রে ধাপে ধাপে কার্যকরের কৌশল নেওয়া যেতে পারে।

এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিআইএ ভেঙে দুটি দপ্তর করার উদ্যোগে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, প্রথমত, দুটি দপ্তর করা হলে সরকারি ব্যয় বেড়ে যাবে। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানটির পেছনে সরকারের বছরে গড়ে ৭ কোটি টাকা ব্যয় হয়। আরেকটি দপ্তর করা হলে তা দ্বিগুণ হয়ে যাবে। ডলার সংকটের এই সময়ে এডিবি থেকে নেওয়া ঋণের টাকা অযথাই ব্যয় করা হবে। পাশাপাশি এই সংস্থা গঠন করা হলে প্রশাসনিক জটিলতাও তৈরি হবে।

পাশাপাশি শিক্ষা বিভাগ চলে যাবে আমলাদের দখলে। কেননা, এক দশক আগে মাউশি ভেঙে দুটি অধিদপ্তর করা হয়। নবসৃষ্ট অধিদপ্তরটির নাম মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। সেখানে মহাপরিচালকসহ অন্যান্য পদে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা বসানো হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরেও (ডিপিই) শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদায়ন করার কথা। সেখানেও মহাপরিচালকসহ অধিকাংশ পদ প্রশাসন ক্যাডারের দখলে। ফলে ডিআইএ ভেঙে নতুন অধিদপ্তর করা হলে তাও শিক্ষা ক্যাডারের হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

এ প্রসঙ্গে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির যুগ্ম সম্পাদক বিপুল চন্দ্র সরকার বলেন, ডিআইএ’র অবশ্যই পুনর্গঠন দরকার। কেননা, যখন সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তখনকার চেয়ে বর্তমানে কাজের আকার ৫ গুণ বেড়েছে। তাই জনবল ৫ গুণ বাড়ানোর পাশাপাশি স্বতন্ত্র ঠিকানায় বড় অফিস দরকার। পাশাপাশি ডিআইএ যেহেতু অধিদপ্তর তাই প্রধানের পদ মহাপরিচালক করে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা নামে আলাদা দুই বিভাগ সৃষ্টি করে দুজন পরিচালক নিয়োগ করা যেতে পারে। এতে শিক্ষা খাত উপকৃত হবে। তবে এরপরও মন্ত্রণালয় যেটা ভালো মনে করে সেই সিদ্ধান্ত নিতেই পারে।

সেসিপের যুগ্ম প্রোগ্রাম পরিচালক অধ্যাপক শামসুন নাহার বলেন, ডিআইএ ভেঙে দুটি অধিদপ্তর করার বিষয়টি সেসিপের প্রোগ্রাম দলিলেই আছে। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে এডিবি ৫৫ শতাংশ আর বাংলাদেশ সরকার ৪৫ শতাংশ অর্থ বিনিয়োগ করছে। সুতরাং এই কাজটি করা না হলে প্রকল্পের অর্জন শূন্য থাকবে। তিনি আরও বলেন, ডিআইএ’র পরিবর্তে দুটি অধিদপ্তর করার লক্ষ্যে পৃথক দুটি কমিটি গঠন করেছে মন্ত্রণালয়। ওই কমিটি কাজ করছে।

জানা গেছে, প্রস্তাব অনুযায়ী প্রধান শিক্ষা পরিদর্শকের কার্যালয়কে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন, একাডেমিক মান নির্ণয়ের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের র?্যাংকিংসহ অন্যান্য কাজ দেওয়া হবে। আর অভ্যন্তরীণ পরিদর্শন অধিদপ্তরকে কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আর্থিক নিরীক্ষার কাজ দেওয়া হবে। তবে বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নানাভাবে পরিদর্শন করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে প্রত্যেক শিক্ষা বোর্ডে স্কুল ও কলেজ পরিদর্শকের পদই আছে।

এ ছাড়া মাউশি, স্থানীয় প্রশাসন এমনকি সময়ে সময়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও পরিদর্শন করেন। এ ছাড়া অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ডিআইএ পরিদর্শন করে থাকে। ফলে সরকারের ব্যয় বৃদ্ধিতে এডিবির পরামর্শে নতুন কোনো অধিদপ্তর খোলা নিয়ে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা প্রশ্ন তুলেছেন।

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।